বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে অস্থিরতা কমলেও কাটেনি আতঙ্ক

প্রকাশঃ ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ০৩:০২:৫২ | আপডেটঃ ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১০:৫৩:৫২
কৌশিক দাশ, সিএইচটি টুডে ডট কম, বান্দরবান। বান্দরবানের সীমান্তবর্তী উপজেলা নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু ও ঘুমধুম সীমান্তের পরিস্থিতি গত দুইদিন ধরে স্বাভাবিক রয়েছে। এদিকে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে কয়েকদিন ধরে সামরিক বাহিনী ও বিদ্রোহীদের তীব্র লড়াইয়ের কারণে আতঙ্কে অনেকে আশ্রয় কেন্দ্র ও পাশ্ববর্তী এলাকায় চলে গেলেও তারা আবার পুনরায় নিজ নিজ এলাকায় ফিরছে। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক থাকায় অনেকে কৃষিকাজে যুক্ত হচ্ছে আর স্বাভাবিক হচ্ছে জনজীবন তবে আতংক সবার মনে।

মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে এখনো মিয়ানমারের অভ্যন্তরে কোনো গোলাগুলির আওয়াজ পাননি স্থানীয়রা, গতকাল সারাদিনও কোনো গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যায়নি।
নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের তুমব্রু-ঘুমধুমের ওপারের তুমব্রু ও ঢেকিবুনিয়া দুইটি ক্যাম্প মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠীর দখলে চলে যাওয়ায় পরে সেখানে এখন গোলাগুলি বন্ধ রয়েছে।

এদিকে ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে সারাদেশে শুরু হচ্ছে এসএসসি পরীক্ষা। তবে সেই পরীক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই সীমান্তবর্তী নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ও আশপাশের এলাকার ৫শতাধিক পরীক্ষার্থীর। কেননা, দুই সপ্তাহ ধরে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সংঘাতে গোলাগুলির জেরে, এপারে ঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে হয়েছে শত শত পরিবারকে। ফলে, ঠিকমতো প্রস্তুতিও নিতে পারেনি পরীক্ষার্থীরা। তাই ঠিকমতো প্রস্তুতি ছাড়াই মাধ্যমিক দিতে হবে সীমান্তের অনেক পরীক্ষার্থীদের।

মো.জসীম ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ের এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থী। তিনি বলেন, এখানে অনেক সমস্যা হচ্ছে। কিছুদিন এখানে থাকলে আবার অন্য কোথাও চলে যেতে হয়। এজন্য আমাদের পড়ালেখার সমস্যা হচ্ছে, সামনে আমাদের পরীক্ষা।

শুধু জসীম নয়, বান্দরবানের নাই নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম এলাকার ৫শ জন শিক্ষার্থীর একই অবস্থা। গোলাগুলির শব্দের কারণে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতির চেয়ে তাদের পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে বেশির ভাগ সময়, যার প্রভাব পড়ার আশঙ্কা পরীক্ষার খাতায়।

শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের এখানে ১৫-২০ দিন হলো গোলাগুলি হচ্ছে। সন্ধ্যার দিকে গোলাগুলির শব্দে পড়ার টেবিলে মন বসে না, এতে আমাদের অনেক সমস্যা হচ্ছে।
স্থানীয়রা বলছেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ দ্বন্ধের প্রভাব শুধু বাংলাদেশের হতাহতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরাও। ওপারের মুহুরমুহু গোলাগুলির কারণে এপার অনেকটাই হয়ে গিয়েছিল যুদ্ধক্ষেত্র। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা মানসিক বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

এদিকে সীমান্তের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের আসন্ন এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র সরিয়ে ১নম্বর উত্তর ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ২ নম্বর উত্তর ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কেন্দ্রে নেওয়ায় সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছে প্রশাসন। এর আগে সীমান্ত উত্তেজনার কারণে ২০২৩সালের এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র পরিবর্তন করতে হয়েছিল।

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, সীমান্ত পরিস্থিতি গত কয়েকদিন খুব খারাপ থাকলেও আজ দুইদিন শান্ত রয়েছে। ওপার থেকে কয়েকদিন যাবৎ কখনো গুলি আর কখনো গোলা দুটোই ছুটে আসছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আর এমন পরিস্থিতিতে আমরা স্থানীয় বাসিন্দাদের শুন্যরেখার পাশে না যাওয়া এবং সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে অপ্রয়োজনে অবস্থান করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা প্রদান করছি।

বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, এবারের এসএসসি পরীক্ষা সুষ্ঠ ও অবাধভাবে সম্পন্ন করার জন্য এবং সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের আসন্ন এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র সরিয়ে ১নম্বর উত্তর ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ২ নম্বর উত্তর ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কেন্দ্রে নেওয়ায় সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছি।  জেলা প্রশাসক আরো বলেন, সীমান্তের এমন পরিস্থিতিতে আমাদের সকলকে আরো সর্তক থাকতে হবে এবং অপ্রয়োজনে যাতে কেউ ঘরের বাইরে না যাই সেটা স্থানীয় প্রশাসনের নজর রাখার পাশাপাশি জনগণকে আরো সচেতন হতে হবে।

প্রসঙ্গত: গত কয়েকদিন যাবৎ মিয়ানমারের আরাকান আর্মি ও বিদ্রোহীদের সঙ্গে সীমান্তরক্ষী বিজিপির তুমুল  সংঘর্ষ চলছে, যার প্রভাব পড়েছে মিয়ানমার-বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলা বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘমুধুম ইউনিয়নের বিভিন্ন সীমান্তবর্তী এলাকায়। মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে ৫ ফেব্রæয়ারি এক বাংলাদেশিসহ ২জন নিহত হয় আর আহত হন বেশ কয়েকজন। এছাড়াও মিয়ানমার থেকে সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে আসা সীমান্তরক্ষীসহ বিভিন্ন বাহিনীর ৩৩০জন সদস্য বর্তমানে বাংলাদেশ আশ্রয় নিয়েছে।

সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions