প্রকাশঃ ১৩ মে, ২০২৪ ০৭:৩৭:১৫
| আপডেটঃ ২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ০১:৩৩:৫৯
সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। চলতি বছর চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে পাসের হার বাড়লেও বোর্ডের অধীন রাঙামাটি জেলায় তুলনামূলকভাবে এসএসসির পাসের হার বাড়েনি। বোর্ডভিত্তিক হিসেবে বিগত বছর চট্টগ্রাম বোর্ডে পাসের হার ছিল ৭৮ দশমিক ২৯ শতাংশ; এবার পাসের হার ৮২ দশমিক ৮০ শতাংশ। রাঙামাটিতে গতবছর ৬৭ দশমিক ৯২ শতাংশ হলেও এবার পাসের হার ৭২ দশমিক ৭২ শতাংশ। গতবারের চেয়ে এবার রাঙামাটিতে পাসের হার বাড়লেও ২০২২ সালের পর থেকে এসএসসির ফলাফলে বিপর্যয় দেখা যাচ্ছে। কমেছে জিপিএ-৫-এর সংখ্যাও। শিক্ষাবিদরা পাহাড়ে এসএসসির ফলাফল বিপর্যয়ের কারণ উদঘাটনের জন্য তাগিদা দিয়ে বলছেন, ক্রমাগত পাসের হার কমে যাওয়া মানে মাধ্যমিক শিক্ষায় পাহাড়ের শিশুরা ভালো করছে না।
মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা (মাউশি) চট্টগ্রাম বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালে পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে পাসের হার ছিল ৮০ দশমিক ৩৯ শতাংশ। ২০২৩ সালে ছিল ৬৭ দশমিক ৯২ শতাংশ। চলতি বছরের পাসের হার ৭২ দশমিক ৭২ শতাংশ। তিন বছরে এসএসসির পাসের হারে তুলনায় বিপর্যয় দেখা গেছে। তবে গত বছরের চেয়ে এবার পাসের হার বেড়েছে। সারাদেশের এবার এসএসসির পাসের হার ৮৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ এবং চট্টগ্রাম বোর্ডে পাসের হার ৮২ দশমিক ৮০ শতাংশ। সে তুলনায় রাঙামাটি জেলায় পাসের হার কম। জেলায় সাধারণ শিক্ষায় ৮৬টি বিদ্যালয়, দাখিলে ১৩টি মাদ্রাসা ও ১৫টি ভোকেশনার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। ২০২২ সালের এসএসসির ফলাফলে দেখা গেছে রাঙামাটি জেলায় ২৯২ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। চলতি বছরের ফলাফলে দেখা গেছে জেলায় ১৬৭ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। ২০২২ সালের পর থেকে জেলায় পাসের হার ও জিপিএ-৫ দুটোই কমেছে।
জানা গেছে, রাঙামাটির দশ উপজলার ৬৬টি
বিদ্যালয় থেকে ৮ হাজার ২৪৬ জন পরীক্ষার্থী অংশ গ্রহন করেছিল। এতে পাসের
হার ৭২ দশমিক ৭২ শতাংশ। বরাবরের মতো কাপ্তাই উপজলায় বাংলাদেশ নৌ বাহিনী
স্কুল এন্ড কলেজ শতভাগ পাসের শীর্ষ আসনটি ধরে রাখতে সক্ষম হলেও ৩৮ জন
শিক্ষাথী জিপিএ- ৫ পেয়ে জেলার দ্বিতীয় স্হানে রয়েছে। ৫৯ জন শিক্ষাথী
জিপিএ ৫ পেয়ে প্রথম স্হানে রয়েছে লেকার্স পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ। রাঙামাটি
সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ২৮ জন, রাঙামাটি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় ১৫
জন, কাপ্তাই বিউবো উচ্চ বিদ্যালয় হতে ১২ জন, কাপ্তাই শহীদ সামদুদ্দীন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৪ জন,কাপ্তাই উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২ জন, বেতবুনিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ২ জন, ঘাগড়া গার্লস উচ্চ বিদ্যালয়ে ১ জন,
নারানগিরি স্কুল থেকে ১ জন, শাহবহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে ১ জন, বড় মহাপরম
উচ্চবিদ্যালয় থেকে ১ জন, বাঘাইছড়ি উপজেলার শিজক উচ্চ বিদ্যালয়, উলুছড়ি উচ্চ
বিদ্যালয় ও খেদারমারা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১জন করে শিক্ষার্থী জিপিএ-৫
পেয়েছে।
এদিকে,জেলার মধ্য থেকে
রাঙামাটি শহর থেকে উপজেলার বিদ্যালয়গুলো সবচেয়ে ভালো ফলাফল করেছে। এর
মধ্য কাপ্তাই উপজলার বিদ্যালয়গুলো ভাল ফলাফল করেছে|
রাঙামাটির অতিরিক্ত জেলাপ্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) নাসরীন সুলতানা বলেন, এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভিত্তিক থাকে। যে কারণে জেলায় পাসের হার কত এবং কতজন জিপিএ-৫ পেয়েছেন বিষয়টি আমাদের জানা নেই। তবে মাদ্রাসা বোর্ডে জেলায় এবার ৬ জিপিএ-৫ পেয়েছে।’
এদিকে, রাঙামাটি সরকারি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ও সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) রাঙামাটি জেলার সভাপতি প্রফেসর বাঞ্ছিতা চাকমা বলেন, ‘পাহাড়ের শিক্ষার্থীদের ফলাফল বিপর্যয়ের পেছনে আমি প্রথমত মোবাইল আসক্তিকে দায়ী করব। এখানকার ছেলেমেয়েদের সমতলের চেয়ে মোবাইল আসক্তিটা বেশি দেখা যাচ্ছে। বিশেষত গ্রামের মানুষ ও অভিভাবকরা পড়াশোনা কম থাকার কারণে অভিভাবকদের শিক্ষার্থী ভুল বুঝিয়ে থাকেন। এছাড়া পর্যাপ্ত শিক্ষকদের অভাবে পাহাড়ের শিক্ষার্থীদের গণিত ও ইংরেজিতে দুর্বলতা বেশি লক্ষ্য করা যায়। ছোট বেলা থেকে শিক্ষা গ্রহণের উপযোগী পরিবেশের অভাবে অনেকেই এসএসসিতে এসে সেই ধাক্কা সামাল দিতে পারে না।’
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রাক্তন সদস্য ও শিক্ষাবিদ নিরূপা দেওয়ান মনে করেন, দক্ষ ও মানসম্পন্ন শিক্ষকের অভাব পাহাড়ের শিক্ষার্থীদের ফলাফলে প্রভাব ফেলছে। বিশেষত গ্রামের প্রান্তিক শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া শেখার জায়গা খুব সীমিত। সেজন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দক্ষ ও মানসম্পন্ন শিক্ষকের প্রয়োজন জরুরি মনে করেন তিনি।
রাঙামাটির জেলাপ্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান বলেন, রাঙামাটিতে এসএসসির পাসের হার কেন কমছে- এ বিষয়টি জানতে শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। কোন কোন বিষয়ে শিক্ষার্থীদের দুর্বলতা রয়েছে, পাসের কেন কমছে শিক্ষকরা ভালো জানবেন। আমরা সংকট নিরসনের জন্য শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করা করব।’