বৃহস্পতিবার | ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে : সন্তু লারমা

প্রকাশঃ ০২ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০৫:২৮:৫০ | আপডেটঃ ২১ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:৪৭:২১  |  ১১৩৪
সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধি প্রিয় লারমা (সন্তু লারমা) বলেছেন,  চুক্তি হয়েছিল দু’ভাবে। একটি লিখিতভাবে অন্যটি অলিখিতভাবে। এই অলিখিত চুক্তির মধ্যে অন্যতম হল পাহাড়ের বিদ্যমান আইনের লঙ্ঘন করে জিয়াউর রহমান সরকারের আমলে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় যে নিরীহ বাঙালিদেরকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তাদেরকে সম্মান জনকভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে পুনর্বাসন করা। কিন্তু সেই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টাও এখনো বাস্তবায়ন হয়নি।

উক্ত বিষয়টি কেন চুক্তিতে লেখা হয়নি তা’র প্রেক্ষাপট নিয়ে তিনি আরো বলেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এই বহিরাগত  বাঙালিদেরকে পার্বত্য  চট্টগ্রামের বাইরে সম্মানজনকভাবে পুনর্বাসনের ব্যাপারটি চুক্তিতে উল্লেখ না করতে অনুরোধ করেছিলেন। কেননা, এটি চুক্তিতে লেখা হলে দেশে বিভিন্ন মহলে নানা নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে বলে ধারণা করেছিলেন। সেই সাথে তিনি তাঁর (তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী) উপর বিশ্বাস রেখে উক্ত বহিরাগত  বাঙালিদেরকে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে সম্মানজনকভাবে পুনর্বাসন করবেন বলে আশ্বস্ত করেন। কিন্তু আজ অবধি সেই বিশ্বাস রাখা হয়নি বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।

তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির মৌলিক বিষয়টি হচ্ছে -ভূমি। কিন্তু এই ভূমি বিষয়টি এখনো পার্বত্য তিন জেলা পরিষদে হস্তান্তরিত হয়নি। তাই ভূমি সমস্যা সমাধানে গঠিত পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি কমিশনের বিধিমালা যদি প্রণীতও হয় তারপরও এই  কমিশনের মাধ্যমে সেই সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হবে না বলেও অভিযোগ তুলে ধরেন পাহাড়ের এই নেতা।

সরকার চুক্তি বাস্তবায়নে আন্তরিক নয় বলে অভিযোগ করে তিনি আরো বলেন, পার্বত্য  চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেছে। এ দেওয়াল থেকে সামনে এগিয়ে আসার জন্য পাহাড়ের মানুষ উদ্যোগ নিচ্ছে বলেও হুশিয়ারী উচ্চারণ করেন তিনি।

সোমবার চুক্তির বর্ষপুর্তি উপলক্ষে ঢাকায় জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যেগে আয়োজিত আলোচনা সভায় সন্তু লারমা এসব কথা বলেন।

বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে উক্ত অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এই চুক্তির অন্যতম স্বাক্ষরকারী জ্যোতিরিন্দ্র বোধি প্রিয়লারমা (সন্তু লারমা), কবি ও সাংবাদিক সোহরাব হাসান, সাংবাদিক ও কলামিষ্ট বিশিষ্ট গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ, মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান,  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. জোবাইদা নাসরীন কণা, আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং।

মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন,আমি ধরে নিলাম ৪৮ টি ধারা বাস্তবায়িত হয়েছে। কিন্তু আমার তো প্রধান বিষয়- ভূমি। এই ভূমির উপর যদি আমার নিয়ন্ত্রণ না থাকে, এই ধারাটি যদি সমাধান না হয় তাহলে এই ৪৮ টি বাস্তবায়ন অর্থহীন।
তিনি আরো বলেন, অস্ত্র জমা দিয়েই তো পাহাড়ী মানুষরা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। চুক্তি স্বাক্ষরের পর সন্তু লারমা বা পাহাড়ী মানুষরা কী এমন করেছে যা বাংলাদেশের স্বার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি স্বরূপ। সরকার কিন্তু এরকম একটি বিষয়ও দেখাতে পারবে না বলেও দাবী করেন বিশিষ্ট এই শিক্ষক।
তিনি পাহাড়ে চলমান হত্যা কান্ড নিয়ে বলেন, এই হত্যাকান্ড সংঘটনের পেছনে কারা জড়িত রয়েছে তাদেরকে খুঁজে বের করার সে রকম কোনো রাষ্ট্রীয় তাড়নাও আমরা দেখি না। একটি সভ্য রাষ্ট্রে একজন নিরপরাধ মানুষেরও অস্বাভাবিক মৃত্যু হতে পারে না। যদি সেটা হয় তাহলে সেখানে কোনো গলদ আছে বলে ধরে নিতে হবে।

চলমান শুদ্ধি অভিযানের মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়কেও অভিযানের আওতায় আনা উচিত দাবী করে তিনি আরো বলেন, সরকারের মতে ৪৮ টি ধারা বাস্তবায়িত হয়েছে আর জনসংহতির মতে ২৫ টি বাস্তবায়িত হয়েছে। এই দাবীর মধ্যে যে বিশাল তফাৎ এটাকে সামনে নিয়ে আসা উচিত বলে মনে করেন মানবাধিকার কমিশনের সাবেক এই চেয়ারম্যান।

এছাড়া  অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. খাইরুল চৌধুরী, বাংলাদেশ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি নূর মোহাম্মদ তালুকদার, বিশিষ্ট সাংবাদিক নুরুল কবিরসহ দেশের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার প্রগতিশীল ব্যাক্তিবর্গ।

রাঙামাটি |  আরও খবর
এইমাত্র পাওয়া
আর্কাইভ
সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions