মাটিরাঙায় ডিলারের বিরুদ্ধে ৪ বছর ধরে প্রতিবন্ধীসহ হতদরিদ্রের চাল আত্মসাতের অভিযোগ

প্রকাশঃ ১০ জুন, ২০২০ ০৭:৪২:২৫ | আপডেটঃ ০২ মে, ২০২৪ ১১:৫৭:২৫
সিএইচটি টুডে ডট কম, খাগড়াছড়ি ॥ খাগড়াছড়িতে  খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির আওতায় হতদরিদ্রদের চাল না দিয়ে চার বছর তা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে ডিলার মোমিন মিয়ার বিরুদ্ধে ।

কার্ডধারীদের অভিযোগ চার বছর আগে ওএমএসের কার্ড থাকলেও তারা চাল পাননি। কয়েক দফায় চাল পাওয়ার পর কার্ডধারীদের জানিয়ে দেয়া হয় তাদের কার্ড বাতিল হয়ে গেছে। এছাড়া তালিকায় এক ব্যক্তির নাম দুই বার দিয়েও সে চাল আত্মসাৎ করেছে। নতুন ডিলার নিয়োগের পর বঞ্চিতদের নাম প্রকাশ পায়। খাগড়াছড়ির মাটিরাঙা গোমতি ইউনিয়নে এই ঘটনা ঘটে।

প্রান্তিক হতদরিদ্র মানুষের সহায়তায় চার বছর আগে সরকার ওএমএসের কার্ড চালু করে। ৩০ কেজি করে বছরে ৬ বার চাল দেয়া হয়। প্রত্যেক কার্ড ১০ টাকার বিনিময়ে প্রতি কেজি চাল ডিলারের কাজ থেকে ক্রয়  করে।  খাগড়াছড়ির মাটিরাঙায় সরকারের ভর্তুকি দেয়া  খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির ( ওএমএস) তালিকায় নাম থাকার পর ৪ বছর ধরে বঞ্চিত হয়েছেন প্রতিবন্ধীসহ ৯ কার্ডধারী।

তালিকায় নাম থাকার পরও তাদের জানিয়ে দেয়া হয়  কার্ড বাতিল হয়ে গেছে। চার বছর ধরে সরকারি খাদ্য সহায়তা বঞ্চিত হয়েছে হতদরিদ্র এসব মানুষ।  অথচ এসব কার্ডের  বিপরীতে ৪ বছর ধরে চাল আত্মসাত করেছে ডিলার। করোনাকালে  কালো বাজারে চাল চুরির অপরাধে অভিযুক্ত ডিলার মমিনের ডিলারশীপ বাতিল হয়। নিয়োগপ্রাপ্ত নতুন ডিলার জানান , বঞ্চিত কার্ডধারীদের জানান তালিকায় তাদের নাম রয়েছে। চার বছর ধরে চাল না পাওয়ায়  সুবিচার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ করেছে বঞ্চিত কার্ডধারীরা।

মাটিরাঙার গোমতি ইউনিয়নের ওএমএস এর কার্ডধারী প্রতিবন্ধী যগুনবালা ত্রিপুরা। ২০১৬ সালে খাদ্য বান্ধব কমূসচির তালিকায় তার নাম অর্ন্তভুক্ত করা হয়। তবে এক কিস্তিতে চাল পাওয়ার পর জানিয়ে দেয়া হয় তার কার্ডটি বাতিল হয়ে গেছে। প্রতিবন্ধীর ঐ নারী ভাই রনজিত ত্রিপুরা এই নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ করেছে । অভিযোগে উল্লেখ করা হয়,‘ ২০১৬ সালে ওএমএস কার্ডে ১৪৯ নং রেশক কার্ড দেয়া। কার্ড দেওয়ার পর আমি এক ডিউ রেশন উত্তোলন করি এবং কার্ডটি ডিলার মোমিন মিয়া জমা রাখে। পরে ডিলার জানায় আমার কার্ডটি কর্তন হয়েছে। তবে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত ডিলার রেহান উদ্দিন জানান,‘ তালিকায় আমার নাম রয়েছে। বিগত  ৫ বছর  ধরে আমার কার্ড দিয়ে কে রেশন উত্তোলন করল,আমার কার্ড ও উত্তোলনকৃত রেশনের চাল ফেরত চাই।’

এভাবে প্রায় ৯জন কার্ডধারী গত চার বছর ধরে সরকারি খাদ্য সহায়তা থেকে বঞ্চিত হয়। এমন কি একবার চাল তুললে একাধিক টিপসই নেয়া হয়। চার বছরের প্রত্যেক কার্ডধারী ২৪ বার চাল পাওয়ার কথা থাকলেও পেয়েছে মাত্র কয়েকবার মাটিরাঙা গোমতি বাজার সংলগ্ন গ্রামের বাসিন্দা আবুল হোসেন জানান,‘‘ আমি চাল পেয়েছি মাত্র কয়েকবার । একবার চাল তুলে নিলে ২-৩ টি টিপসই নিয়ে রাখত। এরপর অনেক আর চাল পাইনি। নিয়মিত চাল পায়নি অনেকে।

তালিকা পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে এক ব্যক্তির একাধিক নাম রয়েছে । তালিকায় ১৪২ এবং ১৬৬ নং কার্ড দেয়া হয়ে আব্দুল কাদেরকে। এভাবে ভুয়া কার্ড দেখিয়ে চাল আত্মসাৎ করেছে ডিল্রা।

করোনাকালে কালোবাজারে খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির চাল বিক্রির অপরাধে ডিলারশীপ বাতিল হয় মোমিনের। এই ঘটনায় তার বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের করা হয়। এই ঘটনার পর থেকে পলাতক তিনি।  নিয়োগপ্রাপ্ত নতুন ডিলার মো.রেহান উদ্দিন জানান,‘মাস্টার রোলে অর্থাৎ তালিকায় এদের নাম আছে কিন্ত তাদের কাছে কার্ড নাই। তারা কেন এতদিন চাল পায়নি সেটা আমি জানি না ।

এদিকে গোমতি ইউনিয়নে ৩৩৫ জনের ওমএমএস তালিকায় প্রনয়নে শুরু থেকে অসঙ্গতি ছিল বলে জানান সচেতন নাগরিকরা। তালিকায় এক ব্যক্তির নাম দুবার দিয়ে সেই চালও আত্মাসৎ করেছে ডিলার।গোমতি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো.তোফাজ্জল হোসেন জানান‘‘২০১৬ প্রনীত তালিকায় শুরু থেকে নানা অসঙ্গতি ছিল। তৎকালীন জেলা প্রশাসক সংশোধনের জন্য নির্দেশ দিলেও সেখানে  স্বচ্ছলদের নাম দেয়া হয়েছে। এতে অনেক  হতদরিদ্র  মানুষ  সরকারি সহায়তা থেকে বঞ্চিত হয়েছে।  আবার অনেক কার্ডধারী চাল পাননি।  ’’

তবে অভিযুক্ত ডিলার মমিন মিয়া চাল আত্মসাতের বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি জানান কার্ড দেয় চেয়ারম্যান মেম্বার। আমি কার্ড অনুযায়ী সবাইকে চাল দিয়েছি। এসব তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। আমার কাছে কোন কার্ড জমা নেই।

অভিযুক্ত ডিলারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বভীষণ কান্তি দাশ জানান ‘‘ কালো বাজারে চাল বিক্রির অপরাধে ঐ ডিলারের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে । তার ডিলারশীপও বাতিল করা হয়েছে। যেহেতু কার্ডধারীরা চাল পায়নি বলে অভিযোগ করেছে সেটিও মামলায় সংযুক্ত করা হবে।

সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions