লামাকে গিলে খাচ্ছে ৪০টি অবৈধ ইটভাটা

প্রকাশঃ ১৭ জানুয়ারী, ২০২৩ ০৯:৩০:৩৭ | আপডেটঃ ১১ জানুয়ারী, ২০২৫ ১১:৫৫:১৫

সিএইচটি টুডে ডট কম,  লামা, (বান্দরবান)। বান্দরবানের  লামায় ইট প্রস্তুত ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হওয়ায় এক শ্রেণির অধিক মুনাফালোভী ব্যবসায়ী নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে যত্রতত্র বিশেষ করে লোকালয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংলগ্ন এলাকা, পাহাড় কেটে ফসলি জমিতে অবৈধ ভাবে গড়ে তুলছে ইট ভাটা

 

এসব ইট ভাটায় নেই কোন সরকারি অনুমোদন পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ইট ভাটার বিষাক্ত কালো ধোঁয়া, গ্যাস ধুলায় জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে হারিয়ে যাচ্ছে জীব-বৈচিত্র্য, বিনষ্ট হচ্ছে আমাদের চির চেনা সবুজ প্রকৃতি পরিবেশ


২০১৩ সালের ইট প্রস্তুত ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইনে সংশোধনী এনে ইট ভাটার জন্য লাইসেন্স বাধ্যতামূলক, নির্দিষ্ট এলাকায় ইট ভাটার জায়গা ভাটার সংখ্যা নির্ধারণ, লাইসেন্সবিহীন ইট ভাটা চালালে দুই বছরের জেল ২০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান সংযোজন করেইট প্রস্তুত ভাটা (নিয়ন্ত্রণ) সংশোধন আইন, ২০১৯বিল সংসদে পাস হয়েছে ধারা- সংশোধন এনে প্রতিস্থাপন করে বলা হয়েছে, ‘আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, ইট ভাটা যে জেলায় অবস্থিত সেই জেলার জেলা প্রশাসকের নিকট হইতে লাইসেন্স গ্রহণ ব্যতিরেকে, কোনো ব্যক্তি ইট প্রস্তুত করিতে পারিবে না লামা উপজেলায় অবৈধ ভাবে ৪০টি ইট ভাটা রয়েছে এর মধ্যে একটিরও বৈধতা নেই,ইতিমধ্যে সবকয়টি ভাটায় পাহাড় কেটে মাটি সংগ্রহ, জ্বালানি হিসাবে কাঠও মজুদ করা হয়েছে ২০টির বেশি ভাটার চুল্লিতে ইতিমধ্যে আগুন দেয়া হয়েছে অনুমতি ছাড়া ইটভাটা শুরু করলেও প্রশাসন পরিবেশ অধিদপ্তর বান্দরবানের কোন তৎপরতা লক্ষ করা যায়নি


এদিকে, গত ১৩ নভেম্বর বাংলাদেশের সব অবৈধ ইটভাটা ইটভাটার জ্বালানি হিসেবে কাঠের ব্যবহার দিনের মধ্যে বন্ধ করার নির্দেশনা জারি করেছে হাইকোর্ট কিন্তু, বর্ষার পরপরই পাহাড়ে সবুজ প্রকৃতি সাজতে শুরু হলেও সেই পাহাড়ের বুকে আঘাত শুরু করেছে ইটভাটার মালিকরা উপজেলার ফাইতং ইউনিয়নে ৩১টি, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নে ৬টি, গজালিয়া ইউনিয়নে ২টি, সরই ইউনিয়নে ১টি লামা পৌরসভায় ১টি ইটভাটায় মাটির জন্য সাবাড় করা হচ্ছে অসংখ্য সবুজ পাহাড় ফসলি জমি চব্বিশ ঘন্টাই চলতেছে ইটভাটার চুল্লী সেই ধোঁয়ায় দূষিত হচ্ছে পরিবেশ যা পুরো লামাকে ধীরে ধীরে গিলে খাচ্ছে


অপরদিকে, ইট ভর্তি ট্রাক গ্রামের সড়কে চলার কারণে টেকসই সড়কও ভেঙে যাচ্ছে কোটি কোটি টাকার নিমিষেই শেষ হচ্ছে ইট প্রস্তুত ইটভাটা আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে পরিবেশের মারাত্বক ক্ষতিসাধন করে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে শত শত পাহাড় কেটে ইটভাটায় নিয়ে ইট তৈরি করছে সরেজমিনে দেখা গেছে, ০৩ নং ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ইয়াংছা ত্রিপুরা পাড়ার পাশেই গড়ে উঠা পিবিএন ব্রিকসের পাশে স্কেভেটর দিয়ে পাহাড় কাটা হচ্ছে ইতিমধ্যে দুটি বিশাল পাহাড় সাবাড় করেছে এই ব্রিক ফিল্ডটি জ্বালানি হিসাবে মজুদ করা হয়েছে সবুজ বনের লাকড়ি তারই পাশে রয়েছে আরো দুইটি অবৈধ ইট ভাটা উপজেলার ফাইতং ইউনিয়নের তিনটি ওয়ার্ডে গড়ে উঠেছে ৩০টি ইটভাটা সবগুলো ভাটা স্কুল, জনবসতি গ্রাম, খালের পাড় এবং সড়কের পাশে তৈরি করা হয়েছে চলমান বর্ষার শুরু থেকে এই ইটভাটাগুলো স্কেভেটর দিয়ে পাহাড় কেটে মৌসুমের জন্য মাটি মজুদ করেছে এখনো চলছে পাহাড় কাটার কার্যক্রম ইতিমধ্যে ফাইতং এলাকায় যন্ত্রের গর্জন ধূলাবালুতে সবুজ প্রকৃতি হারিয়ে যাবে এমনটি জানিয়েছেন স্থানীয়রা শুধু ফাইতং ইউনিয়নের তিনটি ওয়ার্ডে ৩০টি অবৈধ ইটভাটা থাকার কথা নিশ্চিত করেছেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক এসব ভাটায় ইট প্রস্তুতে পাহাড় কেটে পাহাড়ি লাকড়ি, গাছপালা কেটে ব্যবহার করায় ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে এতে প্রতিনিয়ত ধোঁয়ার দূষণে স্বাস্থ্যঝুঁকির পাশাপাশি পরিবেশ হারাচ্ছে বৈচিত্র্য বিপর্যস্ত হচ্ছে জনজীবন সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রশাসনও অনেকটা নীরব


বছর কয়েক আগে অভিযান চালানো হলেও এরমধ্যে উপজেলা প্রশাসনের কোন দৃষ্টি নেই বলে সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, বসত বাড়ির পাশে ইট ভাটার বিষাক্ত কালো ধুয়ায় আমরা মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছি গাছের ফল-ফলাদিও কমে গেছে আবার পাহাড় কেটে যে ভাবে বন উজাড় করতেছে এতে আমাদের সবুজ পরিবেশ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, বন পাহাড় কেটে ফেলার কারণে আমরা এখন পানি সংকটে রয়েছি এখন সহজে পানি পাওয়া যায়না আমরা বাঁচতে চাই

সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions