প্রকাশঃ ২৯ মে, ২০২৪ ০৮:৩২:৪২
| আপডেটঃ ২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ০৬:৩৫:৫১
বিশেষ প্রতিনিধি, সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। আগামীকাল বুধবার (২৯ মে) রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আঞ্চলিক রাজনীতি ও ভৌগোলিক কারণে ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’ এই উপজেলা নির্বাচনে মোট প্রার্থী হয়েছেন আটজন। ভাইস-চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান পদে দুজন করে চারজন প্রার্থী হলেও চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন চারজন। চার প্রতিদ্বন্দ্বী চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে তিনজনই সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান; প্রত্যেকে আবার পাহাড়ের দুই আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে নানিয়ারচর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান প্রগতি চাকমা কাপ-পিরিচ, রুপম দেওয়ান দোয়াত-কলম, জ্যোতিলাল চাকমা মোটর-সাইকেল ও অমর জীবন চাকমা আনারস প্রতীকে লড়ছেন। চারজনের মধ্যে প্রগতি চাকমা পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) রাঙামাটি জেলা কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি ও ঘিলাছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, রুপম দেওয়ান জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) নানিয়ারচর উপজেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক। জ্যেতিলাল চাকমা নানিয়ারচর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও অমর জীবন চাকমা ঘিলাছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। জ্যোতিলাল ও অমর জীবন দুজনই ইউপিডিএফের রাজনৈতিক ঘরানার। একই রাজনৈতিক দল ঘরানার দুই প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ায় ভোটে ইউপিডিএফের প্রত্যক্ষ দলীয় সমর্থন নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।
নানিয়ারচর উপজেলায় এলাকাভিত্তিক রাজনৈতিক অবস্থানকে ভর করে এ নির্বাচনে ইউপিডিএফের দলীয় সমর্থন অনেকটাই ‘বড় ফ্যাক্টর’ মনে করছেন স্থানীয়রা। পাহাড়ে ইউপিডিএফ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সর্পিলাকার প্রকৃতির চেঙ্গী নদীর উপজেলা নানিয়ারচরে দলটির একচ্ছত্র অবস্থান ও নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। উপজেলায় উল্লেখ্যযোগ্য রাজনৈতিক ঘটনাবলিতেও ইউপিডিএফকে নিয়ে নানান আলোচনায় রয়েছে। অন্যদিকে, জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) সাবেক-বর্তমান দুই নেতা এই ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হলেও খোদ দলের উপজেলা কমিটির নেতাকেই সমর্থন দেয়নি জনসংহতি সমিতি। দলটির সাবেক নেতা প্রগতি চাকমাকেও সমর্থন দেওয়ার আভাস না মেলায় তবে কি ইউপিডিএফ ঘরানার কোনো প্রার্থীর ঝুলিতে পড়বে দলটির ভোট; এমন কথা ভাবাচ্ছে ভোটারদের।
কাপ-পিরিচ প্রতীকের প্রার্থী ও বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান প্রগতি চাকমা বলেন, ‘আমি জনগণের সাড়া পাচ্ছি। যদি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট হয় তাহলে জয়ের আমি আশাবাদী।’ দোয়াত-কলমের প্রতীকের প্রার্থী রূপম দেওয়ান বলেন, ‘নির্বাচনে আমি জনগণের অনেক সাড়া পাচ্ছি। যদি ভোট চুরির ঘটনা না ঘটে এবং সুষ্ঠু নির্বাচন হয় তাহলে জয়ের ব্যাপারে আমি আমি খুবই আশাবাদী।’ তবে মোটরসাইকেলের প্রতীকে প্রার্থী জ্যোতিলাল চাকমা ও আনারস প্রতীকের প্রার্থী অমরজীবন চাকমার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
স্থানীয়ভাবে অমর জীবন ও জ্যোতিলাল দুজনই প্রসিত বিকাশ খীসার নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট-ইউপিডিএফ ঘরানার হিসেবে পরিচিতি হলেও নির্বাচনে দলের অবস্থান প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইউপিডিএফ রাঙামাটি ইউনিটের সংগঠক সচল চাকমা বলেন, ‘নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আমাদের দলের নিজস্ব কোনো প্রার্থী নেই। নির্বাচনে জনগণের কাছে যার বেশি জনপ্রিয়তা রয়েছে আমরা তাকে সমর্থন জানাব। অন্যদেরকেও স্বাগত জানাব।’
অন্যদিকে, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) সাবেক-বর্তমান দুই নেতা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও দলটির রাঙামাটি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক জুপিটার চাকমা বলেন, ‘নানিয়ারচরে আমাদের সদস্য রুপম দেওয়ান ভোটে দাঁড়ালেও তাকে আমরা দলীয় সমর্থন দিইনি। প্রগতি চাকমা এখন আর আমাদের দলের সঙ্গে নেই। রূপম ছাড়া বাকি তিন প্রার্থীর মধ্যে আমরা একজনকে সমর্থন দিচ্ছি। তবে কাকে সমর্থন দিচ্ছি; সেটা কৌশলগত কারণে আপাতত জানাচ্ছি না।’
নানিয়ারচরে ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে দুজন প্রতিদ্বন্দ্বী রয়েছেন। এরমধ্যে ভাইস চেয়ারম্যান পদে সুজিত তালুকদার টিউবওয়েল ও বিনয়কৃঞ্চ চাকমা বই প্রতীকে লড়ছেন। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান কোয়ালিটি চাকমা প্রজাপতি ও অনিতা চাকমা কলস প্রতীকে লড়ছেন। তৃতীয় ধাপে অনুষ্ঠেয় রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ৩৮ হাজার ৬৮৯ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১৯ হাজার ৮৩২ জন, নারী ভোটার ১৮ হাজার ৮৫৭। ভোটকেন্দ্র ১৪টি।