শুক্রবার | ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

রাঙামাটি সিজিএম কোর্টে করোনা আর দূর্ণীতি রুখতে ‘বাক্স পদ্ধতি’ !

প্রকাশঃ ১০ এপ্রিল, ২০২১ ০৬:০৭:৫৪ | আপডেটঃ ১৮ এপ্রিল, ২০২৪ ১১:০৬:৪৬  |  ৮৯০
জিয়াউর রহমান জুয়েল, সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। দুটি বাক্স আর একটি নোটিশ বোর্ড দিয়ে চালু হওয়া ‘বাক্স পদ্ধতি’ পাল্টে দিয়েছে রাঙামাটি আদালতের সার্বিক চিত্র। আদালতের কর্মচারিদের সাথে সেবাপ্রার্থিদের সরাসরি যোগাযোগের প্রয়োজন পড়ছে না। সামাজিক দূরত্বও থাকছে অটুট। ফলে বৈশ্বিক মহামারি করোনা আর সর্বগ্রাসি ঘুষ দূর্ণীতি মোকাবেলায় দারুণভাবে কার্যকর হয়েছে এই ‘বাক্স পদ্ধতি’।

আইনজীবী, বিচারপ্রার্থি আর সেবাদাতাদের মধ্যেও প্রশংসিত হচ্ছে পদ্ধতিটি। সাধারণ মানুষের মাঝেও সাড়া ফেলেছে। ‘আদালতের দেয়ালও ঘুষ খায়!’ পুরনো প্রবাদটি মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে রাঙামাটির আদালতে। আইনজীবীরা মনে করছেন, পদ্ধতিটি সারা দেশের আদালতে চালু করা হলে আদালতের স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা আরো সহজ হবে।

সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বিভিন্ন কাজ করতে শিখিয়েছে কোভিড-১৯। দেশের বিচার অঙ্গনেও সামাজিক দূরত্ব ঠিক রাখতে ভার্চুয়াল শুনানীসহ বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেছে। গত ৪ আগস্ট রাঙামাটির চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এ.এন.এম. মোরশেদ খান আদালতে ‘বাক্স পদ্মতি’ চালু করেন। যা কোভিডের পাশাপাশি দূর্ণীতি মোকাবেলায় কার্যকর ভূমিকা রাখছে। সম্ভবত এই পদ্ধতি দেশে প্রথম।

আদালত ঘুরে দেখা গেছে, আদালত ভবনের প্রবেশ পথে বসানো হয়েছে দুটি ‘বাক্স’ আর একটি নোটিশ বোর্ড। কগনিজেন্স কোর্ট ও ট্রায়াল কোর্টের জন্য আলাদা আলাদা বাক্স রাখা হয়েছে। বাক্স দুটি ১১টি আদালতের যাবতীয় কার্যক্রমের ‘গেটওয়ে’ হিসেবে কাজ করছে।

জানা গেছে, সকালে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আইনজীবীরা মামলার যে কোন দরখাস্ত, দলিলপত্র, হাজিরা ও সময়ের আবেদনসহ যেকোন পদক্ষেপের কাগজ ঐ বাক্সে জমাদান করেন। একজন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের তত্ত্বাবধানে সে সব দরখাস্ত ও কাগজপত্র নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাক্স থেকে গ্রহণ করে সংশ্লিষ্ট কোর্টের পেশকারের নিকট পৌঁছে দেওয়া হয়। নাজিরের নেতৃত্বে একটি সহায়ক স্টাফ টিম প্রতিটি দরখাস্ত ও কাগজ দ্রুততার সাথে একটি রেজিস্টারে সংক্ষেপে এন্ট্রি করেন। এতে দরখাস্ত ও কাগজপত্র সমূহ বাছাই করা সহজ ও দ্রুততার সাথে হচ্ছে।

তবে কোন পক্ষ যথা সময়ে দরখাস্ত বা সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র বাক্সে জমা দিতে সক্ষম না হলে সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারকের এজলাসে গিয়ে প্রকাশ্য আদালতে আইনজীবী স্বয়ং অনুমতি নিয়ে সে দরখাস্ত দাখিল করতে পারেন। এতে বাক্স পদ্ধতির কারণে কোন জটিলতা সৃষ্টি হওয়ার অবকাশ থাকছেনা বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। সেবা গ্রহিতারা এখনো পর্যন্ত এর কোন নেতিবাচক দিক দেখেননি। বরং বিচারপ্রার্থি, তাদের আইনজীবী ও ক্লার্কগণ এতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

এছাড়া আদালতের প্রবেশ পথে নোটিশ বোর্ডে প্রতিদিনের কার্যতালিকা(কজ লিস্ট) টাঙিয়ে দেয়ার পদ্ধতি চালু করাতে বিচারপ্রার্থিরা কোর্টের কোন কর্মচারির শরণাপন্ন না হয়ে নিজেরাই সরাসরি মামলার পরবর্তী তারিখ জানতে পারছেন। এতে রাইটার-মোহরারের দৌরাতœও কমেছে। নাম বিক্রি করে অর্থও হাতিয়ে নিতে পারছেনা। ফলে বাক্সপদ্ধতি ও নোটিশ বোর্ডে কার্যতালিকা দুটোই আদালতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে যেমন সহায়তা করছে তেমনি ঘুষ-দূর্ণীতি দমনেও সহায়ক হয়েছে।

চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পেশকার মন্জুর আলম বলেন, ‘আগে হাজিরা টাইম পিটিশন দাখিলে পেশকারের নাম ভাঙিয়ে কেউ কেউ মক্কেল থেকে টাকা আদায় করতেন। এখন দরখাস্ত, হাজিরা বা কোন কাগজপত্র আমরা সরাসরি গ্রহণ করি না। তাই এসব কাজে আমাদের বদনাম হওয়ার কোন সুযোগ নেই’।

বিচারপ্রার্থি লংগদু মাইনী ইসলামাবাদ এলাকার বাসিন্দা মোস্তফা সরদার ও আব্দুল বারেক বলেন, ‘১০ বছর ধরে মামলা চালাচ্ছি। টাকা দেওয়ার পরও রাইটার-মোহরারের কারণে হয়রানী হই। এখন বাক্স পদ্ধতি এই হয়রানী বন্ধ করেছে’।

আইনজীবী সমিতির প্রাক্তন সভাপতি দীননাথ তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, ‘বাক্সপদ্ধতি ও নোটিশ বোর্ডে কার্যতালিকা আদালতে দৈনন্দিন হয়রানি রোধের এক কার্যকর উদ্ভাবন। করোনার কারণে চালু করা এ অভিনব পদ্ধতি যাতে সব সময় কার্যকর থাকে সে দাবি রাখছি’।

আইনজীবী সমিতির সাধারন সম্পাদক আবদুল গাফ্ফার মুন্না বলেন, ‘নোটিশ বোর্ডে কার্যতালিকা এবং বাক্স পদ্ধতি আইনজীবীগনের মাঝে দারুণ গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। রাঙামাটির চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এ.এন.এম. মোরশেদ খানের উদ্ভাবনী এ ব্যাবস্থা সর্বমহলে দারুণভাবে প্রসংশিত হচ্ছে। সারা দেশের আদালতে এ পদ্ধতি চালু করা হলে আদালতের স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা আরো সহজ হবে’।


এইমাত্র পাওয়া
আর্কাইভ
সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions