নানিয়ারচরে ত্রিদিব-ইলিপন বিরোধে দলীয় কার্যালয়ে ঢুকতে পারেনি স্বেচ্ছাসেবকলীগ !

প্রকাশঃ ২২ জানুয়ারী, ২০২৩ ০৮:৪২:১৪ | আপডেটঃ ২৮ মার্চ, ২০২৪ ০৩:৫২:০৭
সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। রাঙামাটির নানিয়ারচরে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের আহ্বায়ক কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সঙ্গে জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের বিবাদ চরমে পৌঁছেছে। সবশেষ ১৬ জানুয়ারি উপজেলায় দলীয় কার্যালয়ের স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতাদের বৈঠকে বসতে না দেয়ায় পুরোদমে চটেছেন জেলার নেতারা। উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, স্বেচ্ছাসেবকলীগের জেলার দুই শীর্ষনেতা উপজেলায় ‘মনগড়া’ কমিটি দিয়েছে; তারা এই কমিটিকে ‘বয়কট’ করা হলো বলে ঘোষণাও দিয়েছেন। অন্যদিকে জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতার দাবি, পছন্দের লোক নেতৃত্বে না আসায় ‘বাড়াবাড়ি’ করছে উপজেলার আওয়ামী লীগের দুই শীর্ষ কর্ণধার।

কমিটি দেওয়ায় যে বৈরিতা শুরু হয়েছে নানিয়ারচরে সেখানে যেন ‘ঘি’ পড়েছে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতারা দলীয় কার্যালয়ে ঢুকতে না পেরে। নানিয়ারচর উপজেলার এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও চলছে পাল্টাপাল্টি স্ট্যাটাস। আজ রোববার দুপুরেও (২২ জানুয়ারি) রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের কক্ষে এনিয়ে সমালোচনার ঝড় তুললেন জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ সভাপতি মো. শাওয়াল উদ্দীন ও সাধারণ সম্পাদক মো. শাহাজাহান।

নানিয়ারচর উপজেলা আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, নতুন গঠিত আহ্বায়ক কমিটিতে যারা নেতৃত্বে এসেছেন তারা প্রায় সকলেই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য ত্রিদিব কান্তি দাশের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগে নিজেদের ‘আধিপত্য না থাকায়’ নতুন কমিটি বয়কট করেছে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল ওহাব হাওলাদার ও সাধারণ সম্পাদক ইলিপন চাকমা। মূলত নানিয়ারচরে ত্রিদিব এবং ওহাব-ইলিপন জোটের বিরোধেই এসব বৈরিতা।

জানা গেছে, গত ২ জানুয়ারি নানিয়ারচর উপজেলায় স্বেচ্ছাসেবকলীগের ২১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেয় জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ। সংগঠনটির জেলা সভাপতি মো. শাওয়াল উদ্দিন এবং সাধারণ সম্পাদক মো. শাহাজাহানের যৌথ সই করা কমিটিতে সুমন দে’কে আহ্বায়ক, মো. হারুনুর রশিদ ও ত্রিরতন চাকমাকে যুগ্ম আহ্বায়ক এবং মো. নবী হোসেনকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। ২১ সদস্যের কমিটির সদস্য হিসাবে রয়েছেনÑ গোলাম আজম, সুমন রুদ্র, শিপন চাকমা, মো. মঞ্জু, মো. জহির, অজয় দাশ, মো. জসীম খান, পনব কর্মকার, বাবলু তালুকদার, মো. মিজান, পল্লব চাকমা, সুকেন চাকমা, কুলমনি চাকমা, খলিলুর রহমান, বাসু কর্মকার, বিটু নাথ ও মো. শাহ আলম। আহ্বায়ক কমিটিকে আগামী ৩ মাসের মধ্যে উপজেলায় সম্মেলন করার নির্দেশ দেয় শাওয়াল-শাহাজাহানের নেতৃত্বাধীন জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাঙামাটি জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহাজাহান বলেন, ‘দুই বছর আগে আমরা নানিয়ারচর উপজেলায় একটি আহ্বায়ক কমিটি দিয়েছিলাম। সেই কমিটি বিগত দুইবছরেও উল্লেখজনক কোনো কার্যক্রম করতে পারেনি। এ কারণে বছরখানেক ধরে উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের জানালেও তারা সহযোগিতা করেননি। পরবর্তীতে আমরা ২ জানুয়ারি ২১ সদস্যের একটি আহ্বায়ক কমিটি দিয়েছি। যে কমিটি সামনের ৩ মাসের মধ্যে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটিগুলোকে গুছিয়ে সম্মেলন দেবে। কিন্তু নতুন আহ্বায়ক কমিটিতে সভাপতি-সম্পাদকের পছন্দের মানুষ না আসার তারা এখন ‘বাড়াবাড়ি’ করছে। তারা চেয়েছিল একসঙ্গে বসে একসাথেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে। কিন্তু আমরাতো গঠনতন্ত্র বিরোধী কাজ করতে পারিনা।’

