লংগদুতে আইনের তোয়াক্কা না করে পাহাড়-টিলা-গাছ কাটার হিড়িক !

প্রকাশঃ ০১ জুলাই, ২০২৪ ০৩:৪৮:৫৩ | আপডেটঃ ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১১:৪৬:০৬

সিএইচটি টুডে ডট কম, লংগদু (রাঙমাটি)। বর্ষায় ভারি বর্ষণে প্রতি বছরই ভূমি ধসের অন্যতম কারণ অবাধে পাহাড় গাছ কাটা। অথচ পার্বত্য জেলা রাঙামাটির লংগদুতে দিনদুপুরে রীতিমতো পাহাড় কাটা বৃক্ষ নিধনের মহোৎসব চলছে। পরিবেশ মন্ত্রণালয় কিংবা প্রশাসনের কোনো ছাড়পত্রেরও প্রয়োজন পড়ছে না। মূলত নানা অজুহাতে পাহাড় কাটছে একটি চক্র। তবে এর বিরুদ্ধে প্রশাসন কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পরিবেশকর্মী স্থানীয়রা।

 

লংগদুতে পরিবেশ আইন অমান্য করে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অবাধে সরকারি খাস জমির পাহাড়ি টিলা কেটে সাবাড় করছে এক শ্রেণীর অসাধু মানুষ। ফলের বাগান ঘর-বাড়ি নির্মানের অজুহাতে টিলা কেটে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করার পরও এসব দেখেও না দেখার ভান করছে প্রশাসন।

 

স্থানীয় প্রভাবশালীদের প্রত্যক্ষ ছত্রছায়ায় পরিবেশ বন আইনের তোয়াক্কা না করেই চলছে অবৈধভাবে পাহাড় কাটার মহোৎসব জানান স্থানীয়রা।

 

সরজমিনে গিয়ে জানা গেছে, উপজেলার কালাপাকুজ্জ্যা ইউনিয়নের রশিদপুর, সালামপুর, হোসেনপুর, শিবির বাজারসহ অন্যান্য ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় বিশাল টিলার মাটি কেটে সাবাড় করছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। টিলার মাটি কেটে নেওয়ার ফলে পার্শ্ববর্তী ঘর-বাড়ি, সড়ক কৃষি জমি ঝুঁকিতে রয়েছে। যেকোন সময় মাটি ধসে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।

 

আরও দেখা যায়, আলাদা স্থানে ভরদুপুরে দশ বারো জন শ্রমিক -৫টি অবৈধ এক্সকেভেটর ভেকু দিয়ে পাহাড় কেটে ওই মাটি ২টি ট্রলি বোঝাই করতে ব্যস্ত।

 

এছাড়াও ইসলামপুর এলাকার পার্শ্ববর্তী ইউপি সদস্য বাবু মিয়ার সীমানায় গিয়ে দেখা যায়, বসতভিটার পাশের উঁচু পাহাড়ের মাঝখানের মাটি কেটে সমতল করেছেন। এদিকে টিলা কাটার বিষয়টি যাতে লোকজনের নজরে না পড়ে সেজন্য গাছ-গাছালি দিয়ে এটাকে আড়াল করার চেষ্টা করছে অনেকে।

 

কালাপাকুজ্জ্যা ইউনিয়নের গুচ্ছগ্রাম শিবির বাজার এলাকা ছাড়াও আরো কয়েকটি স্থানে চলছে এই পাহাড় কাটার হিড়িক। ছোট বড় এসব পাহাড়গুলো বিরামহীন ভাবে কেটে সমতল করে ফেলাতে একদিকে যেমন জীব বৈচিত্রের উপর পড়ছে বিরূপ প্রভাব অন্যদিকে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য।

 

স্থানীয়রা বলছেন, প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে পাহাড়খেকোরা। প্রকাশ্যে দিনেদুপুরে আবার কেউ কেউ লোকচক্ষুর আড়ালে রাতের আঁধারে পাহাড়ের বুকে যন্ত্র চালাচ্ছে তারা। পাহাড় কাটার উৎসব' বন্ধ না করলে এর ক্ষতি ভোগ করতে হবে সবার।

 

পাহাড়-টিলা গাছ কাটছেন এমন কয়েকজনের মধ্যে মিরাশ উদ্দিন, জহিরুল, বাবু মেম্বার, গণি মোল্লা নুর জাহান বেগম জানান, দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছেন তারা। পরিবার বড় হওয়ার কারণে পাহাড় টিলা কেটে ঘর নির্মাণ করবেন। প্রশাসনিক কোনো অনুমতি পত্র নেই বলেও স্বীকার করেন তারা। তবে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বারেক দেওয়ানকে অবগত করেই এসব করছেন বলে জানিয়েছেন কেউ কেউ।

 

কালাপাকুজ্জ্যা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বারেক দেওয়ান বলেন, আমার ইউনিয়নের অনেকেই পাহাড়ি টিলা কাটছে তা ঠিক। আইন অনুযায়ী সরকারি খাস জমির গাছ, মাটি কাটা অপরাধ। তবে আমি কাউকে অনুমতি দেই নাই। যে আমার কথা বলেছে সে একজন পাগল! পাহাড়ি টিলা কাটার ব্যাপারে আমি পক্ষে বিপক্ষে কিছুতেই নাই।

 

৩৯০ নম্বর কালাপাকুজ্জ্যা মৌজার হেডম্যান মীর সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী জানান, কয়েকদিন ধরে মাটিখেকোরা আমার মৌজার বিভিন্ন স্থানে অবাধে বেআইনি ভাবে পাহাড় টিলা, গাছ কেটে আসছে। অথচ এই মৌজার সম্পূর্ণ জমিই খাস। আমি জানার পর তাদের নিষেধ করলে দিনে বাধ দিয়ে রাতের আঁধারে কাটা শুরু করে। পরে আমি মুঠোফোনে - বার উপজেলা প্রশাসনকে বিষয়টি অবগত করলেও এপর্যন্ত কোনো প্রতিকার পাইনি। জেলা প্রশাসক, পরিবেশ অধিদপ্তর সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি পরিবেশের বিপর্যয় রক্ষায় দ্রুত এসব বন্ধ করে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হোক।

 

উল্টাছড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তা এসএম মাহবুব-উল আলম বলেন, পাহাড়ি টিলা কাটার বিষয়টি অবগত নই। তবে আইন অনুযায়ী টিলা কাটার বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন পরিবেশ অধিদপ্তর। তবে গাছ কাটার বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম  বলেন, পাহাড়, টিলা বা গাছ কাটা সম্পর্কে আমার কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি এবং আমি অবগতও নই। তবে কেউ সরকারি খাস জমির পাহাড় টিলা কেটে থাকলে তার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

লংগদু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বাবুল দাশ বাবু বলেন, পাহাড় কাটা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। এতে পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় কতিপয় দুর্নীতিপরায়ন লোকেরা এই অনৈতিক কাজ করে যাচ্ছে। পাহাড় কাটার সাথে জড়িত যারা তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তর প্রশাসনের প্রতি আহ্বান করছি।

 

চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তর সহকারী পরিচালক রাঙামাটি জেলার দায়িত্ব থাকা আফজারুল ইসলাম বলেন, ‘পাহাড় বনজসম্পদ রক্ষায় প্রশাসনের তৎপরতা রয়েছে। সব ইউএনওকে বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও পাহাড়ে খাসজমি দখলে নেয়ার কোনো সুযোগ নেই।লংগদুর বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions