খাগড়াছড়িতে চেঙ্গী অববাহিকায় হবে মানুষের টাকায় হাইস্কুল

প্রকাশঃ ০৫ এপ্রিল, ২০২১ ০৯:৩৭:৩৮ | আপডেটঃ ১৯ এপ্রিল, ২০২৪ ০৬:১৫:১০
সিএইচটি টুডে ডট কম, খাগড়াছড়ি। খাগড়াছড়ির দুর্গম জনপদে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে এসেছেন জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস। সম্প্রতি তিনি খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার চেঙ্গী নদীর পশ্চিম অংশের দুর্গম ‘মায়ুঙ কপাল (হাতিমাথা)’ পাহাড়কে ঘিরে অনেকগুলো পাড়া গড়ে উঠেছে। শতভাগ ত্রিপুরা জনগোষ্ঠির দরিদ্র মানুষরাই জুম-জীবিকার সন্ধানে এই এলাকায় কয়েক’শ বছর ধরে বসবাস করে আসছে।

সেই এলাকা সফরকালে জেলা প্রশাসক এলাকার নানা শ্রেণী-পেশার মানুষের সাথে কথা বলেন। এসময় তিনি জানতে পারেন, বিশাল এলাকায় ১০/১২টি গ্রামে তিনটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও কোনই উচ্চ বিদ্যালয় নেই। এসব এলাকার প্রায় শতভাগ মানুষের জীবিকা পাহাড়ি টিলাভূমিতে জুমচাষ। অল্পকিছু মানুষ নিজেদের জমিজমাতে ধানসহ অন্যান্য ফসলের আবাদ করতে পারেন। হাতে গোনা কয়েকজন সরকারি চাকুরিজীবি বাদ দিলে পুরো এলাকার নারী-পুরুষরা দিনে আনে দিনে খাওয়া। ইচ্ছে থাকলেও ছেলে-মেয়েদের দূরের স্কুলে পাঠাতে পারেন না।

এলাকাবাসীর মুখে এসব কথা শোনার পর জেলা প্রশাসক নিজেও ওই এলাকায় একটা মাধ্যমিক স্কুলের প্রয়োজন বোধ করেন।

তিনি জানতে পারেন, স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য পেরাছড়া ইউপি চেয়ারম্যান তপন ত্রিপুরাকে আহ্বায়ক করে বিদ্যালয় বাস্তবায়ন কমিটি করা হয়েছে।

তপন ত্রিপুরা জানান, রোববার ‘সিয়াই হারুম (চেঙ্গী অববাহিকা) উচ্চ বিদ্যালয় বাস্তবায়ন কমিটি’র কয়েকজন ডেকে নেন জেলা প্রশাসক। এসময় তিনি এলাকাবাসীর প্রত্যাশিত বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অগ্রগতির খোঁজখবর নেন। পরে তিনি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রাথমিক তহবিল হিসেবে ৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকার চেক প্রদান করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর চেঙ্গী অববাহিকার বেশ কটি গ্রামে একযোগে বিদ্যুৎ সংযোগ উদ্বোধনী সভায় সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা যোগ দেন। সভায় তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্যে একটি জুনিয়র স্কুল প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগ নিতে এলাকাবাসীকে তাগাদা দেন। এবং সে উদ্যোগে তাঁর সহযোগিতা অব্যাহত থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

এলাকার বাসিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশাপ্রিয় ত্রিপুরা জানান, সংসদ সদস্যের নির্দেশনার পর এলাকার সচেতন-অপেক্ষাকৃত সামর্থবান-সরকারি চাকুরিজীবি-জনপ্রতিনিধি এবং শিক্ষানুরাগীরা মিলে বিদ্যালয় তহবিলের জন্য শ’দেড়েক মানুষের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু তার আগেই জেলা প্রশাসকের অনুদান বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগকে উদ্যম ও প্রেরণা যোগাবে।

পেরাছড়া ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান ও খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সঞ্জীব ত্রিপুরা জানান, খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার পেরাছড়া ইউনিয়নের অচাইপাড়া, কাপতলা, ভাঙ্গামুড়া, পল্টনজয় পাড়া, বেলতলী পাড়া, খামারপাড়া, বাঙালকাঠি, লারমা পাড়া, চেলাছড়া, হাপংপাড়া এবং ভোলানাথ পাড়া অবস্থিত। এসব এলাকায় তিনটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও কোন জুনিয়র হাইস্কুল নেই।

বিশিষ্ট সমাজসেবী ও ব্যবসায়ী এস. অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরা জানান, হাইস্কুলবিহীন এলাকা হবার কারণে এই এলাকায় ঝড়ে পড়ার হার অনেক বেশি। তাই মধ্যবর্তী স্থানে একটি আবাসিক বিদ্যালয় হলে সরকারের পাশাপাশি তিনিও সহযোগিতা প্রদান করবেন।

খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস জানান, জেলার হাইস্কুলবিহীন অনেক এলাকায় গিয়েছি। এরমধ্যে এই এলাকাটিকে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য অনেক সম্ভাবনাময় মনে হয়েছে। তাই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে পাঁচ লক্ষ টাকার চেক দেয়া হয়েছে। প্রয়োজনে আরো সহযোগিতা প্রদান করা হবে।

সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions