পাহাড়ে পানির কষ্ট দুর করছে জিএফএস

প্রকাশঃ ১৪ মার্চ, ২০২০ ০৫:২৫:৪০ | আপডেটঃ ১৯ মে, ২০২৪ ০২:৫৫:১৬
বিশেষ প্রতিনিধি, সিএইচটি টুডে ডট কম,  রাঙামাটি। পাহাড়ে নারীদের পানি আনার কষ্ট দুর করছে গ্রাভিটি ফ্লো সিস্টেম (জিএফএস)। উচু পাহাড়ের প্রাকৃতিক বনের মাঝে ছড়া বা ঝর্ণা মুখে নল বসিয়ে দীর্ঘ নল দিয়ে পানি আনা হয় গ্রামের কোন এক উচু পাহাড়ে। সেখানে তৈরি করা হাউজে পানি ফিল্টার হয়ে নলের মাধ্যমে পানি চলে যায় গ্রামের সবার ঘরে ঘরে। এভাবে পাহাড়ে দীর্ঘ যুগের পানি আনার কষ্ট দুর হচ্ছে।

রাঙামাটি সদর উপজেলার কুতুকছড়ি ইউনিয়নের ডুলুছড়ি হেডম্যান পাড়া। এ পাড়ার পশ্চিমে চংড়াছড়ি মোন (উচু পাহাড়)। এ মোনের একটি ছড়া থেকে নলের মাধ্যমে পানি আনা হয় গ্রামে। গ্রামের রাহুল চাকমার বাড়ি পাশে উপ পাহাড়টিতে বানোনো হয় বিশাল হাউজ। এ হাউজে পানি জমা হওয়ার পর পানিটি ফিল্টার হয়ে পুরো গ্রামের চলে যায়। এতে পানির কষ্ট দুর হয়েছে গ্রামবাসীর।


গ্রামের নয়ন কুমারি চাকমা (৫০) বলেন, এ জিএফএস আমাদের গ্রামের পানির কষ্ট দুর করেছে। সেজন্য আমি গ্রীন হিলকে (এনজিও) ধন্যবাদ জানাই। এটি না হওয়ার আগে আমাদের সবার পানির কষ্ট ছিল।

এখন সবার ঘরে ঘরে পানির টেপ। টেপ ঘুরালে পানি পড়ছে। কাউকে আর পানি সংগ্রহের জন্য সকাল সকাল দৌড়াতে হয় না। একই গ্রামের সিন্ধুরাজ চাকমা (৪৫) বলেন, এটি খুবই একটি সুন্দর প্রকল্প। কিন্ত অনেক এলাকা এখনো পানির কষ্ট দেখা যায়।


আবাসিক এলাকার স্মরবিন্দু চাকমা (৪৫) বলেন, জিএফএসের পানি দিয়ে বাড়ির আঙিনায় সবজি চাষ করা সম্ভব হচ্ছে। যা আগে ভাবাও যেত না। পাশাপাশি জমিতেও পানি দেওয়া যাচ্ছে।

সাপছড়ি ইউনিয়নে শালবন এলাকার ফুরোমোন পাড়া গ্রামের সীমা চাকমা (৪০) বলেন, আমাদের গ্রামের পানির কষ্ট সারা বছর থাকত। জিএফএসের পানির ট্যাব ঘরের ভিতরে পানি এনে দিয়েছে।

পাহাড়ে চিরায়িত চিত্র ছিল ভোরে কিংবা কাজ শেষে বাড়ি ফিরে পানি আনতে বহুদুর পাহাড়ি পথ পাড়ি দিত পাহাড়ি নারীরা। এতে সময় লাগত। পানি ভর্তি হাড়ি পাতিল নিয়ে পাহাড় উঠতে নামতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে গিয়ে মারাত্মকভাবে আহত হত অনেকে। অনেকের পঙ্গুত্বও বরণ করতে হত। শুষ্ক মৌসুমে পানি আনতে কষ্টের সীমাও ছাড়িয়ে যেত।

১৯৯৭ সালে পার্বত্য চুক্তির স্থানীয় এনজিও গ্রীন হিল, এনজিও ফোরাম, প্রোগ্রেসিভ  জিএফএস নির্মাণে কাজ করে। বর্তমানে শুধু  জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর এ কাজটি করছে। উভয়ের মধ্যে সমন্বয় না থাকায় জেলায় মোট কতটি জিএফএস নির্মাণ করা হয়েছে এর সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি।


জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল রাঙামাটি অফিসের তথ্যমতে জেলায় ২৫টি জিএফএস আছে। এর মধ্যে কয়েকটি নির্মাণাধীন।
তবে বর্তমানে জিএফএস নিয়ে এনজিওগুলোর কোন  কার্যক্রম নেই।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তথ্যমতে ২০১৭ সালে জেলা জুড়ে পাহাড় ধসের ঘটনায় অনেকে জিএফএস নষ্ট হয়ে যায়। এগুলো অধিকাংশ সংস্কারের আওতায় আসেনি। তাছাড়া অনেকেগুলো পানির উৎস সম্পূর্ণ ধংস হয়ে যায়।
রাঙামাটি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ সহকারী প্রকৌশলী সুব্রত বড়–য়া বলেন, জিএফএসের পানি পুরোপুরি বিশুদ্ধ হয়ে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। এক সময় সরাসরি ছড়া বা কুয়া থেকে পানি সংগ্রহ করা হত। এগুলো পানে ঝুঁকি থাকে। কিন্তু জিএফএস এ ঝুঁকি থাকে না। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল পাহাড়ে প্রাকৃতিক ছড়া, ঝর্ণা পানি প্রবাহ ঠিক রেখে জিএফএস করছে। পানির মুল উৎসগুলোর আশপাশে যেন বন উজাড় করা না হয় সেজন্য মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে।



বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা প্রোগ্রেসিভের নির্বাহী পরিচালক সুচরিতা চাকমা বলেন, প্রোগ্রেসিভ ২০০৪ সালে জিএফএস কাজ শুরু করেছিল। বর্তমানে কোন এনজিওর জিএফএস কার্যক্রম নেই। তিনি বলেন, এখনো অনেক এলাকায় পানির কষ্ট রয়ে গেছে। এসব এলাকাগুলোতে জিএফএস নির্মাণ করলে কষ্ট দুর হবে। সরকারী উদ্যোগে খুব কম জিএফএস করা হচ্ছে। এটি আরো বাড়ানো গেলে মানুষের পানির কষ্ট দুর হবে।

রাঙামাটি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী অনুপম দে বলেন, আমরা এখন পাহাড়ের ভুপৃষ্ঠের উপরিভাগের পানি ব্যবহারের উপর গুরুত্ব দিচ্ছি। এরই আলোকে জিএফএসের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এর মাধ্যমে  অনেক এলাকায় পানি সরবরাহের আওতায় আসে।

পাহাড়ে এমনও এলাকা আছে রিংওয়েল, টিউবওয়েল কোন কিছু করা যায় না। এসব এলাকায় জিএফএসের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করা হবে। এজন্য জরিপ করা হচ্ছে। যেসব পাহাড়ি এলাকায় পানির উৎসগুলোতে সারা বছর পানি থাকছে এসব এলাকা চিহ্নিত করে জিএফএসের আওতায় পানি সরবারহ করা হবে। মুলত উচু এলাকা থেকে নলের মাধ্যমে পানি নিচের এলাকায় নামিয়ে আনা হয়।  যেন পানির প্রবাহ থাকে। এলাকা ভিত্তিক একটি জিএফএস নির্মাণে ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকা ব্যয় হয়। তিনি বলেন এনজিওগুলো বিক্ষিপ্তভাবে জিএফএস করেছে এ তথ্য আমাদের কাছে নেই। আমার জানামতে  রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এনজিও জিএফএসগুলো অধিকাংশ অকেজো হয়ে আছে।

সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions