প্রকাশঃ ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০২:৩৪:২০
| আপডেটঃ ৩০ নভেম্বর, ২০২৪ ০৬:৪৯:৫৫
সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) রাঙামাটি জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. জাহিদ কালামের বিরুদ্ধে চরম হয়রানি, অসৌজন্যমূলক আচরণ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলা হয়েছে। ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার দুপুরে রাঙামাটি রিপোর্টার্স ইউনিটির সম্মেলন কক্ষে আহূত এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেছেন দয়াল কুমার চাকমা নামে রাঙামাটির এক ভুক্তভোগী।
ভুক্তভোগী দয়াল সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, সমাজে অন্যায়, অবিচার, বৈষম্য, দুর্নীতি ও অপরাধ দমনে আপনাদের কলমের শক্তি অপরিসীম। আমি একজন সাধারণ মানুষ। আমার সঙ্গে হওয়া অন্যায়, চরম হয়রানি, অসৌজন্যমুলক অভদ্র আচরণ ও মানবাধিকারের লংঘনের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে গণমাধ্যমে তুলে ধরবেন- এটাই আমার দৃঢ় বিশ^াস।
ঘটনার বিবরণ তুলে ধরে ক্ষোভ ও বিস্ময় প্রকাশ করে তিনি বলেন, গত ২৮ আগস্ট দুদক রাঙামাটি সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. জাহিদ কালামের নিকট তার নিজ কার্যালয়ে গিয়ে আমি অসৌজন্যমুলক আচরণ, হুমকি ও ভীতি প্রদর্শনের শিকার হই। ওই সময় তিনি আমাকে অত্যন্ত জঘন্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। চরম হয়রানি ও মানবাধিকার পরিপন্ধিমূলক আচরণ করেছেন। আমার সঙ্গীয় অপর দুজনকে তার অফিস কক্ষ থেকে অসম্মানিত ও অপমানিত করে বের করে দেন। যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। আমার জীবনে সরকারি বিভিন্ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে। কিন্তু দুদকের এ কর্মকর্তার অফিস কক্ষে যেভাবে অপমানিত, অসম্মানিত ও নিগৃহীত হতে হয়েছে তা বর্ণনাতীত।
অভিযোগকারী দয়াল বলেন, ২০২০ সালে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য, প্রকৌশলী ও ঠিকাদারদের ২৪টি অস্তিত্বহীন ভুয়া প্রকল্পের বিপরীতে ২ কোটি ৪৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা সরকারি অর্থ আত্মসাতের বিরুদ্ধে আমি দুর্নীতি দমন কমিশন চেয়ারম্যান বরাবর অভিযোগ করেছিলাম। সেই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে চলতি সালের ৮ জুন এ পার্বত্য জেলা পরিষদের উপ-সহকারী প্রকৌশলী রিগ্যান চাকমা, সহকারী প্রকৌশলী জ্যোর্তিময় চাকমা, নির্বাহী প্রকৌশলী বিরল বড়ুয়া, সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী আবদুস সামাদ, পরিষদ সদস্য সবির কুমার চাকমা, ঠিকাদার অমলেন্দু চাকমা, ঠিকাদার চিংহেন রাখাইন, ঠিকাদার মিলন তালুকদার ও ৪নং ভুষণছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মামুনুর রশীদ মামুন- এই ৯ জনের বিরুদ্ধে দন্ডবিধির ৪০৯/১০৯ তৎসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয় রাঙামাটির সহকারী পরিচালক আহামদ ফরহাদ হোসেন বাদী হয়ে ৪টি মামলা দায়ের করেন।
দয়ের করা এসব মামলা ও সরকারি বরাদ্দের উন্নয়ন প্রকল্পের কার্যক্রম সম্পর্কে অনুসন্ধান ও তদন্তের জন্য ওই দিন একটি আবেদনপত্র নিয়ে সঙ্গীসহ দুদকের রাঙামাটি সমন্বিত কার্যালয়ের উপপরিচালক জাহিদ কালামের সঙ্গে দেখা করতে যাই। এ সময় আমাদের তিন জনকে একসঙ্গে তার অফিস কক্ষে ঢুকতে দেখেই উচ্চস্বরে তিনি (জাহিদ কালাম) বলে ওঠেন- এখানে এতজন কেন? এখনই বের হয়ে যান। আমাকে উদ্দেশ করে শুধু একজনকে থাকতে বলেন। ঘটনার আকস্মিকতায় আমরা তিন জনই হতবাক হয়ে যাই।
দয়াল বলেন, ওই সময় আমার সঙ্গীয় অপর দুজন বের হয়ে গেলে ওই দুদক কর্মকর্তা আমাকে নানাভাবে জেরা করেন, যাতে মনে হয়েছে আমি অপরাধী। আমি কেন আবেদন দিচ্ছি, কেন দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ দেই ইত্যাদি বিভিন্ন অমুলক ও অহেতুক কথা বলতে থাকেন। আমার দেওয়া আবেদন নিতেও অস্বীকৃতি জানান তিনি। এক পর্যায়ে আমাকেও অফিস থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। এরপরও আবেদনের রিসিভ কপির জন্য সকাল ১০টা থেকে বিকাল পৌণে ৪টা পর্যন্ত আমাকে অপেক্ষা করতে হয়েছে। আমি দুর্নীতির বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছি, তাই শত কষ্ট, অপমান ও অসম্মানিত হলেও সেখানে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেছিলাম। এতটা দীর্ঘ সময় ধরে অনাহারে ক্ষুধার্ত অবস্থায় সেখানে বসিয়ে রাখা এবং একজন সেবা প্রার্থী হয়ে আমাকে এভাবে হুমকি-ধমকি, ভীয়ভীতি প্রদর্শন, গালিগালাজসহ নানা ধরনের হয়রানি করা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন বলে আমি মনে করি। আমি এর তীব্র প্রতিবাদসহ সুষ্ঠু বিচার চাই। এ বিষয়ে আমি ইতোমধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান বরাবর একটি আবেদনপত্র পাঠিয়েছি।
এদিকে অভিযোগ সম্পূর্ণ অমূলক ও ভিত্তিহীন দাবি করে দুদক রাঙামাটি জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. জাহিদ কালাম বলেন, দয়ালের অভিযোগ অসত্য। আমি তার সঙ্গে কোনো রকম খারাপ আচরণ করিনি।