প্রকাশঃ ১৭ নভেম্বর, ২০২২ ০৬:৫০:২৭
| আপডেটঃ ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ ০৬:১৮:৪৯
ফজলুর রহমান রাজন ও সুমন্ত চাকমা জুরাছড়ি থেকে। দেশের সবচেয়ে বড় বুদ্ধমূর্তি উদ্বোধন করা হয়েছে পাহাড়ি জেলা রাঙামাটির জুরাছড়িতে। কোনো ধরণের সরকারি সহায়তা ছাড়াই দায়ক-দায়িকা, উপাসক-উপাসিকাদের দানের অর্থেই প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে এই বুদ্ধমূর্তিটি নির্মাণ করা হয়েছে।
বুধবার সকালে রাঙামাটির জুড়াছড়ি উপজেলার জুরাছড়ি ইউনিয়নের সুবলং শাখা বনবিহারে প্রয়াত সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তের প্রধান শিষ্য ও রাজ বনবিহারের আবাসিক প্রধান শ্রীমৎ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির এই সিংহ শয্যার উদ্বোধন করেন। একই সাথে তিনি দিনব্যাপী ধর্মীয় উৎসবেরও উদ্বোধন করেন। এসময় তার সাথে বনভন্তের শিষ্য সংঘের উপ প্রধান ভদন্ত ভৃগু মহাথের ও সুবলং বনবিহার শাখার অধ্যক্ষ ভদন্তশ্রী মহাথেরো, জ্ঞানো প্রিয় মহাস্থবির উপস্থিত ছিলেন।
সকালে প্রথমে ভিক্ষু সংঘ দায়ক দায়িকদাদের সাথে নিয়ে সিংহ শয্যা বুদ্ধমুর্তির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। ভিত্তি প্রস্থর উদ্বোধনের পর দায়ক দায়িকার প্রতি দেশনা দেন ভিক্ষু সংঘ।
এসময় দেশনাকালে শ্রীমৎ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির বলেন, বুদ্ধের অমিয় বাণী ধারণ করলে দেশে হিংসা হানা হানি সমস্যা থাকবে না। সবাই সুখ শান্তি চায়। তিনি এসময় দেশ ও জাতির কল্যাণে প্রার্থণা করা হয়। এসময় বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যাক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত: পার্বত্য চট্টগ্রামের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের পরমপূজ্য বনভন্তের স্মৃতি স্মারক হিসেবে জুরাছড়ি উপজেলার বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মানুষ ও এ উপজেলা হতে ভিক্ষুহওয়া ভিক্ষুগণ (বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু) দেশের সবচেয়ে বৃহত্তম ও দীর্ঘতম সিংহশয্যা বুদ্ধমূর্তি নির্মাণের উদ্যোগ নেন ২০১২ সালে। ২০১৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারিতে বুদ্ধমূর্তিটি নির্মাণ শুরু হয়ে ২০২১ সালের শেষ দিকে এসে নির্মাণ কাজ শেষ হয়। ১২৬ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৪০ ফুট প্রস্থ, ৬০ ফুট উচ্চতায় নির্মিত হয়েছে বুদ্ধ মুর্তিটি। ১৫ একর জায়গাজুড়ে গঠিত জুরাছড়ি উপজেলার সুবলং শাখা বনবিহার। বিহারে নির্মিত বুদ্ধমূর্তির নিরাপত্তা প্রত্যহ বিহারের নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক ও বিহারের আশপাশের এলাকা ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা বসানো হয়েছে। বুদ্ধমূর্তিটি বিহারে নির্মিত হলেও সাধারণ জনসাধারণের জন্য এটি পরিদর্শন উন্মুক্ত থাকবে। ‘প্রথম দিকে জুরাছড়ির শত শত মানুষ দূর-দুরান্তের ঝিরি থেকে পাথর এনে শ্রম দিয়েছেন। এরপর স্থানীয়ভাবে অর্থ উত্তোলন শুরু হয়। সরকারি কোন দান অনুদান ছাড়াই এটি নির্মিত হয়েছে। নিরিবিশি পরিবেশ নির্মিত সিংহ শয্যাটির চারপাশের পরিশে যে কারোর মন কেড়ে নিবে। সিংহ শয্যা বুদ্ধমুর্তিটি ইট, বালু, পাথর ও রডের উপর নির্মিত। নিচে অতিথি বসার জন্য সীমিত সংখ্যক কক্ষও করা হয়েছে।
এদিকে সিংহ শয্যা বুদ্ধমুর্তিটি উদ্বোধন উপলক্ষে তিনদিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, প্রথমদিন রয়েছে বুদ্ধমুর্তির উদ্বোধনসহ নানা আয়োজন, দ্বিতীয়দিন মঙ্গল ভিক্ষু সংঘের আসন গ্রহণ, অতিথিদের আসন গ্রহণ, দান কার্য সম্পাদন, প্রার্থনা এবং তৃতীয়দিন নানা আয়োজন ছাড়াও থাকছে আকাশ প্রদীপ প্রজ্জলন।
অনেকের মতে সিংহ শয্যা বুদ্ধ মুর্তিটি সবার জন্য উন্মুক্ত করা হলে দুর্গম জুরাছড়ি পর্যটনের সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত হওয়ার পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে।