আজ সত্যিই মনে হচ্ছে খ্যাতিমান সাংবাদিক পলাশ বড়ুয়া’র কাছে সততাও হার মেনেছে। একটি প্রভাবশালী পত্রিকার জাঁদরেল প্রতিবেদক হবার পরও নিতান্তই অভাবের জীবনটি ও আড়াল রাখতো সবার কাছ থেকে নিজের দুর্বলতা-অসঙ্গতি প্রকাশে কোনদিন তাঁকে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতে দেখিনি। নিজের বাড়িভিটে বিক্রি করেছে এই তো ক’বছর আগে। বাবার চিকিৎসা-মায়ের চিকিৎসার জন্যও কখনো কারো কাছে মাথা নত না করা এই মানুষটি রোগ পুষেছেন। কিন্তু সবার সাথে হাসিমুখে সময় পার করেই। যেখানে আমাদের কতো কতো সাংবাদিক বন্ধু কতো কিছিমের উছিলায়...সম্পদ-জমি-গাড়ি- বাড়ি করেই চলেছেন। এই স্রোতে ভিন্ন এক ব্যতিক্রমী মানুষ পাহাড়ের মফস্বল সাংবাদিকতার কিংবদন্তী এক তরুণ পলাশ বড়ুয়া।
সুস্থ সবল-স্বচ্ছল এবং পর্যাপ্ত বেতনে সাংবাদিকতা করার পরও কতো জায়গায় অহেতুক ধর্ণা দেন-দিয়েছেন এবং এখনো দিচ্ছেন। অথচ এই পলাশ বড়ুয়াকে আমি টানা তিনবছর অনুরোধ করেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান ‘বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট’-এ আবেদন করাতে পারিনি। শেষ দুই বছর ধরে আমি তাঁকে ইচ্ছে করেই এড়িয়ে চলতাম। যে মানুষ এই আমি বিগত দুই দশক ধরে সপ্তাহে কমপক্ষে একরাত যাঁর বাসায় কাটাতাম; সেই মানুষ তাঁর সঙ্গ ছেড়ে দিয়েছি। ফোন দিলেও কথা বলতাম কম। আমার আক্ষেপ একটাই, সবাই সব জায়গা থেকে যেভাবে পারছে সাংবাদিকতার নামে হাতিয়ে নিচ্ছে; তাহলে তুমি সৎ-নিয়ত-নিবেদিত সাংবাদিকতা করেও কেনো নেবে না? তাঁর একটাই উত্তর বাবা ভিটে যেহেতু বিক্রি করে বেঁচে আছি... নিশ্চয়ই সামনের সময়গুলোও ভালো কেটে যাবে। আমার প্রতি মানুষের দয়া এবং দোয়া অটুট আছে। আমার বন্ধু পলাশের অভাবের জয় হোক। সৎ সাংবাদিকতার জয় হোক। তাঁর জন্য আজ আমার সকল ভালো কাজের ফল ঈশ্বর তাঁকে দিয়ে দিক।
বন্ধু তোমার গান শোনা হতো... এমন রাতে...। প্রতিদিন দিনে-সকালে- রাতে তাঁর (পলাশ);র কাব্যিক অন্ত্যমিলের ছড়া কখানো কবিতা ভীষন প্রেরণা যোগাতো। দেশে-বিদেশে তাঁর যে ভীষন একটা সুনাম গড়ে উঠেছে; তার বড়ো প্রমাণ দীঘিনালা হোসনে আরা মঞ্জুর বিদ্যা নিকেত- নয়মাইল ত্রিপুরাপাড়া জুনিয়র হাইস্কুল জীবন্ত উদাহরণ। তাঁর লেখনীতে দীঘিনালার প্রত্যন্ত জনপদে নীরবে আরো যে কতো উন্নয়ন আর কল্যাণের গল্প প্রোথিত আছে... সেটি আজ আর নাই বললাম। বন্ধু তোমার জন্য আমাদের প্রাণান্তকর শুভ আকুতি।
প্রদীপ চৌধুরী: সভাপতি- খাগড়াছড়ি সাংবাদিক ইউনিয়ন।