ফাইভ ষ্টার হোটেল নির্মাণ নিয়ে বান্দরবান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের বক্তব্যের প্রতিবাদ পিসিপির

প্রকাশঃ ২৫ নভেম্বর, ২০২০ ০৪:৫০:১৩ | আপডেটঃ ২৮ মার্চ, ২০২৪ ০১:৩২:৪৫
সিএইচটি টুডে ডট কম ডেস্ক। গত ২২ নভেম্বর ২০২০ তারিখে বান্দরবানের চিম্বুক পাহাড়ের বুকে ম্রো আদিবাসীদের জায়গা দখল ও উচ্ছেদ করে ফাইভ স্টার হোটেল নির্মাণ ও পর্যটন স্থাপনা নিয়ে নিজের দায় এড়াতে “চিম্বুক পাহাড়ে পর্যটন হোটেল স্থাপনের বিষয়ে”বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা সংবাদ সম্মেলনের বিষয়টি পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের নজরে এসেছে।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “তর্কিত জমিটি (নাইতং পাহাড়) লামা উপজেলাধীন ৩০২নং লুলেইন মৌজায় অন্তর্ভুক্ত। উক্ত জমিতে পরিষদের তত্বাবধানে কৃষি প্রযুক্তি ও উন্নত চাষাবাদ পদ্ধতি প্রদর্শনীর মাধ্যমে সেখানকার স্থানীয় জনগণের কৃষিভিত্তিক জীবিকা নির্বাহের পথ সুগম করার লক্ষ্যে স্থানীয় ম্রো নেতৃবৃন্দের সাথে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে পরিষদের নামে বন্দোবস্তী নেয়ার প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়।” তিনি আরো উল্লেখ করেন, পর্যাপ্ত তহবিল না থাকায় পরিষদ কর্তৃক প্রয়োজনীয় উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে না পারায় বান্দরবান সেনানিবাসের অনুকূলে পর্যটনের জন্য ০১ জানুয়ারি ২০১৬ হতে ৩১ ডিসেম্বর ২০৫৫ পর্যন্ত ৪০ বছরের জন্য উক্ত জমিটি ১৮টি শর্তাবলী সাপেক্ষে লীজ প্রদান করা হয়।

প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লার উক্ত বক্তব্য থেকে এটা স্পষ্ট যে, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ আদিবাসী ম্রো জনগোষ্ঠীর সাথে সরাসরি প্রতারণা করেছে। কেননা কৃষি প্রযুক্তি ও উন্নত চাষাবাদ পদ্ধতি প্রদর্শনীর মাধ্যমে সেখানকার স্থানীয় জনগণের কৃষিভিত্তিক জীবিকা নির্বাহের পথ সুগম করার লক্ষ্যে স্থানীয় ম্রো জনগোষ্ঠীর সাথে আলাপ-আলোচনাক্রমে উক্ত তর্কিত জমিটি পরিষদের দখলে নেয়া হয়েছে। কিন্তু সেই লক্ষ্যে কাজে না লাগিয়ে পরিষদ হীনস্বার্থে ‘পর্যটনের জন্য’ সেনাবাহিনীর নিকট ৪০ বছরের মেয়াদে লীজ দেয়া হয়েছে। জমিটি দখলে নেয়ার পর পার্বত্য জেলা পরিষদ ‘কৃষি প্রযুক্তি ও উন্নত চাষাবাদ পদ্ধতি প্রদর্শনীর মাধ্যমে সেখানকার স্থানীয় জনগণের কৃষিভিত্তিক জীবিকা নির্বাহের পথ সুগম করার’ উদ্দেশ্যে ব্যবহার না করে, আদিবাসী ম্রো জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকার জন্য ক্ষতিকারক, আদিবাসী জুম্ম জনগণের জাতীয় অস্তিত্ব ও সংস্কৃতির জন্য ধ্বংসাত্মক, জুম্ম জনগণের প্রথাগত ভূমি অধিকার পরিপন্থী তথা পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি ও চুক্তি মোতাবেক প্রণীত পার্বত্য জেলা পরিষদ আইনের সাথে সাংঘর্ষিক হওয়া সত্ত্বেও পর্যটনের জন্য সেনাবাহিনীকে লীজ দেয়া নি:সন্দেহে ম্রো জনগোষ্ঠীর সাথে প্রতারণার সামিল। আদিবাসী ম্রো জনগোষ্ঠী, জুম্ম জনগণ ও দেশের মানবতাবাদী ব্যক্তিবর্গসহ পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ তা কখনোই মেনে নিতে পারে না।

সংবাদ সম্মেলনে চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা মহোদয় নিজেদের জনস্বার্থ বিরোধ কার্যকলাপ ধামাচাপা দিতে সাফাই গেয়েছেন যে, বান্দরবান জেলা পরিষদ আইন অনুযায়ী বান্দরবানের আদিবাসী তথা স্থায়ী বাসিন্দাদের আর্থ সামাজিক-সাংস্কৃতিক উন্নয়ন, শিক্ষা ও জেলার সার্বিক উন্নয়নের কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু  চুক্তির ২৩ বছর হতে চললেও পার্বত্য জেলা পরিষদ গণতান্ত্রিক না হয়ে ক্ষমতাসীন সরকারের লুটপাটের একটা আস্তানায় পরিণত হয়েছে। কোন সময় পার্বত্য জুম্ম জনগণের স্বার্থে পরিচালিত হয়নি। প্রাণ-প্রকৃতি ধবংস করে, ম্রো অধিবাসীদের জীবনকে বিলুপ্তির দিকে ঠেলে দিয়ে শিক্ষা, চিকিৎসা নিশ্চিত না করে পর্যটনের নামে উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করা কখনোই স্থানীয় ম্রো জনগোষ্ঠীর কল্যাণমূলক হতে পারে না।

প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে আলো বলা হয়, পার্বত্য জেলার আইন অনুযায়ী জেলার কার্যক্রম পরিচালনা করার এখতিয়ার থাকলেও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি মোতাবেক পার্বত্য অঞ্চলে সকল উন্নয়ন কার্যক্রম ও পরিষদের কার্যাবলি সম্পাদনের ক্ষেত্রে আঞ্চলিক পরিষদের সাথে আলোচনার বিধান থাকলেও তিনি তা করেননি। যা সম্পূর্ণ চুক্তি বিরোধী ও জুম্ম স্বার্থ পরিপন্থী কার্যক্রম।

একই সাথে চিম্বুকের বুকে ম্রো আধিবাসীদের জায়গা দখল করে ফাইভ স্টার হোটেল ও পর্যটন স্থাপনা নির্মাণের লিজ বাতিল ও সকল প্রকার পর্যটন স্থাপনা বন্ধ করার দাবি জানিায়েছে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ।

পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের দপ্তর সম্পাদক মিলন কুসুম তঞ্চঙ্গ্যা পাঠানো এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions