অভাব অনটন ও শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে অতিক্রম করে সফল দীপা নন্দী

প্রকাশঃ ১০ মে, ২০১৯ ০১:৪২:০৩ | আপডেটঃ ১৮ এপ্রিল, ২০২৪ ০৩:২৮:৪৬
সিএইচটি টুডে ডট কম, খাগড়াছড়ি। দীপা নন্দী। শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও অদম্য মেধাবী এ শিক্ষার্থী এবার এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়ে উর্ত্তীণ হয়েছে। সাথে খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার তিন বছর ধরে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ না পাওয়ার হতাশা দূর করেছে সেই। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা ও অভাব-অনটন রুখে রাখতে পারেনি তাকে। তার ইচ্ছে আরও পড়ালেখা করে সমাজের সেবা করা।

পানছড়ি উপজেলা সদরের হাজারী টিলা এলাকায় মামা মামীর কাছে থেকে ছোট বেলা থেকে মানুষ হয়েছে দীপা। ছোট বেলায় দীপার মানসিক প্রতিবন্ধী মা-কে ছেড়ে চলে যায় স্কুল শিক্ষক বাবা। সে থেকে দীপা ও তার মা মামা-মামীর কাছে। প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা ও জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়ে মেধার স্মারক রেখেছিল এর আগে। সংসারে অভাব অনটন থাকায় শ্রেণী কার্যক্রমের বাইরে প্রাইভেট পড়ার সুযোগ ছিল না। তাই পরীক্ষার আগমুর্হুতে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাকে বিনা পারিশ্রমিকে পড়াতো।

দীপা নন্দী বলেন, আমার সফলতার পেছনে আমার মামা-মামীর পরই আমার শিক্ষকদের অবদান অনেক বেশী। তারা যদি আমাকে অনুপ্রেরণা ও সহযোগীতা না করতো তবে আমি এতদূর আসতে পারতাম না। এখন আমার ইচ্ছে খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজে পড়ার। পড়ালেখা শেষ করে ভাল একটা সরকারি চাকরী করতে চায়। আমার মতো সমাজে যারা সুবিধা বঞ্চিত তাদের নিয়েও কাজ করতে চায়।
 
দীপার মামী চুমকি বিশ্বাস বলেন, আমি ও আমার স্বামীর সামান্য আয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। আমাদের এক মেয়ে ও দীপা’র পড়ালেখার ব্যয় বহন করা আমাদের পক্ষে কষ্টসাধ্য। এখন যদি সেই অন্যত্র পড়ালেখা করতে যায় তাহলে আমাদের পক্ষে তার স্বপ্ন পূরণে সহযোগীতা দেওয়া সম্ভব হয়। সমাজের বিত্তবানরা যদি দীপার পাশে দাঁড়ালে আমাদের পক্ষে  তার পড়ালেখা চালিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে।

পানছড়ি’র স্থানীয় এক সাংবাদিকের প্রতিবেদনে দেশবাসী এরআগেও দীপা’র বিভিন্ন সফলতার গল্প জানতে পারে। এবারও তার সফলতার গল্প ও অভাব অনটনের সংবাদ প্রচারের পর পানছড়ির সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বর্তমান খাগড়াছড়ির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) আবুল হাশেম দীপা’র পড়ালেখার ব্যয় বহনের প্রস্তাব দিয়ে ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ঘোষণা দিয়েছেন।

আবুল হাশেম বলেন, এত প্রতিবন্ধকতার মাঝেও দীপা’র সফলতা আমাকে অনুপ্রেরিত করেছে। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা তার অদম্য মেধার কাছে বাঁধা হতে পারেনি। সেই শুধুমাত্র মেধাবী নয় সৃজনশীল একজন মানুষও বটে। পানছড়িতে চাকরী করার সুবাদে আমি তার অনেক প্রতিভা দেখেছি। দীপা যাতে সমাজের অন্যান্যদের সাথে প্রতিযোগীতা করে নিজের মেধার স্মারক রাখতে পারে সে জন্য সহযোগীতার আশ্বাস দেন। পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানরা যদি চারপাশের সুবিধা বঞ্চিতদের পাশে দাঁড়ায় তাহলে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন তা দ্রুত বাস্তবায়ন হবে।

 
সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions