প্রকাশঃ ০৭ এপ্রিল, ২০২২ ০৬:২৪:৪২
| আপডেটঃ ২১ নভেম্বর, ২০২৪ ০৭:০৪:৪১
কৌশিক দাশ, সিএইচটি টুডে ডট কম, বান্দরবান। পাহাড়ি জেলা বান্দরবানে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠি (পাহাড়ি) কিংবা বাঙালি-সবার কাছেই সজিনার জনপ্রিয়তা রয়েছে। অন্য সবজির তুলনায় দাম বেশি হলেও সুস্বাদু হওয়ায় লোকজন বাজার হতে সজিনা কিনে নেয়। বান্দরবানে পর্যটকদের কাছেও সজিনার চাহিদা থাকায় বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে সজিনা সবজি হিসেবে বিক্রি হতে দেখা যায়।
কৃষি অধিদপ্তর সূত্র জানায়,লম্বা ডাঁটা, সবুজ বর্ণের সজিনা। শীতপ্রধান দেশ ব্যতিত সারা পৃথিবীতেই সজিনা জন্মায়। বাংলাদেশ গরম (গ্রীষ্ম)কালে সজিনা বাজারে বিক্রি হয়। তবে সাম্প্রতিককালে বারোমাসী সবজি হিসেবে সজিনার কদর বাড়ছে। সজিনা গাছে সবসময় ফুল,কচি পাতা দেখা যায়। বসতবাড়ির জন্য সজিনা একটি আদর্শ সবজি। কম ব্যয়ে অধিক লাভের একটি সবজি। গাছে এটি ধরে, তাই নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। ঝামেলা কম ও দিন দিন চাহিদা বাড়ায় পাহাড়ে ব্যাপকভাবে সজিনার চাষ হচ্ছে।
বান্দরবানের পাহাড় ও পাহাড়ের পাদদেশে সজিনার চাষ ব্যাপকভাবে হচ্ছে। তবে বান্দরবান-থানচি সড়কে প্রধান সড়কের দুপাশে ম্রো ও বম জনগোষ্ঠির বসতি এলাকায় সারি সাজি সজিনা গাছ রয়েছে। বিশেষ করে লাইমিপাড়া হতে চিম্বুক পর্যন্ত সজিনা বিপুল গাছ গাছ রয়েছে। এছাড়া বান্দরবান-বাঘমারা-কানাইজু পাড়া এলাকাতে রাস্তার দুপাশের বসতবাড়ির আশে পাশে সজিনা গাছ দেখা যায়। সুয়ালক, গোয়ালিয়াখোলা, কুহালং এও সজিনা গাছ রয়েছে।
কৃষি বিভাগ ও পুষ্টিবিজ্ঞান সূত্রে জানা যায়, সজিনা কেবল ডাঁটা সবজি নয়, এটি ভেষজ পণ্য হিসেবেও ব্যবহার হয়। সাধারণত সজিনায় যে গুণ রয়েছে-কমলা লেবুর সমপরিমাণ ভিটামিন সি, গাজরের চেয়ে ১ দশমিক ৩ গুণ বেশি ভিটামিন, কলার চেয়ে দেড়গুণ বেশি পটাশিয়াম, দুধের চেয়ে সাড়ে তিন গুণ বেশি ক্যালসিয়াম রয়েছে।
সরেজমিন বান্দরবানের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে, কৃষি বিভাগ ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, বান্দরবানে সমতলের তুলনায় পাহাড়ি এলাকায় সজিনার চাষ বেশি। বাঙালিরা সজিনা চাষ করলেও ম্রো এবং বম জনগোষ্ঠির লোকজনও ব্যাপকহারে সজিনা চাষ করেছে।
বান্দরবান-চিম্বুক সড়কে সদর উপজেলার সুয়ালক ইউনিয়নের নোয়াপাড়ায় প্রায় ১৫টি পরিবারের সজিনা গাছ রয়েছে। একাধিক পরিবারের ৩০টির মত সজিনা গাছ রয়েছে।
নোয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা চিংচং ম্রো বলেন, তিনি দীর্ঘবছর যাবত সজিনা চাষ করে আসছেন। গত বছর তিনি ৫ মণ সজিনা পেয়েছিলেন। এবার আরও কিছু গাছ বেড়েছে, ফলনও ভালো হয়েছে। তাই এবার ২০ মণ সজিনা পাওয়ার আশা করছেন তিনি। তিনি জানান, প্রতিমণ সজিনা ৫ হাজার ২০০ টাকায় পাইকারী বিক্রি করছেন।
চিংচং ম্রো আরও বলেন, জুম চাষের জায়গায় ৬ বছর আগে ১৫০টি সজিনা গাছ লাগিয়েছিলেন। গত দুবছর ধরে গাছে ফলন ধরছে। গত বছর ফলন একটু কম হলেও এবার ভালো ফলন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন। তিনি জানান, গাছ হতে সজিনা সংগ্রহ করে বাড়ির সামনে রাস্তার পাশে মজুত করে রাখলেই হয়, চাহিদা বেশি থাকায় বাজারে আনতে হয় না। পাইকারী ব্যবসায়ীরা এসে কিনে গাড়ি করে নিয়ে যায়।
নোয়াপাড়ার পাশর্^বর্তী চেয়ারম্যান পাড়া, বসন্ত পাড়া এলাকায় জুম চাষের পাশাপাশি সজিনা গাছও লাগানো হয়। চাহিদা থাকায় দিন দিন সজিনার আবাদ বাড়ছে বলে জানান, ইন চং ম্রো, তংরে ম্রোসহ আরও কয়েকজন। ইন চংম্রো বলেন, সবজি হিসেবে খাওয়া হয়, আবার বিক্রি করেও ভালো অর্থ আয় হয়।
ইন চং ম্রো জানান, প্রতি বছর সজিনা ডাঁটা সংগ্রহ করার সময় যে ডাল কাটা হয়, সে ডাল রোপণ করলে ২-৩ বছরের মধ্যে সে ডাল গাছে পরিণত হয়ে ফলন দিতে শুরু করে।
সজিনা ব্যবসায়ী মো. মমিন মিয়া জানান, তিনি প্রতি মণ পাঁচ হাজার ২০০ টাকা দরে কিনে তা সরাসরি ঢাকা ও চট্টগ্রামে পাঠিয়ে দেন। প্রতি শনিবার ট্রাকে কমপক্ষে একশ মণ সজিনা পাঠান। অপর ব্যবসায়ী আবদুল মাবুদ বলেন, গত ৩০ বছর যাবত চিম্বুক-নীলগিরি এলাকা সবজি ব্যবসা করছে। তিনি মৌসুমী সবজি পাইকারী কিনে ঢাকা-চট্টগ্রামে প্রেরণ করেন। এতে করে স্থানীয় জনগোষ্ঠির সাথে তাঁর সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছে। দাম ও মান নিয়ে কখনও ঝামেলা হয়নি।
সজিনা গাছে শ্রমিক হিসেবে (ফলন সংগ্রহ) কাজ করেন লেং নোই ম্রো, তুম্পা ম্রোসহ প্রায় ১০ জন নারী শ্রমিক। সজিনার ডাঁটা সংগ্রহ বাবদ প্রতিজনে প্রতিদিন ৫০০ টাকা করে পারিশ্রমিক পেয়ে থাকেন। নিজ এলাকায় কাজ করে প্রতিদিন যে অর্থ আয় হয়, তাতে তাঁরা সন্তুষ্ট বলে জানান।
বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, বান্দরবানে সজিনা আবাদ দিন দিন বাড়ছে। গত বছর ২২ হেক্টরে সজিনা আবাদ হলেও চলতি বছর তা বেড়ে ২৫ হেক্টর জায়গায় আবাদ হয়েছে। গত বছর ৪৪ টন সজিনা উৎপাদন হয়েছিল, চলতি বছর আবাদ বৃদ্ধি ও ফলন ভালো হওয়ায় ৭৫ টন সজিনা উৎপাদন হবে বলে কৃষি বিভাগ আশা করছে।