শাহাজাহান আরও বলেন, ‘সবশেষ গত ১৬ জানুয়ারি উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ কম্বল বিতরণের উদ্দেশ্যে একটি প্রস্তুতিমূলক বৈঠক করার জন্য দলীয় কার্যালয়ের চাবি চাইলে উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক তাদের কার্যালয়ের চাবি দেননি। দলীয় কার্যালয়কে তো কেউ ব্যক্তিগত চালাতে পারেন না।’ তবে দলীয় কার্যালয়ে প্রবেশে বাধা নিয়ে জানতে নানিয়ারচর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের নতুন কমিটির আহ্বায়ক সুমন দে’র সেলফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি সাড়া দেননি। যুগ্ম আহ্বায়ক মো. হারুনুর রশিদের মুঠোফোন কল দিলে তিনিও রিসিভ করেননি।

নানিয়ারচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল ওহাব হাওলাদার জানান, ‘জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদকের ফেসবুক পোস্টে দেখলাম স্বেচ্ছাসেবকলীগ নাকি দলীয় কার্যালয়ে ঢুকতে দেয়া হয়নি। এ ব্যাপারে আমাকে কেউ কিছুই জানায়নি, আর ফেসবুকে লিখার কারণে আমিও খুব বেশি খবরাখবর রাখেনি। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইলপন চাকমা এলাকায় ছিলেন, তিনি বিষয়টি ভালো করে জানবেন। আমি বিগত ১৫ জানুয়ারি নানিয়ারচরে সেতুর নামফলক উদ্বোধনের পরদিন থেকেই উপজেলায় ছিলাম না, গতকাল (শনিবার) এসেছি।

তবে উপজেলায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ওহাব। তিনি বলেন, ‘উপজেলায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি গঠন হোক বিষয়টিকে আমরা স্বাগত জানাই। আমরা জেলা নেতৃবৃন্দকে বলেছি আপনারা উপজেলায় আসেন আমরা সকলে আলাপ আলোচনা করে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করব। যে কমিটি পরে সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করবে। কিন্তু জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের নেতারা আমাকে (সভাপতি) ৫ জনের নাম, সাধারণ সম্পাদককে ৫ জনের নাম ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ১০ জনের নাম দিবেন বলে জানায়। আমরা বলেছি নানিয়ারচর আওয়ামী লীগে কোনো গ্রুপিং নেই, আপনারা তিন গ্রুপে ভাগ করছেন কেন? পরে তারা জেলা থেকে উপজেলায় একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে দিয়েছে। আমরা এই কমিটি মেনে নেইনি। কারণ উপজেলায় আওয়ামী লীগ আমরা করি, তারা জেলা থেকে এসে চালাবে না।’

এসব প্রসঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য ইলিপন চাকমাকে একাধিবার ফোন দিলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ত্রিদিব কান্তি দাশ বলেন, ‘আমি তো এখন উপজেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বে নেই, উপজেলা আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরাই বিষয়টি ভালো জানবেন। জেলা কমিটি সমন্বয়ের মাধ্যমে উপজেলায় কমিটি দিবে এটা তো স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এর বাহিরে আমার কিছু জানা নেই।’ ত্রিদিব বলেন, ‘একসময় আমরা উপজেলায় আওয়ামী লীগের রাজনীতির হাল ধরেছি। এখন তো অনেকেই সাজানো চেয়ারে এসে বসেছেন। দল নিয়ে এখন এই ধরণের কথা শুনলেও কষ্ট লাগে।’



সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions