প্রকাশঃ ১৩ জুন, ২০২৪ ০৭:১৭:১৩
| আপডেটঃ ২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ০২:১৮:২৩
সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। ২০১৭ সালে রাঙামাটিতে ভয়াবহ পাহাড় ধসের পরেও ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বেড়েছে বসতি স্থাপন। যার ফলে ভারি বর্ষণ হলে এসব স্থানে পাহাড়ধসের আশঙ্কা থাকে।
গত,২০১৭ সালে ১৩ জুন রাঙামাটিতে ভয়াবহ পাহাড় ধসে ১২০ জন নিহত হয়। প্রতিবছর ভয়াল স্মৃতির দিনটি ফিরে এলেও থামেনি এখনো পাহাড়ের পাদদেশে মানুষের ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস বরং বেড়েছে আরোও নতুন করে বসতি স্থাপন। জেলা প্রশাসন ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে সাইন বোর্ড লাগিয়ে সচেতনতামূলক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করলেও নিজেদের বসতবাড়ি ছাড়তে রাজি নয় পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারী বাসিন্দারা।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়,রাঙামাটি শহরের শিমুলতলী, রুপনগর, মুসলিমপাড়া, পোস্ট অফিস কলোনি, নতুন পাড়া, লোকনাথ ব্রহ্মচারী মন্দির এলাকা, সনাতনপাড়া, পুরাতন বাসস্টেশন, যুব উন্নয়ন,মোনঘর এলাকাগুলো সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এর মধ্যে রাঙামাটি পৌরসভাসহ দশ উপজেলায় ১৫ হাজারের বেশি মানুষ ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছেন।
রুপনগর বাসিন্দা মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, ভারী বর্ষন হলে প্রশাসন সর্তক করে আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে বলে আমরা যাই। কিন্তু আশ্রয় কেন্দ্রে গেলে আমাদেরকে চিড়া মুড়ি দেয়, খাওয়ার কষ্ট দেয়। আমরা চাই সরকার আমাদের পূর্ণবাসনের ব্যবস্থা করুক। তখন আমাদের যেখানে জায়গা দেয় সেখানে যাবো। আর না হলে আমরা এখান থেকে যাবো না, প্রয়োজনে জীবন যদি দিতে হয় আমরা জীবন দিতেও রাজি।
একই এলাকার জরিনা বেগম বলেন, ২০১৭ সালের ভয়াবহ পাহাড় ধসের স্মৃতির কথা এখনো ভুলতে পারি নাই। বর্ষাকালে বৃষ্টি হলে আমাদের ডিসিরা,পুলিশে এসে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যায়।আর বৃষ্টি কমলে আমরা চলে আসি। তাছাড়া আমাদের আর যাওয়ার জায়গা নাই। কোন রকম কষ্ট করে হলেও ঝুঁকি নিয়ে এখানে থাকি। সরকার গৃহহীনদের যেভাবে জায়গায় দিয়ে ঘর করে দিচ্ছে, সেভাবে যদি আমাদেরও ঘর করে দিতো তাহলে আমরাও সেভাবে থাকতাম। এখন সরকারের কাছে আমাদের একটাই দাবি এখান থেকে যেন আমাদের অন্য জায়গায় নিয়ে আমাদের পুর্ণবাসনের ব্যবস্থা করে দেয়।
শিমুলতলীর বাসিন্দা মোঃ মোস্তফা বলেন, পাহাড়ে বসবাস করা ছাড়া আমাদের আর কোন উপায় নাই। যতই ঝুঁকি হোক না কেন আমাদের এখানে থাকতে হবে। ছোটবেলা থেকে আমাদের জন্ম এখানে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বৌ বাচ্চা নিয়ে পাহাড়ে থাকি। বৃষ্টি হলে যখন পানি চলাচল করতে পারে না তখন পাহাড়ের মাটি ধস হয় এটা আমরাও দেখি। কিন্তু কি করবো দেখার পরও আমরা নীরবে বসবাস করি। কারণ আমাদের এখান থেকে যাওয়ার আর কোন পথ নাই।
মোঃ ইসমাইল গনি বলেন, এখানে যারা বসবাস করেন তারা সবাই নিম্ন আয়ের লোকজন, তাদের ঘর ভাড়া করে থাকার সক্ষমতা নেই। তাই বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হলেও থাকতে হচ্ছে। বর্ষাকালে রাতে ঘুম আসে না। কখন বৃষ্টি হয়,কখন ঘরবাড়ি ধসের নিয়ে চিন্তায়।বেশি বৃষ্টি হলে প্রশাসনের লোকজন আসে আমাদের আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে। কিন্তু আশ্রয় কেন্দ্রে কোন নিরাপত্তা নাই, খাওয়া-দাওয়া ঠিকমতো হয় না খুব কষ্ট হয়। সরকার যদি আমাদের অন্য জায়গায় নিয়ে গিয়ে স্থায়ীভাবে পুর্ণবাসন করে তাহলে আমরা নিশ্চিন্তে ও নিরাপদে থাকতে পারবো।
সামুলা বেগম বলেন, বৃষ্টি হলে ভয় লাগে। কিন্তু যাওয়ার মতো তাদের কোন জায়গা নেই। অতি বৃষ্টিপাত হলে জেলা প্রশাসন থেকে নিকটবর্তী নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে চলে যাওয়ার জন্য বললে চলে যায়। সরকার যদি থাকার জন্য সমতল জায়গা ব্যবস্থা করে দেয় তাহলে এই ঝুকিপূর্ণ স্থানে বসবাস করববো না আমরা।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান বলেন, আমরা সবসময় যারা পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করছে তাদেরকে সরে আসতে বার বার বলতেছি। এছাড়া যে কোন দুর্যোগের মতো পরিবেশ তৈরি হলে নিয়মিত মাইকিং করে নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে আসতে বলি এবং সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য আমরা বিভিন্নভাবে তাদেরকে এই বিষয়গুলো অবহিত করার চেষ্টা করছি। তাদেরকে আমরা বার বার বুঝাচ্ছি ও সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তবে এই বিষয়ে জনসচেতনতা খুবই প্রয়োজন।
২০১৭ সালে ১৩ জুন রাঙামাটিতে ভয়াবহ পাহাড় ধসের ঘটনায় ৫ সেনাসদস্যসহ ১২০ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। ২০১৮ সালে জেলায় নানিয়ারচর উপজেলায় ১২ জুন পাহাড় ধসে মারা যান আরো ১১ জন। এরপরে ২০১৯ সালে জেলার কাপ্তাই উপজেলায় ৩ জন মারা গেছেন।