বাঘাইছড়িতে ৭ বছরেও শেষ হয়নি গার্ডার সেতু নির্মাণ

প্রকাশঃ ০৯ মে, ২০২৩ ০৬:৪৭:৫৬ | আপডেটঃ ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০৮:৪৮:১৫
সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলায় কাচালং নদীর ওপর বেইলি সেতুর একটি পাটাতন ভেঙে বাঘাইছড়ি উপজেলার সঙ্গে দীঘিনালার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়েছে। এতে করে মূলত সড়কপথে সারাদেশের সঙ্গে বাঘাইছড়ি উপজেলা সদরের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে। সোমবার ( ৮ মে) সকাল আনুমানিক ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটেছে। এদিকে, ২০১৬ সালে বেইলি সেতুর পাশে ৪০৯ ফুট দৈর্ঘ্যরে একটি পিসি-গার্ডার সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হলেও ভূমি জটিলতা এবং নির্মাণে ধীরগতির কারণে এখনো শেষ হয়নি। এতে করে ভোগান্তিতে রয়েছেন উপজেলার মানুষ।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সীমান্ত সংযোগ সড়কের নির্মাণসামগ্রী পাথর পরিবহনের সময় একটি পাথরবোঝাই ট্রাক বাঘাইহাট থেকে মারিশ্যার দিকে রওনা করে। এরমধ্যে কাচালং বেইলি সেতুতে উঠার সময় সেতুর শুরুর দিকে বেইলির একটি অংশ ভেঙে যায়। এসময় পাথরবোঝাই ট্রাক সেতুতে আটকে যায়। সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়ায় সড়কের দুই পাশের যানবাহন পারাপার বন্ধ হয়ে আছে। আগামী দুই-একদিনের মধ্যে বেইলি সেতুটি চালু করা সম্ভব হবে জানিয়েছে সওজ।

জানতে চাইলে সওজ খাগড়াছড়ি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাকসুদুর রহমান বলেন, সোমবার সকাল আনুমানিক ৮টার দিকে বেইলি সেতুর একটি অংশ ভেঙে পড়ে। আমরা খবর পাওয়ার পর সবগুলো ইউনিটকে কাজে লাগিয়েছি। বেইলি সেতুগুলো দিয়ে মাত্রাতিরিক্ত ভারী যানবাহন চলাচল করতে পারে না। এমনিতেই পুরনো এসব বেইলি সেতু দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে আয়ুষ্কাল কমে আসে। সীমান্ত সংযোগ সড়কের জন্য পাথরবোঝাই ট্রাকটি পারাপারের সময় বেইলি একটি অংশ ধসে ভেঙে পড়ে। আমরা আশাবাদী আগামী দুই-এক দিনের মধ্যে সেতুটি যান চলাচলের উপযোগী করতে পারব। গার্ডার সেতু নির্মাণ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পাকা সেতুটির নির্মাণ কাজ চলছে। তবে এটি শেষ হতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। বর্তমানে সেতুর আগে একটি রিটেইনিং ওয়াল (ধারক দেওয়াল) নির্মাণ কাজ চলছে। রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ না হলে সেতুর এপ্রোচ তৈরি করা যাবে না। যে কারণে কিছুটা সময় লাগছে। আগামী দুই মাসের মধ্যে সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবে বলেও জানান তিনি।

সওজ সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে বাঘাইছড়ির কাচালং নদীর ওপর বেইলি সেতুর পাশেই ৪০৯ ফুট দৈর্ঘ্যরে পিসি-গার্ডার সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। কার্যাদেশ অনুযায়ী ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও এই সেতু নির্মাণে দুইবার সেতুর গার্ডার ধস ও ভূমি জটিলতায় কয়েকধাপে মেয়াদকাল বেড়েছে। সর্বশেষ ২০২১ সালের ১৫ মার্চ রাতে কাজ করার সময় গার্ডার ধসে দুই শ্রমিক আহত হন। ১১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ের সেতুর নির্মাণ কাজের কার্যাদেশ পায় কুমিল্লার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স রানা বিল্ডার্স। সেতু নির্মাণে ধীরগতির কারণে দিনে দিনে ক্ষোভ বাড়ছে স্থানীয়দের।

বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সুদর্শন চাকমা বলেন, ‘২০১৬ সালে পাকা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হলেও এখনো শেষ হয়নি। আমি বলব বিষয়টি সড়ক বিভাগের চরম অবহেলা। তাদের অবহেলার কারণে পুরো উপজেলার মানুষ দীর্ঘসময় ধরে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। দুই ধাপে সেতুর গার্ডারও ধসে পড়েছিল। বিষয়টি নিয়ে আমরা সওজের আগের নির্বাহী প্রকৌশলী ও বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলীকে বার বার তাগাদা দিলেও তারা কর্ণপাত করছেন না। আজকেও সেতুর পাটাতন ভাঙার পর আমি তাদের নতুন সেতু নির্মাণ কাজ শেষ করার জন্য তাগিদ দিয়েছি।’

উল্লেখ্য, আয়তনে দেশের সবচেয়ে বড় জেলা রাঙ্গামাটির সবচেয়ে বড় উপজেলাও বাঘাইছড়ি। ২০১১ সালের আদমশুমারির তথ্য অনুযাযী, জেলার গুরুত্বপূর্ণ এই উপজেলার জনসংখ্যা ৯৬ হাজার ৮৯৯ জন হলেও বর্তমানে এক লাখেরও অধিক দাঁড়িয়েছে। উপজেলা সদর থেকে সড়কপথে ঢাকা-চট্টগ্রামে যাতায়াতের ক্ষেত্রে এই কাচালং বেইলি সেতুর ওপর দিয়ে পাড়ি দিতে হয়। উপজেলার মারিশ্যা, বাঘাইছড়ি, সারোয়াতলীর মানুষ এই সেতুর ওপর দিয়ে সড়কপথে বাঘাইহাট হয়ে খাগড়াছড়ি ও সাজেকে যেতে পারেন।

সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions