আলীকদমে শিক্ষক দ্বন্দ্বে অনিশ্চিত ৬ শিক্ষার্থীর পরীক্ষা নিশ্চিত করলেন ইউএনও

প্রকাশঃ ০১ মে, ২০২৩ ০৮:৪০:৩৮ | আপডেটঃ ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০২:১৫:৪২
সিএইচটি টুডে ডট কম, আলীকদম (বান্দরবান)। সারা দেশে  শুরু হয়েছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। পরীক্ষার রুটিন অনুযায়ী প্রস্তুতি সম্পন্ন করে ৬ জন পরীক্ষার্থী কিন্তু  পরীক্ষার আগের দিন সন্ধ্যায় প্রধান শিক্ষক  জানান নিবন্ধনের টাকা জমা না হওয়ায় তারা প্রবেশপত্র পাবে না।
বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অন্তঃদ্বন্দ্বের বলি হিসেবে ব্যবহার করছেন শিক্ষার্থীদের প্রবেশপত্রকে । প্রায় অনিশ্চিত ৬ শিক্ষার্থীর এসএসসি পরীক্ষায় বসা । তবে বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) জানালে, ইউএনও’র হস্তক্ষেপে পরীক্ষা শুরুর  মাত্র ৩০ মিনিট আগে প্রবেশপত্র পায় পরীক্ষার্থীরা। পরীক্ষা শুরুর আগে প্রবেশপত্র পেয়ে শিক্ষার্থীরা উচ্ছ্বাসিত হলেও দায়িত্বহীন কাজের  জন্য প্রধান শিক্ষকসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তি দাবি করেন শিক্ষার্থীরা।

শনিবার (২৯ এপ্রিল) সন্ধ্যায় ৬ জন শিক্ষার্থীর প্রবেশপত্র না পাওয়ার বিষয়টি পরিচালনা কমিটিকে জানানো হলে এবিষয়টি আলোচনায় আসে।পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে যান এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানানো হলে তিনি দ্রুত ব্যবস্থা নেন।

শিক্ষার্থীরা জানান, প্রবেশপত্র ২৫ তারিখ দেওয়ার কথা থাকলেও স্যার (প্রধান শিক্ষক)  না থাকায় দেয়নি।পরে স্যার আসলে  ২৭ তারিখ বিকাল থেকে প্রবেশপত্র দেওয়া শুরু হয়। কিন্তু আমাদের প্রবেশপত্র দেয়নি এবং আসেনি তাও বলেনি। পরে দিন গেলেও দেয়নি। ২৯ তারিখ সন্ধ্যায় পরিবারের সদস্যসহ গেলে স্যার জানায়, আমরা পরীক্ষা দিতে পারব না।

অনিয়মিত পরীক্ষার্থী ঙানরাও  ম্রো বলেন, আমার প্রবেশ পত্র আসলেও হেডস্যার আসেনি এবং পরীক্ষা দিতে পারব না বলে জানায়।পরে আজকে বিকালে হেডস্যার প্রবেশপত্র দিয়েছেন।

অভিভাবক আলী হোসেন বলেন, শিক্ষকদের অন্তঃদ্বন্ধে বলি করতে চেয়েছেন শিক্ষার্থীদের। প্রধান শিক্ষককে বারংবার বিষয় জানালেও দেখছি দেখব বলে সময়ক্ষেপণ করেছে।এটি শিক্ষক হিসেবে তাদের কাছে কাম্য ছিল না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন,প্রধান শিক্ষক প্রবেশপত্র আসেনি বিষয়টি জানত কিন্তু সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে ঘায়েল করতে বিষয়টি দেরীতে প্রকাশ করেছে।

পরিচালনা কমিটির সদস্য জমির উদ্দিন বলেন,ঙানরাও ম্রো প্রবেশপত্র আগে এসেছে। কিন্তু কেন প্রধান শিক্ষক মিথ্যা বলেছেন কেন জানি না।পরে আমি প্রবেশপত্রের ফাইল খোঁজাখুঁজি করে তার প্রবেশপত্রটি বের করে উক্ত  শিক্ষার্থীকে দেওয়া হয়েছে।

সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল হামিদ বলেন,নিবন্ধনের সময় আমি থাকলেও বিতরণের সময় ছিলাম না।তাছাড়া কে পেয়েছে কে পায়নি বিষয়টি বর্তমান প্রধান শিক্ষক আমাকে জানায়নি। ভুলবশত নিবন্ধন না হতে পারে কিন্তু প্রবেশপত্র দেওয়ার আগে যাচাই বাছাই করা হলে এই সমস্যা হত না। মূলত প্রধান শিক্ষক ও কিছু শিক্ষক আমার উপর দোষ চাপাতে এই জঘন্য কাজ করেছে।

এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক মোঃ বদিউল আলম সংবাদকর্মী পরিচয়ে কথা বলতে চাইলে তিনি কথা বুঝা যাচ্ছে না বলে বারংবার কল কেটে দেন। পরে বিদ্যালয়ে গেলে জানান,আমি কিছু বলতে পারব না, সভাপতির অনুমতি ছাড়া।
কেন আপনি এতদিন না জানিয়ে গতকাল সন্ধ্যায়  জানালেন এমন প্রশ্নের কোন উত্তর না দিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যায়।

এবিষয়ে পরিচালনা কমিটির সভাপতি দুংড়ি মং মার্মা বলেন,প্রবেশপত্র আসেনি ও নিবন্ধন হয়নি এই বিষয়টি প্রধান শিক্ষক আমাকে জানায়নি, অভিভাবকরা সন্ধ্যায় জানায়,তাৎক্ষণিক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানানো হয়েছে এবং দুই শিক্ষককে প্রয়োজনীয় সবকিছু দিয়ে বোর্ডে পাঠানো হয়েছে। আলীকদম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার প্রচেষ্টায় পরীক্ষা শুরুর আগে সকালে তাদের হাতে প্রবেশপত্র তুলে দিয়েছি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রধান শিক্ষক প্রবেশপত্রের বিষয়টি আমাকে বা অন্য কোন সদস্যকেও জানায়নি। কেন জানায়নি, কি উদ্দেশ্য জানায়নি জানিনা। তবে এঘটনার সাথে  জড়িতদের বিরুদ্ধে   ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাবের মোঃ শোয়াইব বলেন,অভিভাবক ও পরিচালনা কমিটি সন্ধ্যায় জানিয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীরা যাতে প্রবেশপত্র পায় তার জন্য যা করণীয় করেছি। জড়িতদের শোকজ করা হয়েছে।

পরীক্ষা শেষে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পরিচালনা কমিটির সভাপতি।

সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions