সম্ভাবণা থাকলেও সদিচ্ছা ও পরিকল্পনার অভাবে পর্যটন খাতে পিছিয়ে রয়েছে রাঙামাটি

প্রকাশঃ ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০৮:২৮:১৩ | আপডেটঃ ০৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ০৪:৫৫:০২
সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। বিপুল সম্ভাবনা থাকলেও পর্যটন শিল্পে তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে পিছিয়ে রয়েছে, রাঙামাটি। পার্বত্য শান্তি চুক্তির পর অপরাপর ২ পার্বত্য জেলায় পর্যটকদের বিনোদনে নানা স্থাপনা নির্মিত হলেও রাঙামাটিতে ১৯৮৫ সনে ঝুলন্ত সেতু, পুলিশ বিভাগের উদ্যোগে পলওয়ে পার্ক, সেনাবাহিনীর আরণ্যক  আর কিছু দালান ছাড়া তেমন কোন কিছু নির্মিত  হয়নি। আর জন্য স্থানীয়রা বলছেন প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয় ও পরিকল্পনা ভুমি ও নিরাপত্তা থাকলে পর্যটন খাত আরো অনেক দুর এগিয়ে যেত। অন্যদিকে মেগাপ্রকল্প পাস হলে এই সংকটের সমাধান হবে বলে মনে করছে জেলা পরিষদ।

পাহাড় লেক নদী বেস্টিত পর্যটন শহর রাঙামাটি, পর্যটন শিল্পের ব্যাপক সম্ভবনা থাকলেও সঠিক পরিকল্পনা ও সদিচ্ছার অভাবে এখনো পর্যটন শিল্প হিসেবে রাঙামাটি শহর গড়ে উঠতে পারছে না।  তবুও পর্যটন মৌসুমে প্রতিনিয়ত শত শত  পর্যটক যান্ত্রিক শহরের একটু ক্লান্তি দুর করতে ছুটে আসেন হ্রদ পাহাড়ের শহর রাঙামাটিতে। সাপ্তাহিক ছুটি ও সরকারি বন্ধকে কাজে লাগিয়ে বিনোদনের খোঁজে পাহাড়ে আসা পর্যটকদের আনন্দ আর উচ্চলতা সাময়িক সময়ের জন্য হলেও ভূলিয়ে দেয় জীবনের নানা জটিলতা।  শহরের পর্যটন স্পট, সুভলং ঝর্ণা,পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্স ও সুখী নীলগঞ্জ এবং রাজবন বিহার এলাকায় প্রতিনিয়ত ভিড় জমাত বেড়াতে আসা পর্যটকরা। কিন্তু রাঙামাটিতে বেড়াতে আসা পর্যটকরা ২/১ রাতের বেশী থাকতে পারে না, এখানে পর্যটকদের জন্য কোন বিনোদনের ব্যবস্থা ও পর্যটন স্পট না থাকায পর্যটকরা সর্বোচ্চ ২ রাত থেকে  অন্যত্র চলে যান। রাঙামাটিতে বেড়াতে আসা কয়েকজন পর্যটক পাহাড় লেক নদীর অপরুপ সৌন্দর্য্যর কথা বললেও তারা অনেকটা হতাশও হয়েছেন দেখার মত আরো কিছু না থাকায়। ২০১৫ সনে পার্বত্য চুক্তি অনুযায়ী স্থানীয় পর্যটন শিল্প পার্বত্য জেলা পরিষদে হস্তান্তর করা হয়েছে, পরিষদ চেয়ারম্যান জানিয়েছেন পর্যটন শিল্প বিকশিত করতে তাদের নেয়া ১২শ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প নিলেও সেগুলো মন্ত্রনালয়ে আটকে আছে, তারা বর্তমানে ছোট ছোট প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। তবে বাহিরের উদ্যোগক্তারা আসতে চাইলে তারা নিরাপত্তা, ভুমি জটিলতার কারনে স্থাপনা নির্মাণ করতে পারেন না। কাপ্তাই -আসামবস্তী সড়কের একপাশে পাহাড় অন্য পাশে লেক দেখা যায়, এজন্য সেখানে ভিড় করে স্থানীয় ও বাহিরের পর্যটকরা, কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সিএনজি পুড়িয়ে দেয়া সেখানে পর্যটকের আনাগোনা কমে গেছে।  

রাঙামাটির রাইন্যা টুগুন ইকো রিসোর্টের মালিক ললিত সি চাকমা বলেন, সরকার দুইভাবে পর্যটন উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা করতে পারেন। একটি ঋণ দিয়ে, আরেকটি অবকাঠামো উন্নয়ন করে। কিন্তু এখানে কোনোটাই হচ্ছে না। একটা পর্যটন কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য রাস্তা করে দিলে সেটা কেবলমাত্র পর্যটন কেন্দ্রের নয় পর্যটকরাও উপকৃত হবেন। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে মানুষের বসার জায়গা, সড়ক সৌন্দর্য বর্ধন কান করতে পারে। রাঙামাটিতে বেড়াতে আসা মানুষের ফ্রেশ হওয়া, শৌচাগারের ব্যবস্থা নেই। এসব দিকে সংশ্লিষ্টদের মনোনিবেশ করা উচিত। নয়তো দিন দিন আরও অনেক পর্যটক হারাবে রাঙামাটি। বান্দরবান খাগড়াছড়ি রাঙামাটি থেকে পর্যটনে অনেক এগিয়ে আছে।

বার্গী লেকভ্যালির পরিচালক সুমেত চাকমা বলেন, ইচ্ছে ছিল অনেক বড় কিছু, পুঁজি সংকট অনেক কাজই করা যায় না। তবুও আমরা টাকা পয়সা সহযোগিতা চাই না। পর্যটনের উন্নয়ন করার জন্য জেলা পরিষদের সঙ্গে ব্যানার টানিয়ে বৈঠক করেছি। কিন্তু কিছুই হলো না। তারা তো পারে রাস্তার পাশে বসার মত জায়গা করে দিতে, যাত্রী ছাউনি বানিয়ে দিতে। এসবে তো পর্যটক ও সাধারণ মানুষ উপকারভোগী হবেন।

রাঙামাটি চেম্বার অব ইন্ড্রাষ্ট্রিজের সভাপতি আবদুল ওয়াদুদ বলেন, অপার প্রকৃতির সম্ভাবণাময় পর্যটনের শহর রাঙামাটি। এখানে লেক ও পাহাড় সব রয়েছে, শান্তি চুক্তির পর ১ বছর চাঁদাবাজি বন্ধ থাকলেও এরপর এখন ৪/৫টি গ্রæপ মিলে চাঁদাবাজি করে। পর্যটকদের নিরাপত্তা নেই, সিএনজি পুড়িয়ে দেয়া হয়। এসব করলে বাহিরের ব্যবসায়ী তো দুরের কথা স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ভয় পায় যে তাদের বিনিয়োগের টাকা উঠে আসবে কিনা। আমরা চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলেছি তারা নিরাপত্তা ও ভুমির মালিকানা চায় যেখানে তারা কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে, কিন্তু জায়গা কিনার অধিকার নাই বলে ভুমি সমস্যার কারণে কেউ পর্যটনে বিনিয়োগে উৎসাহিত হয় না, তারপরও আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি।

রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী বলেছেন, তারা একটি ১২শ কোটি টাকার মহা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছেন, সেটি এখনো অনুমোদন হয়নি, তবে তারা ছোট ছোট আকারে এলাকার সবুজ প্রকৃতিকে সমন্বয় করে কিছু প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ হাতে নিয়েছেন, এজন্য কাজ চলছে।  

 এবারের কর্মসূচিঃ
এবার 'পর্যটনে পুনর্ভাবনা'- এই প্রতিপাদকে সামনে রেখে যৌথ উদ্যোগে কাল ২৭ সেপ্টেম্বরে আন্তর্জাতিক পর্যটন দিবস উদযাপন করবে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ ও জেলা প্রশাসন। এদিন সকাল ১০টায় রাঙামাটি শহরের চম্পকনগর ওয়াপদা রেস্টহাউজের সামনে থেকে একটি বণার্ঢ্য র‌্যালি শুরু হবে। র‌্যালিটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা পরিষদ চত্বরে গিয়ে শেষ হবে।

র‌্যালি শেষে জেলা পরিষদ মিলনায়তন অনুষ্ঠিতব্য আলোচনা সভায় রাঙামাটির সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। এছাড়া জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, জেলা পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদ, জেলা পরিষদের মুর্খ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাঃ আশরাফুল ইসলাম, পরিষদ সদস্য ও পর্যটন বিষয়ক আহবায়ক নিউচিং মারমা।

সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions