বাইশারীতে রাবার ড্রাম প্রকল্পের কারণে বিলীনের পথে শতাধিক বাড়িঘর ও কৃষি জমি

প্রকাশঃ ০৬ নভেম্বর, ২০১৯ ১০:৫০:৩২ | আপডেটঃ ২৮ মার্চ, ২০২৪ ০৩:০২:০৫
সিএইচটি টুডে ডট কম, বান্দরবান। পার্বত্য জেলা বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নের রাজঘাট এলাকায় ফারিখালের উপর একটি রাবার ড্রাম নির্মাণ করার জন্য খালের দুই পাড় কেটে ফেলে রেখেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান,আর এতে দিন দিন খালে বিলীন হচ্ছে সড়ক, বাড়িঘর ও কৃষি জমি। দ্রুত রাবার ড্রামের কাজ শেষ করে এলাকার অস্তিত্ব রক্ষার দাবি জানিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিরা।

জানা যায়,২০১৭ সালের নভেম্বরে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নের রাজঘাট এলাকায় ফারিখালের উপর একটি রাবার ড্রাম নির্মাণ করার জন্য বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন  (বি.এ.ডি.সি) প্রকল্পের আওতায় কাজ শুরু কওে ঢাকার এক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ওয়েল এটেসি জেবি। কিন্তু প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায়  পর ও সময় বৃদ্ধি করে ও কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ওয়েল এটেসি জেবি।
এদিকে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ফারিখালের উপর রাবার ড্রাম নির্মাণ করার জন্য খালের দু পাড় কেটে কাজ বন্ধ রাখায় বিপাঁকে পড়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা। গেল বর্ষা মৌসুম পাহাড়ি ঢলে বন্যার পানিতে খালের দুই পাড়ে তীব্র ভাঙ্গনে শতাধিক বাড়িঘরসহ, চলাচলের রাস্তা ও বেশ কিছু কৃষি জমি বিলীন হয়ে যায় খালের গর্বে। যার ফলে ফারিখালের দুই পাশে বসবাসরত প্রায় ৩ শত পরিবারের ২ হাজার জনসাধারণ বর্তমানে বসবাস করছে চরম ঝুঁকি নিয়ে।
স্থানীয় বাসিন্দা মহরম আলী জানান দীর্ঘদিন ধরে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ওয়েল এটেসি জেবি  এখানে মাটি কেটে সব কিছু এলোমেলো করে ফেলছে ,কিন্তু কাজ শেষ করতে না পারায় আমরা চরম দুর্ভোগে রয়েছি।

স্থানীয় বাসিন্দা ও সাংবাদিক মো:আবদুল হামিদ বলেন,এই রাবার ড্রাম এখন আমাদের গলার কাটায় পরিণত হয়েছে। যখন এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয় তখন আমরা আশা করেছি আমরা হয়তো একদিন এর ভালো সুফল পাবো,কিন্তু দুভার্গ্য বিগত কয়েক বছর আমরা কষ্ট পাচ্ছি ,কেননা ঠিকাদার কাজ শেষ করছে না আর এতে দুপাড়ের মাটি ভেঙ্গে যাচ্ছে ,কষি জমি নষ্ট হচ্ছে এবং সড়ক ভেঙ্গে খালে চলে যাচ্ছে।

৩ কোটি ৭৯ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ৫শ ৮৩দিন  মেয়াদে এই রাবার ড্রাম নির্মাণ কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান   ওয়েল এটেসি জেবি।এদিকে শুধু মাত্র খালের গভীরের অংশে ঢালাইয়ের কাজ সম্পন্ন করে যা বর্তমানে মাটিতে তলিয়ে গেছে। দ্রুততম সময়ে কাজ শেষ করা না হলে আগামী বর্ষায় আরো বাড়ী ঘর,রাস্তাঘাট ও কৃষি জমি বিলীন হয়ে যাওয়ার আশংখা করছে স্থানীয় সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।

নাইক্ষংছড়ি বাইশারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো:আলম বলেন, আমরা পার্বত্যমন্ত্রী বীর বাহাদুরের কাছে আকুতি মিনতি করে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নের রাজঘাট এলাকায় ফারিখালের উপর একটি রাবার ড্রাম নির্মাণ করার জন্য চেষ্ঠা করি ,সে মোতাবেক দরপত্র হয়ে কাজ শুরু করে ঠিকাদাররা কিন্তু পরিতাপের বিষয় কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না ঠিকাদারদের গাফিলতির কারণে।

এদিকে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বপ্রাপ্ত সাইট প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার সাধন বিশ^াস জানান, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বি.এ.ডি.সি) ৬৫% কাজ করার পর ও বিল দিতে অনীহা প্রকাশ করছে আর তাই কাজ চালিয়ে নিতে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। বি.এ.ডি.সি সার্বিক সহযোগিতা না করায় এই রাবার ড্র্যাম প্রকল্পের কাজ সঠিক সময়ে করা যাচ্ছে না বলে জানান ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত এই কর্মকর্তা।

তবে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বি.এ.ডি.সি) ক্ষুদ্র সেচ বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী মো:আবু নাঈম জানান, সিডিউল মোতাবেক ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে এই কাজ শুরু হয় এবং ২০১৯ সালের জুন মাসের ২৭ তারিখ এই কাজ সমাপ্তি হওয়ার কথা,কিন্তু সঠিক সময়ে কাজ করতে না পারায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের আবেদনের প্রেক্ষিতে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত কাজের সময় বৃদ্ধি করা হলে ও কাজের সমাপ্তি হয়নি। উল্টো ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে অসহযোগিতার অভিযোগ এনে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন বিরুদ্ধে মামলা করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ওয়েল এটেসি জেবি ।

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন ক্ষুদ্র সেচ বিভাগের বান্দরবান ইউনিটের সহকারী প্রকৌশলী মো:আবু নাঈম আরো  জানান,এই ব্যাপারে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী অবহিত রয়েছে এবং নতুন দরপত্র আহবান করে এই কাজ সমাপ্ত করা হবে।
বাইশারী ইউনিয়নের রাজঘাট এলাকায় বাসিন্দারা ফারিখালের তীব্র ভাঙ্গন রোধে দ্রুত সময়ে রাবার ড্রামের কাজ শেষ করার জন্য যথাযথ কতৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।

সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions