সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। তীব্র গরমে কিছুটা হলেও স্বস্তি পেতে রাঙামাটিতে আখের দোকানে ভিড় জমাচ্ছেন ক্রেতারা। অনেকে শরীরের ক্লান্তি দূর করতে আখের রস কিনে খাচ্ছেন আবার অনেকে বোতলে করে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন। গেল কয়েকদিনে সারাদেশে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় রাঙামাটিতেও এর প্রভাব পড়েছে। আর এ অতিরিক্ত গরমে রাঙামাটিতে বেড়েছে আখ রস বিক্রির হিড়িক।
রাঙামাটির কেকে রায় সড়কের মারী স্টেডিয়ামের পাশে রাস্তায় ভ্রাম্যমান দোকান বসিয়ে প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে আখ ও আখের রস।
আখের রস বিক্রেতারা বলছেন, আগের তুলনায় তীব্র গরমের কারণে দ্বিগুণ বেড়েছে আখের রস বিক্রি। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নভাবে আখের রস সংগ্রহ করায় খাওয়ার জন্য ভিড় জমায় ক্রেতারা। সকাল থেকে শুরু করে রাত নয়টা পর্যন্ত আখের রস বিক্রি করা হয়।
সরেজমিনে
ঘুরে
দেখা
গেছে,
সাগর
দেওয়ান
ও
সুমিত্র
চাকমা
দুই
বন্ধু
মিলে
৮০
হাজার
টাকা
দামের
একটি
মেশিন
কিনে
শহরের
কেকে
রায়
সড়কের
মারি
স্টেডিয়ামের
পাশে
রাস্তায়
ভ্রাম্যমান
দোকান
বসিয়ে
বিক্রি
করছেন
আখের
রস। ভ্রাম্যমান
এ
আখ
রসের
দোকানে
সকাল
থেকে
রাত
দশটা
পর্যন্ত
চলে
বেচা-বিক্রি। তীব্র গরমে এখন এ রসের দোকানে সব সময় দেখা যায় আখ রস প্রেমী ক্রেতাদের। অনেকে গ্লাসে করে খাচ্ছেন আবার অনেকে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন পরিবার স্বজনদের জন্য। ফ্রীজে রাখা ঠান্ডা এবং নরমাল একই দামে কিনে খাওয়া যায় বলে চাকরিজীবি,
ব্যবসায়ী,শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে ভিক্ষুকদেরও দেখা যায় আখের রস খেতে। রাঙামাটি জেলার সাপছড়ি,মানিকছড়ি,কুতুকছড়ি,নানিয়ারচরসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাকে করে আখ সংগ্রহ করে আখের চামড়া ফেলানো হয়। পরে আখে থাকা ময়লাগুলো পরিষ্কার করে বের করা হয় মিষ্টি আখের রস। আখের চামড়া ফেলানো এবং রস বের করতে কাজ করেন ৯জন কর্মচারী। রসের দোকান হওয়ায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে বেকার যুবকদের। একটি আখের দাম পড়ে ৪০ টাকা এবং সেই আখ বের হয় এক লিটার রস। এক লিটার আখের রস এখন বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা। প্রতি গ্লাস আখের রস বিক্রি হয় ৩০ টাকা। তীব্র গরমে আখের রস চাহিদা বাড়ায় প্রতিদিন ১০ হাজার টাকার আখের রস বিক্রি করে প্রতিমাসে ৩ লাখ টাকা গুণছেন দুই বন্ধু সাগর দেওয়ান ও সুমিত্র চাকমা।
বন্ধুদের সাথে আখের রস খেতে আসা মো. তুহিন বলেন, "সারা দেশের ন্যায় রাঙামাটিতেও অতিরিক্ত তাপমাত্রা বেড়েছে। তীব্র গরমে বাসায় থাকা যায় না। কাজে বের হয়েছিলাম। কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে স্বস্তি পেতে আখের রস খেতে আসছি। প্রতি গ্লাসে ৩০ টাকা। দামে কম মানে ভালো। পরিষ্কারভাবে আখ সংরক্ষণ করা হয়। খেতে বেশ ভালো লাগে।" তুহিনের মত একই কথা বললেন আর্য্যমিত্র চাকমা। তিনি বলেন, " ফ্রীজে আখের রস সংরক্ষণ করা হয়। ঠান্ডা এবং নরমাল খাওয়ার সুযোগ হয় বলে প্রতিদিন এক গ্লাসো হলেও আখের রস খেতে আসি। তবে এখন আখের মৌসুম না। ন্যাচারাল এ আখের রস প্রতি গ্লাসে ৩০ টাকা হওয়ায় সবাই খেতে পারে।" গতবছরও তাদের বানানো আখের রস খেয়েছি। এবার তীব্র গরম হওয়ায় স্বস্তি পেতে বন্ধুকে নিয়ে আখের রস খেতে এখানে আসছি। এসব কথা বললেন মো. রুবেল।
তিনি বলেন, “রাঙামাটিতে অতিরিক্ত তাপমাত্রা বেড়েছে। তাই এ গরমে বন্ধু মনিরকে সাথে নিয়ে আখের রস খেতে আসছি। যদিও এখন আখের সিজন নয় সে হিসেবে প্রতি গ্লাসে ৩০ টাকা হলে সব শ্রেণি মানুষের খাওয়ার সাধ্য থাকে। তাছাড়া এখন সব জিনিসের দাম বেড়েছে।”
রাঙামাটি বিএম কলেজে পড়াশোনা করেন গুলো মনি চাকমা। পড়ালেখার পাশাপাশি তিনিও কাজ করেন দুই বন্ধুর আখের দোকানে। তার কাজ হচ্ছে আখের রস বিক্রি ও রাতে শিক কাবাব বিক্রি করা। প্রতিমাসে
পারিশ্রমিক
পান
১২
হাজার
টাকা। এ প্রসঙ্গে গুলো মনি চাকমা বলেন, “কলেজে পড়াশোনার পাশি এখানে কাজ করি। মালিক ভালো বেতন দেয়। আমাদের অনেকের কর্মসংস্থান
সৃষ্টি
হয়েছে। এ বেতন থেকে কলেজের পড়াশোনার খরচ এবং বাসা ভাড়া দিতে পারতেছি। মোটামুটি আমি অনেক খুশি।"
আখের রস বিক্রেতা সাগর দেওয়ান বলেন,'তীব্র গরমে স্বস্তি পেতে সব শ্রেণির মানুষ এখন আখের রস খাচ্ছেন। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে বেচা-বিক্রি। প্রতিদিন সর্বনিম্ন ১০ হাজার টাকার অধিক আখের রস বিক্রি হয়। শ্রমিকদের বেতনসহ সব খরচ বাদ দিয়ে মোটামুটি লাভ হচ্ছে। তবে আগের তুলনায় এখন আখ সংগ্রহ খুব করা কঠিন হয়েছে। বিক্রির তুলনায় আমরা আরো আখের রস সাপ্লাই দিতে পারতেছি না । তিনি আরো বলেন,‘২০২৩ সালের দিকে অর্থ্যাৎ গতবছরে ৮০ হাজার টাকা দামের একটি মেশিন কিনে বন্ধু সুমিত্র চাকমাকে নিয়ে ভ্রাম্যমান আখ রসের দোকান বসিয়েছি। প্রথমত ৩জন কর্মচারী রেখেছিলাম। বেচা-বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় এখন ৯জন কর্মচারীকে বেতন দিয়ে রাখা হয়েছে। তবে সরকার যদি আমাদেরকে অনুদান দেয় তাহলে আমরা আরো আমাদের এ ব্যবসা বড় করে তুলতে পারবো। সেহেতু সরকারের পক্ষ থেকে আমরা সহযোহিতা কামনা করছি।”