পানি ছিটিয়ে সাংগ্রাই জলোৎসবে মেতেছে মারমা তরুণ-তরুণীরা

প্রকাশঃ ১৭ এপ্রিল, ২০২৪ ০৬:৫১:০৭ | আপডেটঃ ২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ০৭:৪৪:৪২
সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। পার্বত্য চট্টগ্রামে বর্ষবরণের বর্ণাঢ্য আয়োজনের সাঙ্গ হতে যাচ্ছে সাংগ্রাই জল উৎসবে মারমা তরুণ-তরুণীদের পানি বর্ষণের মধ্য দিয়ে। মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) দুপুরে রাঙামাটি চিং হ্লা মং চৌধুরী মারী স্টেডিয়ামে মারমা জাতিগোষ্ঠীদের সাংগ্রাই জল উৎসবে তরুণ-তরুণীরা একে-অন্যকে ‘মৈত্রী পানি বর্ষণ’ করে জলকেলি বা জল উৎসবে মেতে উঠেন। রাঙামাটির এই জল উৎসবে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন পার্বত্য জেলার সাতটি উপজেলা থেকে মারমা জনগোষ্ঠীর মানুষ অংশগ্রহণ করেছে বলে জানিয়েছে আয়োজক কমিটি।

এদিন বেলা ১২টায় সাংগ্রাই জল উৎসবের অনুষ্ঠান মঞ্চে এসে উপস্থিত হন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি। প্রধান অতিথি হিসেবে পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হওয়ার পরপরই শুরু হয় সাংগ্রাই জল উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। যদিও অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা ছিল সকাল সাড়ে ১০টায়। সাংগ্রাই জল উৎসবে গেস্ট অব অনার ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান এমপি এবং উদ্বোধক ছিলেন বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার এমপি। অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি ছিলেন- সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য জ¦রতী তঞ্চঙ্গ্যা, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ, জেলাপ্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান ও পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদ প্রমুখ। এদিন অনুষ্ঠানের শুরুতে বক্তব্য রাখেন মারমা সংস্কৃতি সংস্থার (মাসস) সাধারণ সম্পাদক মংসুইউ মারমা ও মাসস উপদেষ্টা চিংকিউ রোয়াজা।

আলোচনা সভা শেষে অতিথিরা ‘মং’ ঘন্টা বাজিয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। এরপর জল ফিতা কেটে ও পানি বর্ষণ করে জলকেলি উৎসবের উদ্বোধন করা হয়। পরে শুরু হয় মারমা নৃত্য শিল্পীদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। জলকেলি উৎসবের উদ্বোধনের পর থেকেই চলছে মৈত্রী পানি বর্ষণ। মূলত পানি বর্ষণ করে নতুন বছরকে স্বাগত জানায় পাহাড়ের এই জনগোষ্ঠীর মানুষ। পানি বর্ষণে অংশগ্রহণ করছে পাহাড়ে সাতটি উপজেলা থেকে আগত বিভিন্ন গ্রামের মারমা তরুণ-তরুণীরা। তবে মূল অনুষ্ঠান বিলম্বে শুরু হওয়ায় তাপপ্রবাহে হাঁসফাঁসে ফুসেন দর্শনার্থীরা।

পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত মারমা জাতিগোষ্ঠীর সাংগ্রাই জল উৎসবের মধ্য দিয়েই সাঙ্গ হতে যাচ্ছে পাহাড়ে বর্ষবরণ উৎসবের বর্ণাঢ্য আনুষ্ঠানিকতা। যদিও এই জল উৎসবের পরও বিভিন্ন গ্রামে মারমা পাড়ায় জল উৎসব হয়ে থাকে।

পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর বর্ষবরণের এই উৎসবকে সংক্ষেপে ‘বৈসাবি’ বলেও অভিহিত করে থাকেন অনেকে। মূলত ত্রিপুরাদের বৈসুর ‘বৈ’, মারমাদের সাংগ্রাইয়ের ‘সা’ এবং চাকমাদের বিজু, তঞ্চঙ্গ্যাদের বিষু, অহমিয়াদের বিহুর ‘বি’ আদ্যাক্ষরকে একত্রিত করে ‘বৈসাবি’ বলা হয়ে থাকে। বৈসাবি পাহাড়ের কোনো জাতিগোষ্ঠীর একক উৎসব নয়। মূলত নব্বইয়ের দশকের শুরুতে একত্রিতভাবে ‘বৈসাবি’ শব্দটির প্রচলন শুরু হয় রাজনৈতিক দলগুলোর হাত ধরেই।


সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions