বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে পাহাড়ে ৭১ হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত

প্রকাশঃ ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০৬:৫৬:২৬ | আপডেটঃ ৩০ নভেম্বর, ২০২৪ ০৬:৫৩:৩১
বিশেষ প্রতিনিধি, সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি এবং বান্দরবান- এই তিন পার্বত্য জেলায় গত আগস্টের বন্যায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে ৭১ হাজারের অধিক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আর্থিক হিসাবে এই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৮৩ কোটি ৮ লাখ টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জেলাভিত্তিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ চূড়ান্ত নিরুপন করে খামার বাড়িতে প্রতিবেদন পাঠিয়েছিল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) রাঙামাটি অঞ্চল। কৃষি মন্ত্রণালয় তড়িৎভাবে কৃষকদের পাশেও দাঁড়িয়েছে প্রণোদনা কার্যক্রমের আওতায়। তবে প্রণোদনার বরাদ্দ খুবই অপ্রতুল। তিন পার্বত্য জেলার ৭১ হাজার কৃষকের ফসলি জমি তলিয়ে নানা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও প্রণোদনার ৫ কেজি করে চাল বরাদ্দ পেয়েছেন মাত্র ৩ হাজার কৃষক। ইতোমধ্যে তালিকা অনুযায়ী উপজেলা পর্যায়ে কৃষকদের মাঝে প্রণোদনার ধান শতভাগ বীজ বিতরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ডিএই।

যদিও কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তুলনায় প্রণোদনার ধান বিতরণ কার্যক্রমের আওতায় সকল কৃষকদের আনা যায়নি।

অপ্রতুল বরাদ্দের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত সকল কৃষক প্রণোদনা কার্যক্রম থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। তবে ৭১ হাজার কৃষকের মধ্যে জুম চাষি, ফল, সবজি বাগান ও ধান চাষী থাকলেও আপাতত আমন ধান আবাদ উপযোগি এলাকার কৃষকদের প্রণোদনার আওতায় আনা হয়েছে। রবি মৌসুমে অন্যান্য কৃষকদেরও ধান, সবজিসহ অন্যান্য ফসল বীজ বিতরণ করা হবে। আপাতত কৃষকদের মানসিকভাবে উৎসাহ ও কিছুটা ক্ষতি পোষাতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে প্রথম ধাপে বিতরণকৃত প্রণোদনা। বিশেষত রোপা আমন ধানে পানি প্রয়োজনীয়তা থাকার কারণে অনেক এলাকা বর্তমানে আমন আবাদে উপযোগী না হওয়ায় এলাকা চিহ্নিত করে বীজ বিতরণ করা হয়েছে বলছেন কৃষি কর্মকর্তারা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) রাঙামাটি অঞ্চল কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে তিন পার্বত্য জেলায় ১ লাখ ১৩ হাজার ৫১ হেক্টর কৃষি জমিতে আউশ ধান, রোপা আমন ধান, গ্রীষ্মকালীন সবজি, আদা, হলুদ, কলা, পেঁপেসহ অন্যান্য ফসলের চাষাবাদ হয়েছে। এরমধ্যে বন্যায় ও পাহাড়ি ঢলে তিন পার্বত্য জেলার ১৫ হাজার ৮২৭ হেক্টর জমির ফসল আক্রান্ত হয়েছে। সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১২ হাজার ৭৭৭ হেক্টর জমির ফসল। আবাদ হিসাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১১ দশমিক ৩০ শতাংশ জমির ফসল। আর্থিক হিসাবে তিন জেলার ৭১ হাজার ২৫০ জন কৃষক ৩৮৩ কোটি ৮ লাখ টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।

ডিএই’র আমন ধান বীজ বিতরণ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, তিন পার্বত্য জেলায় মোট ১৫ মেট্রিক টন বিআর ২৩ জাতের আমন ধান বীজ বিতরণ করা হয়েছে। প্রত্যেক কৃষককে ৫ কেজি করে বীজ দেয়া হয়েছে। সে হিসাবে ১৫ মেট্রিক টন ধান বীজ পেয়েছেন মাত্র ৩ হাজার কৃষক। এরমধ্যে ৫ মেট্রিক টন ধান বীজ পেলেন রাঙামাটির ১ হাজার কৃষক, ৩ মেট্রিক টন ধান বীজ পেলেন খাগড়াছড়ির ৬০০ কৃষক এবং ৭ মেট্রিক টন ধান বীজ পেলেন বান্দরবানের ১ হাজার ৪০০ কৃষক। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা ও প্রণোদনার ৫ কেজি হারে ধানপ্রাপ্ত কৃষকের সংখ্যা তুলনা করে দেখা গিয়েছে রাঙামাটির ১২ হাজার ১৬০ জন কৃষকের মধ্যে প্রণোদনার আওতায় এসেছেন ১ হাজার কৃষক, বান্দরবানের ৫৬ হাজার ২৫০ কৃষকের মধ্যে প্রণোদনা পেলেন ১ হাজার ৪০০ কৃষক এবং খাগড়াছড়ির ২ হাজার ৮৪০ কৃষকের মধ্যে প্রণোদনা পেয়েছেন ৬০০ কৃষক।

রাঙামাটির বাঘাইছড়ির উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শাহীন ইসলাম বলেন, ‘আউশ, আমন ও অন্যান্য রবিশস্য মিলিয়ে বাঘাইছড়ির উপজেলার ১০ হাজার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা করে খামারবাড়িতে পাঠানো হয়েছে। আপাতত বরাদ্দ পাওয়া ১৫ শ’ কেজি বিআর ২৩ আমন ধান বীজ ৩০০ কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। আমন ধানের জন্য সব সময় পানির প্রয়োজন থাকায় যে সব এলাকায় পানি থাকবে সেসব এলাকার কৃষকদের মাঝেই আমন বীজ বিতরণ করা হয়েছে।’ অপ্রতুল বরাদ্দের বিষয়টি স্বীকার করে এই কৃষি কর্মকর্তা বলেন, ‘অপ্রতুল বরাদ্দ হয়েছে এটি সত্য। তবে আমরা আশাবাদী সামনের রবি মৌসুমে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য বড় বরাদ্দ আসবে। এখন যে ধান বীজটি বিতরণ করা হয়েছে সেটি ১২০ দিনের মধ্যেই ফলন আসবে। এটি কিছুটা ক্ষতি পোষাতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) রাঙামাটি অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক তপন কুমার পাল বলেন, ‘তিন পার্বত্য জেলার ৭১ হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন; কিন্তু এরমধ্যে ধান চাষী, জুম চাষী, ফল ও সবজি চাষীরাও রয়েছেন। আপাতত আমন ধান আবাদ উপযোগী এলাকার কৃষকদের জন্য ১৫ মেট্রিকটন ধান বীজ প্রণোদনা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আসন্ন রবি মৌসুমে অক্টোবর মাসের দিকে আবারো ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে ধান, ফল, সবজিসহ অন্যান্য বীজ প্রণোদনা দেয়া হবে। আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে ধাপে ধাপে সকল কৃষককে প্রণোদনা কার্যক্রমের আওতায় নিয়ে আসা।’

সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions