রাঙামাটিতে জমে উঠেছে কোরবানীর বাজার, দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে পাহাড়ের গরু

প্রকাশঃ ২০ অগাস্ট, ২০১৮ ০৮:৫০:১৬ | আপডেটঃ ২৬ মার্চ, ২০২৪ ০৯:৩১:০২
শাহ আলম, সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে রাঙামাটির পৌর ট্রাক টার্মিনালে বসেছে কোরবানির পশুর হাট। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছর তুলনা মূলকভাবে কম পরিমাণে কোরবানির গুরুর হাটে গরু উঠেছে। তাই এবার গরুর হাটে গরুর দাম বেশ চড়া দেখা যাচ্ছে। এ বছর গরুর দাম বাড়তি বলে অভিযোগ করছে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার ক্রেতারা।

দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা গরুগুলো কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে রাঙামাটি সদরে আনা হচ্ছে। কিন্তু সেই গরুগুলো পাহাড়ি ক্রেতাদের কাছ থেকে বড় বড় ব্যবসায়ীরা ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছে জেলার বাইরে চট্টগ্রাম-ঢাকায়।

এতে স্থানীয়রা বাজারে গরুর দাম বাড়তি বলে অভিযোগ করে বলেছে, গরুর দাম তুলনামুলক বেশী,   অনেকে বলছেন বাজারের সব গরু যদি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে জেলার বাহিরে নিয়ে যাওয়া হয়, তাহলে স্থানীয় বাজারে গরুর দাম লাগামহীন হয়ে উঠবে।

অনেকে সাধ্যমত কোরবানির গরু ক্রয় করতে ব্যর্থ হবে। তাই গরু যাতে রাঙামাটি বাহিরে আর না যায় সেজন্য প্রশাসনকে নজর দেওয়ার তাগিদ দেন কেউ কেউ।

আর একদিন পর কোরবানির ঈদ, সরেজমিনে বাজার ঘরে দেখা গেছে,  রাঙামাটির বরকল, লংগদু, বিলাইছড়ি, জুরাছড়ি, নানিয়ারচর প্রভৃতি এলাকা থেকে কাপ্তাই হ্রদের নৌ পথ দিয়ে প্রতিদিন ইঞ্জিন নৌকা ভর্তি করে কোরবানীর গরু আসতে শুরু করেছে বেশ কদিন ধরে। দুর্গম পাহাড়ি এলাকাগুলো থেকে কমদামে গরু এনে ভালো লাভে বিক্রি করার সুযোগ থাকায় অনেক গরু ব্যবসায়ী পাহাড়ি গরু সংগ্রহ করছেন। জেলা শহরের পৌরসভা ট্রাক টার্মিনাল এলাকায় বসেছে গরুর হাট। আশানুরুপ গরুর হাট না জমলেও ক্রেতারা গরুর হাটে আসছেন তাদের পছন্দের দামে গরু কিনতে। পাহাড়ের গরু গুলো কৃত্রিম উপায় মোটা তাজা করা হয় না বলে এর রয়েছে ব্যাপক চাহিদা।  কিন্তু জেলার চাহিদা পুরনের আগে বেপারীরা সেগুলো ট্রাকে করে নিয়ে যাচ্ছেন জেলার বাইরে।

গরুর হাটে ক্রেতা সরকারি কর্মকর্তা শফিকুর রহমান ও অন্যান্য ক্রেতার কাছে কোরবানির পশুর হাট সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি সিএইচটি টুডে ডট কম কে জানান- এবার প্রচুর পরিমাণে হাটে গরু দেখা যাচ্ছে না কিন্তু তাই কোন অংশেই কমেনি গরুর দাম। কারণ সব গরু ব্যবসায়ীরা রাঙামাটির বাহিরে বিক্রয়ের জন্য নিয়ে যাচ্ছে। তাই গত বছরের ন্যায় এ বছর ছোট, বড়, মাঝারি সব গরুর দাম প্রচুর পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। যে গরু গত বছর ৪০-৫০ হাজারে পাওয়া যেত সেই গরু এ বছর ৬০-৬৫ হাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। এতে করে মধ্যবিত্ত পরিবারের কোরবানির গরু কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

অন্যদিকে এবারের গরুর হাটে গরুর দাম প্রচুর পরিমাণে বৃদ্ধি কেনো? তা জানতে চাইলে স্থানীয় গরু ব্যবসায়ী মোঃ জুনায়েত ও অন্যান্য ব্যবসায়ীরা সিএইচটি টুডে ডট কম কে জানান- এবার প্রচুর পরিমাণে রাঙামাটিতে গরু থাকলেও তা সস্থানীয় বাজারে উঠেনি। চাহিদা থাকায় স্থানীয় গরুগুলো বড় বড় ব্যবসায়ীরা জেলার বাহিরে নিয়ে চলে যাচ্ছে। তাই স্থানীয়ভাবেও গরু কম ও গরুর চাহিদা থাকায় দাম বেশি। তাই গরু বেশ চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। বড় বড় ব্যবসায়ীরা রাঙামাটি থেকে প্রায় সব গরু চট্টগ্রাম ও ঢাকায় অধিক মুনাফা লাভের আশায় নিয়ে যাচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে স্থানীয় পশুর হাট বাজারে। তাছাড়া গরুর খাবার ও পরিবহন খরচ এবং কর্মচারীর বেতন সব খাতে প্রচুর পরিমানে বাড়তি হওয়ায় এবার গরুর হাটে গরুর দাম সামান্য টুকু বাড়তি।

রাঙামাটির স্থানীয় ব্যবসায়ী আব্বাস উদ্দিন বলেন, আমি লংগদু, বরকল থেকে ৩০টি গরু এনেছি। এ পর্যন্ত ১০টি গরু বিক্রি হয়েছে। গত বারের তুলনায় দাম এবার একটু বেশি। কারণ দেশি গরু এখন পর্যন্ত যা আছে তা অল্প। আর সবদিকে একটু খরচ বেশি মিটাতে হচ্ছে।



জুড়াছড়ি উপজেলার পাহাড়ী খামারি তরু চাকমা জানান, এবছর কোরবানি উপলক্ষে পাঁচটি গরুর লালন পালন করছেন। প্রতিটি গুরুর দাম ৫৫-৬৫ হাজার টাকা হবে। বাজারে গো-খাদ্যের দাম বেশি। গরু লালন পালন করতে গিয়ে খরচটা বেশি পড়েছে। তাই বাজারে বিক্রি করতে গেলে প্রতি গরুতে প্রায় ১০-১৫ হাজার টাকা লাভ করতে হবে। অন্যথায় লোকসান গুনতে হবে আমাদরে খামারিদের। তা না হলে আগামীতে গরু পালনের আগ্রহ হারিয়ে ফেলেবে খামারীরা।

রাঙামাটি পৌর ট্রাক টার্মিনাল গরু-ছাগল হাটের ইজারাদার সাওয়াল উদ্দিন বলেন, পাহাড় থেকে গরু আসছে। তবে ব্যবসায়ীরা বাইরে নিয়ে যাচ্ছে অস্বীকারের কোন কারণ নাই। ব্যবসায়ীদের আমরা নিষেধ করতে পারবো না। এখানে আমাদের বলার কিছু নেই। তবে স্থানীয় বাজারে গরুর যাতে কোন সংকট না পড়ে সেই জন্য আমরা তাদের অনুরোধ করেছি। যাতে করে রাঙামাটি বাহিরে আর কোন গরু  নিয়ে না যায়। তারা আমাদের অনুরোধ রাখবে বলে জানিয়েছেন। স্থানীয় চাহিদা মেটানোর জন্য গরু সংকট পড়বে না।  তবে বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণে গরু রয়েছে। আশা করি আরও গরু আসবে। গরুর দাম আরো সহনীয় হবে।

তাছাড়া কোন গরু অসুস্থ্য হয়ে পড়লে আমাদের হাটে মেডিকেল টিম রয়েছে, তারা সর্বক্ষণিক দেখা-শুনা করছে। আর গরু যদি বেচা-কানার অনুপোযোগি হয়ে পড়ে তাহলে আমরা গরু হাটে বিক্রি করতে না পারে সে ব্যাপারে লক্ষ্য রাখছি।
 
রাঙামাটির পুলিশ সুপার মো. আলমগীর কবীর বলেন, হাটে নগদ অর্থের লেনদেনও বেশি হবে। এর জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা আমরা জোরদার করেছি। পশুর হাটে জাল টাকার বিস্তার রোধেও নিয়েছি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। জল নোট সনাক্তকারী মেশিনও রেখেছি পশুর হাটে। রাঙামাটির পশুর হাটে আমাদের পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। ট্রাফিক পুলিশ, সাদা পোশাকে এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ মাঠে রয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি ভালো।
 
সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions