প্রকাশঃ ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০৫:০৬:৫১
| আপডেটঃ ০৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ০৩:৫০:০২
বিশেষ প্রতিনিধি, সিএইচটি টুডে ডট কম,রাঙামাটি। 'আমরা চাইছি না আমাদের সরকারিভাবে ঋণ দেওয়া হোক, প্রণোদনা দেওয়া হোক। এ ধরণের কোনো আর্থিক সহায়তার কথাও আমরা বলছি না। শুধু বলেছি স্থানীয় পর্যটনের উন্নয়নে অবকাঠামোগত উন্নয়নের প্রয়োজন আছে, রাস্তাঘাট নির্মাণ সৌন্দর্যবর্ধন করা দরকার। মানুষের বিশ্রাম বা বসার স্থান ও শৌচাগার ব্যবস্থার দরকার। বলতে বলতে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের সঙ্গেও ব্যানার টানিয়ে মতবিনিময় সভা করেছি৷ এরপরও বরফ গলছে না, কারো কোনো উদ্যোগ নেই৷ এভাবে তো রাঙামাটির পর্যটনের মানোন্নয়ন সম্ভব নয়'
এভাবেই নিজের ক্ষোভ ঝেড়েছেন রাঙামাটির পর্যটন উদ্যোক্তা সুমেত চাকমা। সুমেতের দীর্ঘদিনের দাবি, স্থানীয় পর্যটনে সংশ্লিষ্টদের সুদৃষ্টি পড়ুক। কিন্তু বেসরকারি পর্যায়ে এ খাতের উন্নয়নে সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগ দৃশ্যমান না হওয়ায় হতাশায় সুমেতসহ অন্য উদ্যোক্তারাও। দীর্ঘদিন ধরে আশা বাঁধলেও নিরাশার বহু বসন্তই পার করেছেন তারা।
এটি শুধু উদ্যোক্তা সুমেত চাকমার কথাই নয়; রাঙামাটির পর্যটনসংশ্লিষ্ট সকলের ভাষ্যই এমন। তাদের অভিযোগ, জেলার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানগুলো ব্রিজ, কালভার্ট, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করলেও পর্যটনের উন্নয়নে যুগোপযোগী ভূমিকা রাখছে না। যদিও নিরাশার দিনে আশা দেখাচ্ছে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ৷ তবে বিগত দিনের পর্যটনখাতের বাজেট বরাদ্দ ও ব্যয়ের চিত্র ভিন্ন। উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানটি গত কয়েকবছর ধরেই জানিয়ে আসছে, রাঙামাটির পর্যটনের উন্নয়ন মেগাপ্রকল্পে আসছে।
আজ থেকে ঠিক ৫ বছরের আগের এদিনে (২৭ সেপ্টেম্বর) পর্যটন দিবসের অনুষ্ঠানে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমা জানিয়েছিলেন, পাহাড়ে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আগমনে আকৃষ্ট করতে ১২শ' কোটি টাকার মেগাপ্রকল্প আসছে। যদিও বিগত ৫ বছরেও সেই প্রকল্প আর আসেনি, প্রকল্পটি এখনো দৃশ্যত আলোরমুখ দেখেনি।
সম্প্রতি রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের বর্তমান পর্ষদের চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরীও শোনালেন একইকথা। খাগড়াছড়ি-বান্দরবানের চেয়ে রাঙামাটি পর্যটন অনেক পিছিয়ে আছে মন্তব্য করে তিনি বলেছেন, রাঙামাটির পর্যটনের উন্নয়ন নিয়ে আমারও মনোক্ষুন্ন। ১২শ' কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ফিজিক্যাল স্টাডি ও কনসালটেন্ট নিয়োগ করা হয়েছে।
এদিকে, জেলা পরিষদের এবারের ২০২২-২৩ অর্থবছরের ৮৩ কোটির টাকার বাজেট বরাদ্দে ১ শতাংশ হিসাবে ৬৮ লাখ টাকা পর্যটন খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তবে বিগত ২০২১-২২ অর্থবছরের ব্যয়ের হিসাবেও পর্যটনখাত ছিলো না।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাঙামাটির পর্যটন উদ্যোক্তা ও রাইন্যা টুগুন ইকো রিসোর্টের স্বত্ত্বাধিকারী ললিত সি. চাকমা বলেন, পর্যটনের উন্নয়নে প্রকল্প আসছে এটা ভালো কথা, সুখবর। কিন্তু এটা তো অনেক বছর ধরেই শুনে আসছি। কোনো অগ্রগতিত খবর তো পেলাম না। এভাবে মুখে-মুখে প্রকল্প আসছে আসছে বললে তো হবে না। মানুষ ও খাতসংশ্লিষ্টরা সরকারের আন্তরিক পদক্ষেপ ও দৃশ্যমান উদ্যোগ চান। আর জেলা পরিষদের বাজেটে নিয়ম করে বরাদ্দ রাখলেও এটি খরচ করেন না।
গড়ে উঠছে রেষ্টুরেন্ট নির্ভর পর্যটনকেন্দ্র:সাম্প্রতিককালে রাঙামাটির পর্যটনে বেসরকারি উদ্যোগে যেসব পর্যটনকেন্দ্রের যাত্রা শুরু হয়েছে; যার বেশিরভাগই রেস্টুরেন্ট নির্ভরশীল। ২০১৬ সালের পর থেকে রাঙামাটির আসামবস্তি-কাপ্তাই সড়কের বেশকিছু রেস্টুরেন্ট পর্যটনকেন্দ্র কেন্দ্রিক গড়ে উঠেছে। যেগুলোর মধ্যে অন্যতম বেরান্নে লেকশোর ক্যাফে, বড়গাঙ, বার্গী লেকভ্যালি, ইজোর অন্যতম। তবে ক্রমান্বয়ে কায়াকিং, কটেজ ও অন্যান্য বিনোদনের ব্যবস্থার উদ্যোগ নিলেও শুরু হয়েছে মূলত রেষ্টুরেন্ট দিয়েই।
চাপা ক্ষোভ রাঙামাটি শহরে, সাজেকে স্বস্তি:রাঙামাটি জেলা আবাসিক হোটেল-মোটেল মালিক সমিতি ও সাজেক কটেজ মালিক সমিতির হিসেবেই রাঙামাটি জেলায় ১৮১ হোটেল-মোটেল, কটেজ রিসোর্ট রয়েছে। তবে স্থানীয়ভাবে রাঙামাটি শহরকেন্দ্রিক আশানুরূপ পর্যটন ও বিনোদনকেন্দ্র গড়ে উঠায় পর্যটন হারাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে রাঙামাটির হোটেল ব্যবসায়ীদের।
জেলা শহরের বাণিজ্যিক এলাকা হিসেবে পরিচিত রিজার্ভবাজারের হোটেল মতিমহলের মালিক মো. শফিউল আজম বলেন, স্থানীয় পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে সংশ্লিষ্টদের যুগোপযোগী উদ্যোগ নেই। এভাবে পড়ে থাকলে দিন-দিন আরও পর্যটক হারাবে রাঙামাটি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাঙামাটি আবাসিক হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি মো. মঈনুদ্দিন সেলিম বলেন, যেভাবে আধুনিক হোটেল হচ্ছে তার তুলনায় বর্তমানে পর্যটক অনেক কম।বান্দরবান-খাগড়াছড়িতে পর্যটকের আকৃষ্ট করার জন্য নতুন নতুন পর্যটন স্পষ্ট হলেও রাঙামাটিতে হচ্ছে না। রাঙামাটির পর্যটনখাত নিয়ে সঠিক পরিকল্পনা না করার কারণে পর্যটন কমছে।
তবে আশার কথা শোনালেন সাজেক কটেজ মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক রাহুল চাকমা জন। তিনি জানান, সাজেকে নতুন করে আরও ২১টি কটেজ-রিসোর্ট সমিতির নিবন্ধনভুক্ত হয়েছে। সবমিলিয়ে সমিতির নিবন্ধনভুক্ত ১২৫টি কটেজ-রিসোর্ট আছে সাজেক ভ্যালিতে। আরও কিছু কটেজ নিবন্ধনের আওতায় আছে, নিবন্ধিত হলে সেগুলোও চালু করা হবে। মূলত সারাবছর ধরে সাজেকে পর্যটন আসায় নতুন নতুন কটেজ-রিসোর্ট গড়ে উঠছে। সাজেক উপত্যকায় মেঘ-পাহাড়ের মিতালি দেখতে দেশ-বিদেশের মানুষ ছুঁটে আসছেন। তবে সাজেকে বছরে সংখ্যায় কত পর্যটন আসেন সেই তথ্য জানাতে পারেননি জন।