সেনাবাহিনীর উদ্যোগে লক্ষ্মীছড়ি-ফটিকছড়ি সীমান্তের মানুষ পেলো উচ্চ বিদ্যালয়

প্রকাশঃ ৩০ অক্টোবর, ২০১৮ ০১:০৮:৪০ | আপডেটঃ ২০ এপ্রিল, ২০২৪ ১১:৩৯:৩৮
সিএইচটি টুডে ডট কম, খাগড়াছড়ি। লক্ষ্মীছড়ি ও ফটিকছড়ি সীমান্তবর্তী ১৫টি গ্রামের ছেলে-মেয়েরা এতোদিন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ শেষে যেতো ১০ কিলোমিটার দূরের হাইস্কুলে। ভৌগলিক দুর্গমতা-সামাজিক নিরাপত্তা আর দারিদ্র্যের কারণে অনেক পরিবারের সন্তানরা প্রাথমিকে পাঠ শেষ করতে বাধ্য হতো। বিশেষ করে মেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য এতো দূরের বিদ্যালয়য়ে পায়ে হেঁটে স্কুল করাও দুরহ ছিল।

আর এ সমস্যা সমাধানে এগিয়ে এসেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। সমস্যাটির গুরুত্ব অনুধাবন করে দুই উপজেলার জনপ্রতিনিধি ও শিক্ষা অনুরাগীদের সাথে নিয়ে ‘বাইন্যাছোলা-মানিকপুর উচ্চ বিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন লক্ষ্মীছড়ি জোন অধিনায়ক লে: কর্ণেল মিজানুর রহমান।
আর এতে সহযোগিতার হাত বাড়ান গুইমারা রিজিয়ন অধিনায়ক ব্রি: জেনারেল এ কে এম সাজেদুল ইসলাম।

সোমবার দুপুরে বৃষ্টিঘন পরিবেশে এই বিদ্যালয়ের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল কমান্ডিং চীফ এবং চট্টগ্রাম এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল এস এম মতিউর রহমান।

তিনি বহু প্রতিক্ষীত এ উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন শেষে বিদ্যালয়ের জায়গাটি পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করেন। এমন একটি মহত উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন বলেন, এই প্রতিষ্ঠানটি এগিয়ে নিতে সেনাবাহিনীর পক্ষ সর্বাত্মক সহযোগীতা করা হবে। শান্তি সস্প্রীতি বজায় রেখে সবাইকে এক সাথে কাজ করলে পাহাড়-সমতলের কোন এলাকাতেই কোন সমস্যা থাকবে না। শিক্ষাসহ সকল মৌলিক অধিকার সবাই সমভাবে ভোগ করতে পারবে।

এসময় দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনা করে বিশেষ মোনাজাত পরিচালনা করেন লক্ষ্মীছড়ি জোনের ধর্মীয় শিক্ষক মাওলানা মো: হেলাল উদ্দিন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,দুই উপজেলার বাইন্যাছোলা, ডিপি পাড়া, সমুড় পাড়া, সাঁওতাল পাড়া, মহিষকাটা, দন্ডি পাড়া, হলুধ্যা পাড়া এবং ফটিকছড়ির মানিকপুর, টিলা পাড়া, সাতগড়িয়া পাড়া, নাপিত পাড়া, ফেদুরপাড়া ও বানতি পাড়াসহ এলাকায় অন্তত ১৫টি গ্রামের ছেলে-মেয়েদের উচ্চ শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি হবে। এখানে উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় ১০ কি: মি: দুরে গিয়ে ছেলে-মেয়েরা অনেক কষ্ট করে লেখা পড়া করতে হয়। ফলে ঝড়ে পড়ার হার অনেক বেশি। বাইন্যাছোলা-মানিকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন হওয়ার ফেলে শত শত উপস্থিত জনসাধারণের মাঝে আনন্দ প্রকাশ করতে দেখা গেছে।

এসময় লক্ষ্মীছড়ি জোনের উপ-অধিনায়ক মেজর জান্নাতুল ফেরদৌস, লক্ষ্মীছড়ি থানার অফিসার্স ইনচার্জ আ: জব্বার, কাঞ্চননগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রশিদ উদ্দিন চৌধুরী কাতেব, লক্ষ্মীছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান প্রবিল কুমার চাকমা, ফটিকছড়ি মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ফেরদৌস হোসেন, যোগ্যাছোলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ক্যয়জরী মারমা, দুল্যাতলী ইউপি চেয়ারম্যান ত্রিলন চাকমা, বর্মাছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান হরিমোহন চাকমা, প্রবীন রাজনীতিক আবুল হাসেম চৌধুরী, আব্দুল মাজেদ গাজী, আলী মিয়াসহ লক্ষ্মীছড়ি ও ফটিকছড়ি উপজেলার সরকারি কর্তা ব্যক্তি, হেডম্যান-কার্বারী,জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও স্থানীয় জনসাধারণ উপস্থিত ছিলেন।

স্থানীয় বাসিন্দা আলী মিয়া তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, যুগ যুগ ধরে এখানে একটি হাইস্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা দাবি করে আসছিলাম। এটা আমাদের জন্যৗ একটা স্বপ্ন ছিল যা আজকে বাস্তবায়ন হলে। এলাকার পক্ষ হতে জোন কমান্ডার, রিজিয়ন কমান্ডার ও চট্টগ্রামের জিওসিকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।

এছাড়াও বিদ্যালয় স্থাপনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তার উপর দুই সীমান্তবর্তী এলাকার, জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা ও সাংবাদিকরা  অনুভূতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন।

সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions