প্রকাশঃ ০২ জানুয়ারী, ২০২৩ ০৪:৪৯:০৭
| আপডেটঃ ১৩ জানুয়ারী, ২০২৫ ১১:৫৯:৫৮
ষ্টাফ রিপোর্টার. রাঙামাটি। সারাদেশের মতো পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে বিতরণ করা হয়েছে বই। সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি দিনেই মাতৃভাষায় বই পেয়েছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির শিক্ষার্থীরা। এতে উচ্ছ¡সিত শির্ক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। অন্যদদিকে কতৃপক্ষ বলছেন মাতৃভাষায় পাঠদানের মান বৃদ্ধিতে সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
সকালে সারাদেশের প্রতিটি বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় বই উৎসব। পাহাড়ে সে উৎসবের কমতি ছিলো না, সকালে রাঙামাটি লেকার্স পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজে রাঙামাটি সেনা রিজিয়ন কমান্ডার ইমতাজ উদ্দীন, বনরুপা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাঙামাটি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুইপ্রæ চৌধুরী, রানী দয়াময়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জেলা প্রশাসক মো: মিজানুর রহমান, রাঙামাটি আল আমিন ফাজিল মাদ্রায় পৌর মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী বই বিতরন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। একই সাথে জেলার ১০ উপজেলার মোট ১০৬৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাক প্রাথমিকের বই বিতরণ করা হয়। সেই উৎসবে নতুন মাত্রা যোগ দিয়েছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির শিক্ষার্থীদের মাঝে মাতৃভাষায় বই বিতরণের মধ্য দিয়ে। প্রথম দিনেই জেলার সকল ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির ছাত্র -ছাত্রীদের মাঝে তুলে দেয়া হয়েছে নিজ ভাষার বই। ক্ষুদ্র জাতিস্বত্তার ভাষা সংরক্ষণের জন্য ২০১৭ সাল থেকে বাংলা ইংরেজি বইয়ের পাশাপাশি প্রাক-প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত চারটি শ্রেণিতে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা ভাষায় মাতৃভাষার বই বই বিতরণ হয়েছে। পাশাপাশি শুরু হয় মাতৃভাষায় পাঠদান কার্যক্রম। বিদ্যালয়র নিজ নিজ সম্প্রদায়ের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের পর তাদেরকে দিয়ে পরিচালনা করা হয় পাঠদান কার্যক্রম।
বই উৎসবে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী বলেছেন, বছরের প্রথমদিনে শিশুদের হাতে হাতে বই পৌঁছাতে পারছি, সেজন্য আমরা গর্ববোধ করছি। পাশাপাশি আমাদের তিন পার্বত্য জেলার চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা ভাষাভাষী শিশুদের মাতৃভাষায় বই দেয়া হচ্ছে৷ এজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ। প্রধানমন্ত্রীর একান্ত ইচ্ছায় মাতৃভাষায় শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর এই উদ্যোগকে পূর্ণ বাস্তবায়নে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদসহ এখানকার শিক্ষা বিভাগের যারা আছেন তাদের সঙ্গে নিয়ে এই উদ্যোগ যেন সফলভাবে বাস্তবায়িত হয় সে জন্য সকল উদ্যোগে গ্রহণ করছে জেলা পরিষদ।
চেয়ারম্যান আরও বলেন, মাতৃভাষায় বই পেলেও এখনো তাদের সিলেবাস (পাঠক্রম) পদ্ধতি চালু হয়নি। এটা অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আমরা ইতোমধ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. সাজ্জাদ হোসেন জানান, মাতৃভাষার শিক্ষায় পরীক্ষা পদ্ধতির বিষয়টি এখনো আমাদের গাইডলাইনে আসেনি। এটি নিয়ে আলোচনা করে গাইডলাইন মোতাবেক পরীক্ষাপদ্ধতি চালু করা যায় কিনা সেটি আমরা দেখছি।
এদিকে, এদিন সকাল থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে জেলার সব উপজেলার প্রায় সব'কটি প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বই উৎসব উদযাপন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ডিপিইও কার্যালয়। তথ্যমতে, এ বছর পুরো জেলায় সরকারি-বেসরকারি ১ হাজার ৬৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাধারণ শিক্ষায় প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত ৮৯ হাজার ১৫০ জন শিক্ষার্থীর মাঝে ৩ লাখ ৭৬ হাজার ৫২৯টি বই বিতরণ করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, পাহাড়ি শিশুদের মাঝে মাতৃভাষায় বই বিতরণ কার্যক্রমে জেলার চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর ২৯ হাজার ৮০৬ শিক্ষার্থীকে ৬৭ হাজার ৭৫০টি মাতৃভাষার বই দেয়া হচ্ছে। এরমধ্যে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত চাকমা ভাষার বই দেয়া হচ্ছে ৫৩ হাজার ২২৪টি, মারমা ভাষার বই দেয়া হচ্ছে ১০ হাজার ৮২১ ও ত্রিপুরা ভাষার বই দেয়া হচ্ছে ৪ হাজার ১০১টি। চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা তিন ভাষাভাষী শিক্ষার্থীদের প্রাক-প্রাথমিকে দুইটি বই, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীতে তিনটি এবং তৃতীয় শ্রেণীতে একটি করে বই থাকবে। তবে জনসংখ্যাগত দিক দিয়ে রাঙামাটি জেলায় মারমা ও ত্রিপুরাদের চেয়ে চাকমাদের বসবাস বেশি হওয়ায় এ নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরাই বেশি বই পাচ্ছেন।
উল্লেখ যে ২০১৭ সালে দেশের 'ক্ষুদ্র' নৃ-গোষ্ঠী শিশুদের মাতৃভাষায় পাঠদানের জন্য বই বিতরণ করে আসছে সরকার। সে বছর থেকে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, গারো, এবং সাদ্রি- এই পাঁচটি ভাষায় বই বিতরণ শুরু হলেও তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা ভাষাভাষী শিশুরা প্রাক-প্রাথমিক থেকে বই পাচ্ছে। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে প্রথম শ্রেণী, ২০১৯ সালে দ্বিতীয় শ্রেণী ও ২০২০ সালে তৃতীয় শ্রেণীতেও মাতৃভাষায় বই পেয়েছে তারা। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, কেবল তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্তই মাতৃভাষায় পড়তে পারবে দেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিশুরা। তবে পাহাড়ে চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা ছাড়াও অন্যান্য জাতিগোষ্ঠী বসবাসরত করলেও তাদের সন্তানেরা মাতৃভাষায় পড়তে পারছেন না।