লংগদুতে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে কোমলমতিদের পাঠদান

প্রকাশঃ ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩ ০৪:০৩:৪৩ | আপডেটঃ ১০ জানুয়ারী, ২০২৫ ০২:৪৮:৩৫

সিএইচটি টুডে ডট কম, লংগদু (রাঙামাটি)বিদ্যালয় ভবনের বাইরের দেওয়ালে নতুন রঙ লেগেছে। লিখা হয়েছে গুণীজনদের বাণীও। আছে বড় অক্ষরের ইংরেজি-বাংলা বর্ণমালাও। ভবনে তিনটি পাঠদান কক্ষ একটি শিক্ষকদের বসার কক্ষ আছে। কিন্তু কক্ষগুলোতে ঢুকেই চক্ষু চড়কগাছ

 

জরাজীর্ণ ভবনের ভেতরের দেওয়ালে ফাটল ধরেছে। পলেস্তারা খসে প্রতিটি কক্ষের ভিমের রড বেরিয়ে গেছে। একটি কক্ষের দেয়াল ফেটে ফাঁকা হয়ে আছে। তবুও কক্ষটিতে পাঠদান অব্যাহত  রাখা হয়েছে ভবন সংকটে। বাকি দুটি কক্ষের একটিতে কোনোমতে তৃতীয় চতুর্থ শ্রেণির পাঠদান চলছে। অন্যদিকে ভবনের পেছনের দিকের মাটিও সরে গেছে

 

রাঙামাটির লংগদু উপজেলার কালাপাকুজ্জ্যা ইউনিয়নের রশিদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনটির বাইরে ফিটফাট থাকলেও ভেতরে সদরঘাট। বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই ভবনটি কতটা ঝুঁকিপূর্ণ!

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৮৫ সালে উপজেলার ২নং কালাপাকুজ্জ্যা ইউপির ৩নং ওয়ার্ড রশিদপুর গ্রামে স্থানীয়দের সহযোগিতায় বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৯৯-২০০০ অর্থ বছরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর প্রায় লাখ টাকা ব্যয়ে বিদ্যালয়ের একতলা পাকা ভবন নির্মাণ করে। ২০১৩ সালে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ করা হয়। ঝুঁকি নিয়ে বছর ধরে জরাজীর্ণ ভবনে চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। গত বছর আগে ভবনের বাইরে রঙ করা হয়েছে। তবে দুর্ঘটনা আতঙ্কে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমছে

 

পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী মিম আক্তার জানায়, ‘বিদ্যালয়ের ভবনটি পুরানো হয়ে গেছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে ভেঙে পড়ছে। তাই ভবনে ক্লাস করতে ভয় লাগে

 

বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. ইদ্রিস আলী বলেন, ‘আজ থেকে বছর খানেক আগে বিদ্যালয়ে ২শতাধিক শিক্ষার্থী ছিল। ভবন জরাজীর্ণ হওয়ায় প্রতি বছর নতুন শিক্ষার্থী ভর্তির সংখ্যা কমে যাচ্ছে। বিদ্যালয়টিতে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণির পাঠদান চলে। আলাদা ভবন থাকলে শ্রেণিকক্ষ পরিবর্তন করে দেওয়া যেতো।"

 

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘এই বছরই আমি রশিদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান হিসেবে যোগদান করি এখন ৮৫ জন শিক্ষার্থী আছে। তবে তুলনামূলক হারে কম। বিদ্যালয়ের ভবন জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় স্থানীয় মক্তবে শিক্ষার্থীরা ভর্তি হচ্ছে। আমাদের শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে।"

 

প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, ‘বিদ্যালয়ের জরাজীর্ণ ভবনের কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এখনো কোনো নতুন ভবন বা সংস্কার হচ্ছে না। ভবনটি দেখতে দৃষ্টিনন্দন হলেও ঝুঁকি রয়ে গেছে। নতুন ভবন নির্মাণের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য উপজেলা শিক্ষা দপ্তরে যোগাযোগ করছি। জরুরি ভিত্তিতে নতুন ভবন করা না হলে যেকোনো সময় বড় ধরণের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।

 

জানতে চাইলে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এম.কে ইমাম উদ্দিন জানান, বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক পরিচালনা কমিটির সভাপতি বিষয়টি আমাকে লিখিত আকারে জানিয়েছে। আমি কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন পাঠিয়েছি। আশা করছি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে

 

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের লংগদু উপজেলা প্রকৌশলী শামসুল আলম বলেন, ভবনটি জরাজীর্ণ হওয়ায় নতুন ভবন নির্মাণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো তালিকায় বিদ্যালয়টির নাম পাঠানো হয়েছে। অর্থ বরাদ্দ পেলে নতুন ভবন নির্মাণ করা হবে

 

বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আকিব ওসমান বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে কোমলমতি শিশুদের পাঠদান বিপদজনক। খোঁজ খবর নিয়ে যতদ্রুত সম্ভব নতুন ভবন বা সংস্করণের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে

 

সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions