প্রকাশঃ ০৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২০ ০৭:০১:০৮
| আপডেটঃ ০১ নভেম্বর, ২০২৪ ০৪:২৭:১৫
ষ্টাফ রিপোর্টার, রাঙামাটি। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয়নের অভাবের কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়ন কর্মকান্ড ধীর গতিতে এগুচ্ছে। সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর কাজ তরান্বিত করার জন্য স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয় জরুরী। না হলে পিছিয়ে থাকতে পার্বত্য চট্টগ্রাম। কথাগুলো বলেছেন তিন পার্বত্য জেলার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে তিন পার্বত্য জেলার জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী তাজুল ইসলাম এমপির মতবিনিময় সভায় এ সব কথা বলেন জনপ্রতিনিধিরা।
তারা আরো বলেন, পার্বত্য মন্ত্রনালয় গঠিত হয়েছে, পার্বত্য এলাকার উন্নয়নের জন্য কিন্তু বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ের বিভিন্ন হস্তান্তরিত বিভাগ শান্তি চুক্তি মানছে না, উন্নয়ন কাজে সমন্বয়হীনতার পার্বত্য এলাকায় প্রত্যাশিত উন্নয়ন ঘটছে না, পাহাড়ে উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার স্বার্থে জনপ্রতিনিধিরা পার্বত্য মন্ত্রালয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের নিয়ন্ত্রনে থাকা পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ এবং ইউনিয়ন পরিষদকে পার্বত্য মন্ত্রনালয়ে ন্যস্ত এবং পার্বত্য মন্ত্রনালয়ের বরাদ্দ দ্বিগুন করার দাবি জানান।
জনপ্রতিনিধিদের দাবির সাথে একাত্বতা প্রকাশ করেন রাঙামাটির সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার এমপি।
মতবিনিময় স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, সমস্যা আছে সমস্যা থাকবে, সমস্যার মধ্যে দিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, পার্বত্য এলাকায় কাজ করতে গিয়ে যে সমস্যাগুলো সৃষ্টি হয়েছে আমরা তার আইনগত দিকসহ সব কিছু বিবেচনা আমরা একটা সুষ্ঠ সমাধানে যেতে পারি।
মন্ত্রী আরো বলেন, ‘মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে’ এমন দাবি করে মন্ত্রী বলেন, আন্দোলন সংগ্রাম বাদ দিয়ে দেশের মানুষ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ আছেন বলেই বাংলাদেশ এতদূর আসতে পেরেছে’। তবে উন্নয়ন কর্মকান্ডে সীমাবদ্ধতা কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সমস্যা ও সমাধান এই দুটি বিষয় নিয়েই ব্যক্তিজীবন, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র চলে। পুরোপুরি সমাধান হয়না; নতুন সমস্যা আসবে। রাতারাতি সব সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়’।
মত বিনিময় সভায় জনপ্রতিনিধিরা তাদের দফতরের বিভিন্ন সমস্যা মন্ত্রীকে খুলে বলেন এবং সমাধান প্রত্যাশা কামনা করেন। মতবিনিময় শুরুর আগে পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থানীয় সরকার পরিষদগুলোর বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরেন রাঙামাটি জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশীদ।
স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়ের সচিব হেলালুদ্দিনের সভাপতিত্বে মত বিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন পার্বত্য মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈ সিং, রাঙামাটি সংসদীয় আসনের এমপি দীপংকর তালুকদার, রাঙামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা, বান্দরবান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্যশেহ্লা, খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী, জুরাছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান সুরেশ কুমার চাকমা, মানিকছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিন, বান্দরবান সদর উপজেলা চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর, বান্দরবান পৌর মেয়র ইসলাম বেবী।
এই জন প্রতিনিধিরা পাহাড়ে উন্নয়ন সমন্বয়হীনতার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘পাহাড়ে এখন বিক্ষিপ্তভাবে উন্নয়ন কর্মকান্ড চলছে। তাই সমন্বিত উন্নয়ন করতে সব সরকারী উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানকে পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে আনতে হবে। একই সাথে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ১০টি অগ্রাধিকার কর্মসুচিতে উপজেলা পরিষদকে যুক্ত করে পাহাড়ের ২৬টি উপজেলা পরিষদের অনুন্নয়ন খাতে বাৎসরিক ২০ কোটি টাকা বরাদ্দের দাবি তুলেছেন উপজেলা চেয়ারম্যানরা। এছাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের ক্ষমতার সীমারেখা নির্ধারণ করার দাবি করেছেন তারা। আর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-সদস্যদের সম্মানী যুগোপযোগী করে সচিব ও চৌকিদারদের ভাতা শতভাগ সরকারি করার দাবি তুলেছেন তারা ইউপি চেয়ারম্যানরা।
বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈ হ্লা বলেন, ‘জেলা পরিষদে ২৮টি ও উপজেলা পরিষদে ১৭ টি হস্তান্তরিত বিভাগ আছে। এসব বিভাগ স্থানীয় সরকার ও পার্বত্য মন্ত্রণালয় ভাগ করায় পাহাড়ে ‘সমন্বয়ে’ সমস্যা হচ্ছে। এজন্য পার্বত্য মন্ত্রণালয়কে তদারকি ও অভিভাবক করার দাবি করছি’।
জনপ্রতিনিধিদের দাবিকে যৌক্তিক বলে স্বীকার করে সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘হিলট্যাক্স ম্যানুয়েল ও শান্তিচুক্তির কারণে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিশেষ অঞ্চল। তাই এর উন্নয়ন বরাদ্দও বিশেষ হওয়া দরকার’। সাবেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার এমপিও বলেন, ‘পাহাড়ের উন্নয়নে বিশেষ বরাদ্দের দাবি যৌক্তিক’।
পার্বত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি বলেন, ‘পাহাড়কে বিশেষ এলাকা হিসেবে বিশেষ বরাদ্দ দিতে হবে। সমতল জেলার সাথে মেলালে চলবে না। পাহাড়ে এখন দশ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ চলমান। পাহাড়ের সব সরকারী উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে হলে সমন্বিত উন্নয়ন হবে।