সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। আসন্ন বিজু উৎসব বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন, রাঙামাটির লংগদুতে অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো। বিজু উৎসব উপলক্ষে শনিবার সকালে লংগদুর তিনটিলা গ্রামে ক্ষতিগ্রস্তদের সহানুভূতি জানাতে ২১৩ পরিবারের মধ্যে প্রত্যেক পরিবারকে ১ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা বিতরণ করেছে, খাগড়াছড়ি জেলা ত্রাণ সংগ্রহ ও বিতরণ কমিটি। কমিটির সদস্য সচিব ও খাগড়াছড়ির পেরাছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তপন বিকাশ চাকমার নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি টিম এসব আর্থিক সহায়তা বিতরণ করে। এ সময় লংগদু ক্ষতিগস্তদের ত্রাণ কমিটির আহবায়ক মণি শংকর চাকমা, লংগদু সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কলিন মিত্র চাকমা ও আটারকছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মঙ্গল কান্তি চাকমাসহ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের লোকজন উপস্থিত ছিলেন। এ সময় ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে আসন্ন বিজু উৎসব বর্জনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ২ জুন স্থানীয় যুবলীগ নেতা নুরুল ইসলাম নয়নের লাশ উদ্ধারকে কেন্দ্র করে রাঙামাটির লংগদু উপজেলা সদরের তিন পাহাড়ি গ্রাম তিনটিলা, বাইট্যাপাড়া ও মানিকজোড় ছড়ায় পাহাড়িদের বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। নয়নের লাশ উদ্ধার করা হয় ২০১৭ সালের ১ জুন খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা সড়কের চার মাইল এলাকা থেকে। সেটিকে কেন্দ্র করে পরদিন তিনটিলা, বাইট্যা পাড়া ও মানিকজোড় ছড়ায় সহিংস হামলার ঘটে। ওইদিন দুর্বৃত্তদের সহিংসতার আগুনে সম্পূর্ণ ভস্মিভুত হয় তিনটি গ্রামের ২১৩ পাহাড়ি পরিবারের বাড়িঘর। তবে সরকারি তালিকায় সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা ১৭৬। বাকিরা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত। ঘটনার দীর্ঘ ১০ মাস পরেও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ। সরকার বাড়িঘর তৈরি করে দেয়ার উদ্যোগ নিলেও ঠিকাদার কেউ টেন্ডার না নেয়ায় নতুন ঘর হয়নি কারও। আগামী ১৬ এপ্রিল তৃতীয় দফায় আহবান করা দরপত্রের সিডিউল জমার শেষ দিন বলে জানিয়েছে, লংগদু উপজেলা প্রশাসন।
ক্ষতিগ্রস্তরা বলেন, এবার তাদের কোনো উৎসব হবে না। উৎসবের পরিস্থিতি বা মানসিকতার কোনোটা-ই নেই। ক্ষতিগ্রস্ত ২১৩ পরিবারের সবাই বিজু উৎসব বর্জন করবেন। ১২ এপ্রিল পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের ঘরে ঘরে শুরু হচ্ছে তিন দিনব্যাপী উৎসব। এ উপলক্ষে তিন পার্বত্য জেলার বিভিন্ন স্থানে পালিত হচ্ছে নানা কর্মসূচি। কিন্তু লংগদুর সহিংসতা আগুনে ক্ষতিগ্রস্তদের উৎসবের আনন্দ বিষাদে পরিণত হয়েছে। আগুনে বাড়িঘরের সঙ্গে পুড়ে গেছে সব আনন্দ।
ইউপি চেয়ারম্যান কলিন মিত্র চাকমা, মঙ্গল কান্তি চাকমা, ক্ষতিগ্রস্ত মণি শংকর চাকমা, ভুবনিকা চাকমা, কেয়া চাকমা, দয়াল সাগর চাকমা, নিয়তি চাকমা, সুমিতা চাকমা, সুজিত চাকমা, চন্দ্রা খীসাসহ ক্ষতিগ্রস্তরা বলেন, বাড়িঘর নেই, কিছুই নেই- কী দিয়ে কোথায় কীভাবে উৎসব করব ? আমরা তো নিদারুণ কষ্টে। তাই আমাদের এবার কোনো উৎসব নেই। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত সবাই এক সঙ্গে উৎসব বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যদি বেঁচে থাকি, সরকার যদি বাড়িঘর করে দেয় তাহলে আগামীতে উৎসব করতে পারি কিনা দেখি। তারা আসন্ন বর্ষার আগেই বাড়িঘর করে দেয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান।
লংগদু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোসাদ্দেক মেহ্দী ইমাম বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ১৭৬ পরিবারের বাড়িঘর তৈরি করে দিতে এ পর্যন্ত তিন দফা টেন্ডার আহবান করা হয়েছে। পরপর দুই দফায় আহবান করা টেন্ডারে কোনো ঠিকাদার দরপত্র নেননি। তারা বলছেন, প্রাক্কলন অনুযায়ী কোনো লাভের সম্ভাবনা নেই। তাই টেন্ডারে অংশ নেননি কেউ। আগে প্রতিটি ঘর তৈরির জন্য ৪ লাখ ৭২ হাজার টাকার প্রাক্কলন ছিল। এবার তা বাড়িয়ে ৫ লাখ ৩৭ হাজার টাকা করা হয়েছে। এবারের তৃতীয় দফায় আহবান করা টেন্ডার জমা দেয়ার শেষ দিন আগামী ১৬ এপ্রিল। এরমধ্যে দুটি সিডিউল বিক্রি হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরাও চাই দ্রুত ঘর করে দিতে। তাই ঠিকাদারদের প্রতি টেন্ডারে অংশ নেয়ার আহবান করা হচ্ছে।
লংগদু উপজেলা ঠিকাদার কল্যাণ সমিতির সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, কিছু শর্তসাপেক্ষে এবার আমরা টেন্ডারে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। শর্তে কিছু কাজ করার পর চলতি বিল দিতে হবে এবং ১০ শতাংশ উচ্চ দরে কার্যাদেশ দিতে হবে।