প্রকাশঃ ০৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২০ ০৩:৪৩:২৬
| আপডেটঃ ০১ নভেম্বর, ২০২৪ ০২:২২:০৭
ষ্টাফ রিপোর্টার, রাঙামাটি। রাঙামাটিতে ছাত্রলীগের এবার চারম আকার ধারণ করলো। গত ২৮ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করে বর্তমান জেলা সভাপতি ও সাধারন সম্পাদককে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করে নিজেদের ‘ভারপ্রাপ্ত সভাপতি’ ও ‘ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক’ ঘোষণা করা জেলা ছাত্রলীগের সিনিয়র সহসভাপতি সাইফুল আলম রাশেদ,ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক মঈনুদ্দিন শাকিলসহ জনকে সংগঠন থেকে ‘সাময়িকভাবে বহিষ্কার’ করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। মঙ্গলবার রাতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে আপলোড করা এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারন সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য সাক্ষরিত প্রেসজ্ঞিপ্তিতে রাঙামাটি জেলা ছাত্রলীগের সাময়িক বহিষ্কৃতরা নেতারা হলেন রাঙামাটি জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সাইফুল আলম রাশেদ, সহ-সভাপতি রুপম দাশ, যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক সুলতান মাহমুদ চৌধুরী, যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক মঈন উদ্দিন শাকিল, দপ্তর সম্পাদক নুর আলম, উপ-দপ্তর সম্পাদক জহিরুল ইসলাম স্বাধীন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘গঠনতন্ত্র পরিপন্থী কর্মকান্ডে জড়িত থাকায় ও দলীয় শৃংখলা ভঙ্গের অভিযোগে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনিবার্হী সংসদের এক জরুরী সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
রাঙামাটি জেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক প্রকাশ চাকমা জানিয়েছেন, বহিষ্কারের বিষয়টি আমাকে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সম্পাদক। আসলে বহিষ্কৃতরা গত ২৮ জানুয়ারি সাংবাদিক সম্মেলন করে যে ‘অগনতান্ত্রিক’ কাজ করেছে,বিভিন্ন গণমাধ্যমে সেই সংবাদ দেখে কেন্দ্রীয় সভাপতি-সম্পাদক আমাদের কাছে বিষয়টি জানতে চায়। এরই প্রেক্ষিতে আমরা জেলা ছাত্রলীগ লিখিত প্রতিবেদন দিয়েছি। সেই প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই এই পদক্ষেপ। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হলো,সংগঠনের গঠনতন্ত্র বিরোধী কাজ করে কেউই পার পাবেনা।’
তাৎক্ষনিকভাবে দেয়া প্রতিক্রিয়ায় ‘সাময়িক বহিষ্কৃত’ সাইফুল আলম রাশেদ ও সুলতান মাহমুদ বাপ্পা জানিয়েছেন, এটা খুবই আশ্চর্যজনক সিদ্ধান্ত যে, যাদের বিরুদ্ধে সংগঠনকে ধ্বংস করার অভিযোগ, যে সভাপতি-সম্পাদকের বিরুদ্ধে ‘হত্যাচেষ্টা’সহ একাধিক মামলা চলমান,তৃণমূল কর্মীরা যাদের ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করেছে,তাদের বহিষ্কার না করে যারা আজন্মই ছাত্রলীগ করেছি,তাদের বিরুদ্ধেই সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেয়া হলো। এটা দুঃখজনক।’ তারা বলেন, ‘রাঙামাটিতে আমাদের অভিভাবক জননেতা দীপংকর তালুকদার কিংবা জেলা আওয়ামীলীগের সাথে কোন পরামর্শ না করে এই ধরণের সিদ্ধান্ত হতাশাজনক।’
এদিকে ছাত্রলীগের এই বহিষ্কারের ঘটনার পর তাৎক্ষনিক এক প্রতিক্রিয়ায় রাঙামাটি জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক হাজী মোঃ মুছা মাতব্বর জানিয়েছেন, যাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা ও বিভিন্ন অভিযোগ বিচারাধীন,তাদের বিরুদ্ধে কোন সাংগঠনিক পদক্ষেপ না নিয়ে যারা এইসব অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে,তাদের বিরুদ্ধেই কেনো পদক্ষেপ নেয়া হলো,বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। এই বিষয়ে আমরা সিনিয়র নেতৃবৃন্দ আলোচনা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাথেও আলোচনা করব।’
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে কাউন্সিল ছাড়াই পরদিন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের পক্ষে ৬ সদস্যের জেলা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করেন জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক হাজী মোঃ মুছা মাতব্বর। সুজনকে সভাপতি ও প্রকাশকে সাধারন সম্পাদক করে কমিটি ঘোষণার পরপরই ক্ষুদ্ধ ছাত্রলীগের একাংশের নেতাকর্মীরা রাঙামাটি জেলা আওয়ামীলীগ কার্যালয় ব্যাপক ভাংচুর করে। সেই থেকে রাঙামাটি জেলা ছাত্রলীগের যে বিরোধ শুরু হয় তার সমাধান হয়নি বিগত ৫ বছরেও।
২০১৭ সালে প্রায় দুই বছর পর জেলা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হলে সেই বিরোধ আরো তীব্রতা পায়। এইসব বিরোধের ঘটনায় রাঙামাটি কলেজ ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক আহমেদ ইমতিয়াজ রিয়াদকে মারধর,রাঙামাটি পৌর ছাত্রলীগের সভাপতিকে অব্যাহতি,কলেজ সম্মেলনে কাউন্সিল অধিবেশনের আগেই সভাপতি-সম্পাদকের পালিয়ে আসার পর কমিটিহীন রাঙামাটি কলেজ ছাত্রলীগ,সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলন করে সভাপতি-সম্পাদককে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করে নিজেদের ভারপ্রাপ্ত হিসেবে ঘোষণা করে বহিষ্কৃতরা। গত ৫ বছর ধরেই নানান ঘটনার জন্ম দিয়ে আলোচিত বর্তমান জেলা ছাত্রলীগের সুজন প্রকাশ কমিটির বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। কখনো সাংবাদিককে মারধর ও সংবাদপত্রের বিরুদ্ধে মিছিল সমাবেশ, পুলিশের গাড়ী থেকে আসামী ছিনতাই, ব্যবসায়ির গাড়ী ছিনিয়ে আনাসহ নানান ঘটনায় আলোচিত এই কমিটি। সর্বশেষ সাধারন সম্পাদক প্রকাশ চাকমার বিরুদ্ধে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ রেস্ট হাউজ ভাংচুরের ঘটনায় ও সভাপতি আব্দুল জব্বার সুজনের বিরুদ্ধে যুবলীগ নেতা নাসিরকে ‘হত্যাচেষ্টা’র ঘটনায় পৃথক পৃথক মামলাও হয়েছে।
এদিকে ছাত্রলীগের ২ গ্রুপের বিরোধ মীমাংসা ও যুবলীগের নেতা নাসির এর হামলার ঘটনায় মীমাংসার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি হাজী কামাল উদ্দিন ও সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল মতিনকে। ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক রাঙামাটি না থাকায় আগামী বৃহস্পতিবার বৈঠকের সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল, এর আগে বহিস্কার করার ঘটনায় রীতিমত চমকে গেছেন আওয়ামীলীগ নেতারা।
জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল মতিন মঙ্গলবার রাতে জানান, ‘ ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সাম্প্রতিক ঘটনা প্রবাহ নিয়ে মীমাংসা ও করণীয় নির্ধারন ‘দাদা’ আমাকে ও কামাল ভাইকে দায়িত্ব দিয়েছেন। আমরা আগামী বৃহস্পতিবার বসার দিনক্ষনও ঠিক করেছি। যুবলীগ ও ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা রাঙামাটি না থাকায় দেরি হচ্ছিলো। এখন হঠাৎ করেই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সিদ্ধান্তের কারণে আমরাও বিব্রতকর অবস্থায় পড়লাম। সমাধানের কাজটি কঠিন ও অসম্ভব হয়ে পড়ল। এখন আমাদের করণীয় কি হবে সেটা বুঝতে পারছি না। আমরা আমাদের অভিভাবক ও সভাপতি ‘দীপংকর তালুকদার’ এর সাথে কথা বলে পরবর্তী করণীয় ঠিক করব।’
এদিকে রাঙামাটিতে বহিস্কৃত ৬ ছাত্রলীগ নেতার বহিস্কার আদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেছে ছাত্রলীগের একটি অংশ।
বুধবার সকালে বিক্ষোভ মিছিলটি আওয়ামীলীগের দলীয় কার্যালয় থেকে শুরু হয়ে বনরুপা এসে শেষ হয় হয়, সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জেলা কমিটির বহিস্কৃত সহ সভাপতি সাইফুল ইসলঅম রাশেদ, যুগ্ন সাধারন সম্পাদক সুলতান মাহমুদ বাপ্পাসহ বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
সভায় বক্তারা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদের বিরুদ্ধে টেন্ডারবাজি, পুলিশের কাছ থেকে আসামী ছিনতাইসহ হত্যা চেষ্টার অভিযোগে মামলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় কমিটি তাদের অপসারণ না করে যারা এসব অপকর্মের প্রতিবাদ করেছে তাদের বিরুদ্ধে আকষ্মিক সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়েছে। যেটি ছাত্রলীগের মধ্যেকার বিভেদকে আরো জটিল করে তুলবে।
সমাবেশে থেকে বক্তারা অবিলম্বে বহিস্কার আদেশ প্রত্যাহার করে ছাত্রলীগের আহবায়ক কমিটি গঠন করার দাবি জানান।