হরিণ জবাই নিয়ে হুলুস্থুল কান্ড লংগদুতে

প্রকাশঃ ২৯ মার্চ, ২০২৪ ১২:৩৬:৩৮ | আপডেটঃ ২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:৩১:৫৮
সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। রাঙামাটির লংগদু উপজেলার ভাসান্যদম ইউনিয়নের ভাসান্যদম গ্রামে একটি বিলুপ্তপ্রায় সাম্বার হরিণ জবাইয়ের ঘটনায় হুলুস্থুল কান্ড ঘটেছে। ঘটনার দিন বন বিভাগ যে ব্যক্তির বাড়িতে হরিণ জবাই হয়েছে; তাকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করেছে। একই মামলায় আসামি করা হয়েছে স্থানীয় গ্রাম পুলিশসহ দুজনকে। তবে রাঙামাটি শহরে এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি উঠেছে, বন বিভাগের মামলায় যে তিন জনকে আসামি করা হয়েছে; তারা ঘটনার সঙ্গে ‘জড়িত নয়’। প্রকৃত অপরাধীরা রয়ে গেছে ধরাছোঁয়ার বাহিরে।

বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) সকালে রাঙামাটি রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে বন বিভাগের দায়ের মামলায় তিন আসামির পরিবারের লোকজন। তিন আসামির মধ্যে একজন বর্তমানে কারাগারে থাকলেও দুজন রয়েছেন ‘আত্মগোপনে’। সংবাদ সম্মেলনে মো. নাজির আলী নামে ভাসান্যদমের এক বাসিন্দা দাবি করেন, ‘৭ মার্চ ভাসান্যদম ইউনিয়নের ৫ নম্বর ভাসান্যদম গ্রামে ছাইদুল ইসলামের বাড়ির পাশের ফসলের ক্ষেতে জালে আটকে যাওয়া একটি সাম্বার হরিণ ধরে জবাই করে একই গ্রামের আব্দুল মান্নান এবং হরিণের মাংস ভাগ বাটোয়ারা করে আব্দুর রহমান, মো. আলম ও মো. শামীমসহ বেশ কয়েকজন। কিন্তু তাদেরকে বন বিভাগ মামলায় আসামি না করে যার বাড়িতে হরিণ জবাই হয়েছে সেই ছাইদুলকে আসামি করে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। মামলায় ছাইদুল ছাড়াও গ্রামপুলিশ আব্দুল আলিম এবং আজিজুল হক নামে আরও একজন আসামি করা হয়েছে।’

আসামিদের পরিবারের লোকজন দাবি করেন, প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে না দিয়ে নিরীহ লোকজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বন বিভাগ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রকৃত আসামিদের আড়াল করে পাতানো লোকজন দিয়ে বন আইনে মামলা দায়ের করেছে। তারা আসামিদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার দাবি জানান। সংবাদ সম্মেলনে আসামিদের পরিবারের সদস্য মো. নাজির আলী, ইউনুছ মিয়া, রহমত আলী, আবু রায়হান ও নুর বানু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। তবে পরিবারের লোকজন সাম্বার হরিণ জবাই কাÐে যাদেরকে অভিযুক্ত করা করেছে; তাদের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

বন বিভাগের দায়ের করা মামলার নথিতে দেখা গেছে, মো. ছাইদুল ইসলাম (৪৮), আব্দুল আলিম (৩২) ও মো. আজিজুল হককে (৪৭) আসামি করা হয়েছে। ঘটনার দিন ছাইদুলকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হলেও আব্দুল আলিম ও আজিজুলকে পলাতক বলা হয়েছে। মামলার নথিতে ১৫ কেজি হরিণের মাংস, ৯ কেজি ভূড়ি-মাথা এবং হরিণের চামড়ায় জব্দ তালিকায় দেখানো হয়েছে। এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ৭ মার্চ সকাল ৯টার দিকে তারা সাম্বার হরিণ জবাইয়ের খবর পেয়ে ঘটনাস্থল ভাসান্যদম গ্রামে যান। সেখানে গিয়ে দেখেন ছাইদুল ইসলাম বাড়ির পেছনে হরিণের মাংস ও অন্যান্য অংশ টুকরো করে পাজারের উদ্দেশে বস্তাবন্দি করছে। এসময় বন কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছালে আব্দুল আলিম ও মো. আজিজুল হক উত্তর-পশ্চিমের পাহাড়ের দিকে চলে যায়। এজাহারে উল্লেখ করা হয়, বাকি আসামিদের নাম-ঠিকানা পাওয়া গেলে তারা মামলায় সংযোজন করবেন।

আসামিদের পরিবারের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে হরিণের মাংস উদ্ধার ঘটনার নেতৃত্বে থাকা কাচালংমুখ বন শুল্ক ও পরীক্ষণ ফাঁড়ির স্টেশন কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম জানান, ‘পুরো ভাসান্যদম গ্রামটি সংরক্ষিত বনের সঙ্গে জড়িত। বিভিন্ন সময়ে যারা বন্য হাতির আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের আর্থিক সহায়তাও দেয়া হয়েছে। হরিণ ধরার বিষয়ে তারা আমাদের জানাতে পারতো এবং না জানিয়ে জবাই করে দিয়েছে। তারা আমাদের জানালে তো তারা পুরষ্কার পেত। ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলেই তাদের আসামি করা হয়েছে এবং মামলায় আমরা অন্য আসামিদের নাম-ঠিকানা পেলে সংযোজন করা হবে বলে সুযোগ রেখেছি।’

এদিকে, বন বিভাগের হরিণের মাংস উদ্ধার ও মামলা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে লংগদু থানার ওসি হারুনুর রশিদ জানিয়েছেন, তিনি এই ঘটনা প্রসঙ্গে অবগত নন। স্টেশন কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম দাবি করেন, তারা বন বিভাগের ক্ষমতাবলে আসামিকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করেছেন।


সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions