প্রকাশঃ ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩ ০৪:১১:০০
| আপডেটঃ ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ০৩:৫৫:৫৩
বিশেষ প্রতিনিধি, সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। ২০১৮ সালে বাড়ির আঙিনায় ঢালু পাহাড়ে বিভিন্ন জাতের কুলের চারা রোপন করেন রাঙামাটির কৃষি উদ্যোক্তা সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যা। বছর দুয়েকপর থেকে তাঁর বাগানে কুলের ফলন আসতে শুরু করেছে। এ পর্যন্ত তিনি নিজের বাগান থেকে আড়াই লাখ টাকার অধিক দেশী-বিদেশী জাতের কুল বিক্রয় করেছেন। কাপ্তাই হ্রদের তীরবর্তী গড়ে তোলা এই বাগানে কুলের পাশাপাশি রয়েছে বিভিন্ন ফলের গাছও। এদিকে সুশান্তের এমন উদ্যোগে খুশি স্থানীয়রাও; ইতোমধ্যে এলাকায় একজন ‘মডেল কৃষক’ হিসাবে উপাধি পেয়েছেন তিনি।
কৃষি উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ২০১৬ সালে রাঙামাটি সদর উপজেলার মগবান ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড সোনারাম কারবারি পাড়ায় বাড়ির আঙিনায় ১০ একর পাহাড়ি ঢালু জমিতে মিশ্র ফলের বাগান তৈরির কাজ শুরু করে সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যা। ধারাবাহিকভাবে সৃষ্ঠ এই বাগানে তিনি ২০১৮ সালে বরই (কুল) গাছের চারা রোপন করেন। ২০২০ সাল থেকে বরইয়ের ফলন আসতে শুরু করে। তাঁর বাগানে প্রায় ২০ প্রজাতির ফলজ চারা রয়েছে। সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যা এখন পার্বত্য চট্টগ্রামের একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা হিসাবে বেশ পরিচিত। তাঁর থেকে বাগান সৃজনের পরামর্শ নেওয়ার জন্য অনেকেই যোগাযোগ করছেন বলে জানান তিনি।
সম্প্রতি সোনারাম কারবারি পাড়ায় সুশান্তের সৃজিত বাগান পরিদর্শন করে দেখা গিয়েছে, মিশ্র বাগানে প্রায় ২০ প্রজাতির ফলজ গাছ থাকলেও এখন কেবল বরইয়ের ফলন এসেছে। জানুয়ারি মাসের শুরু থেকে তিনি বাজারে বিক্রয় শুরু করে দিয়েছেন। মার্চ পর্যন্ত বরই বিক্রয় করতে পারবেন। মূলত বল সুন্দরী, কাশমেরী, আপেল কুল, ভারত সুন্দরী, দেশীয় মিষ্টি ও টক জাতের বরই চাষ করেছেন। তবে সবচেয়ে বেশি রয়েছে বল সুন্দরী বরইয়ের গাছ। ফলনে সুস্বাদু, আকারে বড় হওয়ায় তুলনামূলকভাবে বাজারে বল সুন্দরীর জাতের বরইয়ের চাহিদা বেশি।
জানতে চাইলে তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, আমি ২০১৬ সালে মিশ্র বাগান সৃজনের কাজ শুরু করি। ২০১৮ সালে বিভিন্ন জাতের বরইয়ের চারা রোপণ করেছি। দুই বছর পর ২০২০ সাল থেকে বরইয়ের উৎপাদন শুরু হয়েছে। এবছরসহ তিন বছর ধরে আমি বরই বিক্রয় করছি। ২০২০ সালে ৮০ হাজার, ২০২১ সালে ১ লাখ ২০ হাজার টাকার বরই বিক্রয় করলাম। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে বিক্রয় শুরু করেছি, এ যাবৎ ১ লাখ টাকার বরই বিক্রয় করেছি। আশাকরছি এই বছরে মোট ৫ লাখ বরই বিক্রয় করতে পারব। তিনি আরও বলেন, আমার বাগানে বরইসহ সব ফলনই কীটনাশক মুক্ত। কোনো কীটনাশক ব্যবহার করি না। কীভাবে আমি বাগান সৃজন করে সাফল্যের মুখ দেখেছি, অনেকেই তা আমার কাছে জানতে চান। আবার অনেকেই বাগান সৃজনের জন্য পরামর্শ চেয়েছেন। এ যাবৎ ২৫-৩০ জনকে আমি বাড়ির পাশে বাগান সৃজনের জন্য উদ্বুদ্ধ করেছি। এ বছর থেকে বাগানে নতুন করে ড্রাগন, কফি ও বারোমাসি কাঁঠালের চারা রোপণ করেছি। এক বছরের মাথায় ড্রাগন ও বারোমাসি কাঁঠালের ফলন আসতে শুরু করবে।
এদিকে সুশান্তের বাগান সৃজনের ফলে এলাকার অনেক বেকার যুবকরাও কাজের সুযোগ পেয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন সুকুমার চাকমা। সুকুমার জানান, ‘সুশান্ত দা আমাদের এলাকায় এক নামে মডেল কৃষক হিসাবে পরিচিত। আমি তার বাগানে কাজ করছি পাশাপাশি এখন নিজের বাড়ির পাশেও কফি আর বরসুন্দরী বরইয়ের চারা সৃজন করেছি। তার দেখাদেখি এখন চাকরির নেশা ছেড়ে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন বুনছেন।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর (ডিএই) রাঙামাটি কার্যালয়ের উপপরিচালক কৃষিবিদ তপন কুমার পাল বলেন, সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যা একজন পরিশ্রমী মানুষ, সফল কৃষি উদ্যোক্তা। বাড়ির আঙিনায় বাগান গড়ে তোলে তিনি সফলতার মুখ দেখেছেন। বর্তমানে তাঁর বাগানে বরইয়ের (কূল) ফলন এসেছে। ইতোমধ্যে তিনি বাজারে বিক্রয় শুরু করে দিয়েছেন। এবছর বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কারের জন্য সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যা আবেদন করেছেন; আমরা আশাবাদী তিনি এবার একজন সফল উদ্যোক্তা হিসাবে পুরস্কৃত হবেন। কৃষি বিভাগ নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতে সহায়তা করে আসছে বলেও জানান এই কৃষিবিদ।