রাঙামাটি শহর শাখা পিসিপির ২৫তম বার্ষিক সম্মেলন ও কাউন্সিল সম্পন্ন

প্রকাশঃ ১৯ নভেম্বর, ২০২৩ ০৩:৪৪:০৬ | আপডেটঃ ২৯ নভেম্বর, ২০২৪ ০৪:৩৯:৩৭
সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। আজ শনিবার সকালে  “পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে বৃহত্তর আন্দোলনে ছাত্র সমাজ অধিকতর সামিল হউন” শ্লোগানে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ রাঙামাটি শহর শাখার ২৫তম বার্ষিক শাখা সম্মেলন ও কাউন্সিল সম্পন্ন করা হয়েছে। রাঙামাটি জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

পিসিপি রাঙামাটি শহর শাখার আহŸায়ক কমিটির সদস্য সচিব ম্যানন চাকমার সঞ্চালনায় এবং আহŸায়ক ম্যাগলিন চাকমার সভাপতিত্বে উক্ত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহ ছাত্র বিষয়ক সম্পাদকী জুয়েল চাকমা, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতি রাঙামাটি জেলা কমিটির সভাপতি অমিতাভ তঞ্চঙ্গ্যা, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ছাত্রনেতা নিপন ত্রিপুরা, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ রাঙামাটি জেলা শাখার সভাপতি ছাত্রনেতা জিকো চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশন রাঙামাটি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সোনারিতা চাকমা প্রমুখ।

সম্মেলনের শুরুতে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আত্মবলিদানকারী সকল বীর শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। নিরবতা পালন শেষে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ রাঙামাটি শহর শাখার সদস্য সুরেশ চাকমা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জুয়েল চাকমা বলেন, আমরা ইতিহাসের পাতায় চোখ রাখলে দেখতে পাই প্রত্যেকটা জাতির প্রত্যেকটা রাষ্ট্রের অধিকার আদায়ের যে লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস তার পেছনে ছিল তরুণ ছাত্রসমাজের অংশগ্রহণ। ব্রিটিশ শাসনানল থেকে শুরু করে এই ভুমিতে দেশ, জাতি ও সমাজ গঠনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এই ছাত্র ও যুবসমাজ। আমরা দেখি ১৯৫৪ সালে গড়ে ওঠা পাহাড়ি ছাত্র সমিতি ১৯৬০ সালের কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিল। তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৬ টি বছর অতিক্রান্ত হতে চললেও চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো নিয়ে সরকার এখনো সমাধান দিতে পারেনি। চুক্তির এত পার্সেন্ট, এতটি ধারা বাস্তবায়িত হয়েছে এরূপ হওয়ার কথা ছিল না। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের তরুণ ছাত্রসমাজকে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে বৃহত্তর আন্দোলনে সামিল হওয়ার আহŸান জানান।



বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অমিতাভ তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, ১৯৯৭ সালে স্বাক্ষরিত পার্বত্য চুক্তির আগে পার্বত্য চট্টগ্রামে যে অবস্থা ছিল চুক্তির পরবর্তী সময়ে এসেও সেই একই অবস্থা বিরাজমান রয়ে গেছে। আমরা আশা করেছিলাম চুক্তির পরে আমাদের যে মৌলিক অধিকার সেই অধিকার ফিরে পাবো, কিন্তু তা দেখা যায় না।

বিশেষ অতিথির বক্ত্যব্যে পিসিপির কেন্দ্রীয় সভাপতি নিপন ত্রিপুরা বলেন, আমরা রাজনীতি কেন করবো, কেন আমাদের রাজনীতি করা প্রয়োজন; আমি বলবো রাজনীতি আমাদের সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করছে। আমরা রাজনীতি করছি স্বাধীকার অর্জন, নিজেদের উন্নয়ন নিজেদের নিরূপণ করার লক্ষ্যে। রাষ্ট্রের শোষণের যে নীতিমালা সেটি আমাদের বুঝতে হবে। পিসিপি'র লক্ষ্য-উদ্দেশ্য জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করা। কর্মীবাহিনীকে তা ছাত্র সমাজের কাছে পৌঁছে দিতে হবে।

বিশেষ অতিথি সভাপতি জিকো চাকমা বলেন, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ একটি সংগ্রামের নাম, প্রেরণার নাম। ১৯৮৯ সালে ৪ঠা মে লংগদুতে সংঘটিত গণহত্যাটি পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসে একটি জঘন্যতম ঘটনা। সেই গণহত্যার প্রতিবাদ করতে গিয়ে পিসিপি'র জন্ম। দীর্ঘ ৩৫ বছর লড়াই সংগ্রামে অনেক পিসিপি কর্মীর জীবন দিতে হয়েছিল। ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির মধ্য দিয়ে হারানো দিনগুলো স্মরণ করতে হবে।  সেই চুক্তিতে উপনিত হতে জুম্ম জনগণের সেই নিদারুণ ইতিহাস তা আমাদের জানতে হবে। আমরা আশা করেছিলাম চুক্তি পরবর্তীতে এখানকার যেসকল সমস্যা সেসব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। কিন্তু চুক্তির ২৬ টি বছর অতিক্রান্ত হতে চললেও সেই আশা প্রত্যাশা আজ ব্যাহত হয়েছে। সেই চুক্তি বাস্তবায়নে তরুণ ছাত্র সমাজকে বৃহত্তর আন্দোলনে সামিল হতে হবে এবং যারা চুক্তিবিরোধী, যারা চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনে বাঁধা দেবে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

আলোচনা সভা শেষে ম্যাগলিন চাকমাকে সভাপতি, সুরেশ চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক এবং সনেট চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত করে ১৯ জন সদস্যবিশিষ্ট পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ রাঙামাটি শহর শাখার কমিটি গঠন করা হয়। নবগঠিত কমিটিকে শপথবাক্য পাঠ করান পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি মিলন কুসুম তঞ্চঙ্গ্যা।

সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions