সাকিব আলম মামুন, সিএইচটি টুডে ডট কম, লংগদু (রাঙামাটি)। পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে পাহাড়ে জমে উঠেছে কোরবানি পশুর হাট। পার্বত্যাঞ্চলের সবচেয়ে পুরোনো ও বৃহৎ রাঙামাটির লংগদু উপজেলার মাইনীমূখ বাজারটি এখন জমে উঠেছে পাহাড়ি গরুর ব্যাপক বেচাকেনায়। বাজারের প্রবেশ পথেই বিশাল জায়গা জুড়ে এই হাটটি গড়ে তুলেছেন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ নিয়ন্ত্রণাধীন বাজার ফান্ড।
উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ও দূর-দূরান্ত থেকে এসব গরু হাটিয়ে বৃহত্তর মাইনী বাজার পশুর হাটে নিয়ে আসছে খামারি ও স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। কোনো ধরনের মোটাতাজা করণ ওষুধ ছাড়াই পাহাড়ি এসব গরু বন-বাদারে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠায় দেখতে বেশ হৃষ্টপুষ্ট। তাই সহজেই ক্রেতাদের মন কাড়ছে এসব গরু। এছাড়া বাজারে রয়েছে বাহামাসহ নানা প্রজাতির বিশাল দেহের বিদেশি গরুও।
শনিবার (৮ জুন) সাপ্তাহিক হাটে গিয়ে দেখা যায়, মাঝারি আকৃতির একেকটি গরু বিক্রি হচ্ছে ৮০ হাজার থেকে ১লাখ এবং বড় আকারের গরু বিক্রি হচ্ছে দেড় থেকে আড়াই লাখ টাকায়। এছাড়া বিদেশি গরুর দাম ৩-৫ লাখ টাকা হাঁকা হলেও ক্রেতাদের আগ্রহ কম। বিভিন্ন আকৃতির গরুর পাশাপাশি এই হাটে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির ছাগলও। একেকটি বড় আকারের খাসি ছাগল বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ হাজার টাকায়।
এদিকে কাপ্তাই হ্রদে পানি স্বল্পতার কারণে যাতায়াত ব্যবস্থা নাজুক থাকায় এবার চট্টগ্রাম ও ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা না আসায় বাজারে গরুর দাম ও চাহিদা কিছুটা কম। তাই খামারিদের মাঝে মিশ্র হতাশা দেখা দিয়েছে।
তবে এ বাজারের প্রতি হাটের দিন হাজারো গরু-ছাগল দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যায়। ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে এ বাজারে ক্রেতা বিক্রেতাদের চাপ বেড়েছে দ্বিগুণ। তবুও সারাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসে চাহিদানুযায়ী পাহাড়ি গরু ছাগল ক্রয় করতে পেরে খুশি ব্যবসায়ীরা।
হাট ইজারাদার শামসুল সওদাগর বলেন, গতবছরের তুলনায় এবার বাজারে পশুর সংখ্যা বেশি হলেও ব্যবসায়ী কম, তারপরও এবার ৩০-৪০ কোটি টাকার লেনদেন হবে বলে আশা করছি।
চট্টগ্রামের হাটহাজারী থেকে আসা ব্যবসায়ী হোসাইন বলেন, পুরোনো এ বাজারে পাহাড়ে পালিত এবং প্রাকৃতিক খাবার খেয়ে বেড়ে ওঠা সবল ও রোগমুক্ত গরু-ছাগল পাওয়া যায়। আগের তুলনায় দাম কিছুটা বেশি হলেও এতো বড় বাজারে নেই কোনো চাঁদাবাজি। এছাড়াও এদিকে নিজেদের চাহিদা মোতাবেক গরু-ছাগল বেচাকেনা করতে পেরে খুশি কৃষক ও খামারিরা।
মাইনীমূখ বাজার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন সোহেল জানান, পাহাড়ি জনপদের অন্যতম মাইনী বাজারের গরুর হাট দেশের সবার কাছে পরিচিত। এখানে বাহির থেকে গরু নিতে এসে ব্যবসায়ীরা কখনো ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। স্থানীয় ইজারদাররা সকলকে সহযোগিতা করছে। আশা করি ঈদের আগের বাজার গুলো আরো জমজমাট হবে।
সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি গরুর বিক্রির পূর্বেই উপজেলা প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে একজন উপ-সহকারী কর্মকর্তার মাধ্যমে পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয় নিয়মিত।
লংগদু উপজেলা উপ সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সুশীল চাকমা বলেন, এবার হাটে স্থানীয়ভাবে বেড়ে ওঠা প্রচুর গবাদিপশু সরবরাহ রয়েছে। এসব পালিত গরুতে কোন ধরনের মোটাতাজাকরণ ট্যাবলেট বা ইনজেকশন দেয়া হয়নি তাই প্রতিটি গরু স্বাস্থ্য ও মানসম্মত।
উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর নজরদারি থাকায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিও বেশ ভালো। লংগদু থানা ও উপজেলা প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত হচ্ছে পার্বত্যাঞ্চলের সর্ববৃহৎ এই পশুর হাটটি জানালেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম।
লংগদু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হারুনুর রশিদ জানান, প্রতিবছর কোরবানির মৌসুমে এখানে কোটি-কোটি টাকার পশু কেনাবেচা হয়। বাজারের সুন্দর পরিবেশ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার থাকায় হাটের পরিবেশও ভালো।
তিনি আরও বলেন, ঈদকে কেন্দ্র করে যেন অসাধু ব্যবসায়ীরা দ্রব্যমূল্যর দাম বৃদ্ধি এবং গরু ছাগল, হাস মুরগির বাজারে সিন্ডিকেট বাঁধতে না পারে সে লক্ষ্যে বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাঁচা বাজার, মাছ-মাংস সহ নিত্য পণ্যের দোকান গুলোতে লংগদু থানা পুলিশ নিয়মিত মনিটরিং করে যাচ্ছে।