সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। অবিরাম ভারি বর্ষণে রাঙামাটি জেলার লংগদু ও বরকল উপজেলায় পানির তোড়ে দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। বন্যায় কবলিত জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার নিম্নাঞ্চল। দুর্গতরা এখন আশ্রয় কেন্দ্রে। প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।
এদিকে প্রায় সপ্তাহব্যাপী ভারি বর্ষণে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম প্রধান সড়কের সাপছড়ি, শালবাগান, কলাবাগানসহ বিভিন্ন স্থানে ভূমিধস ও ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। মাটি ধসে পড়ছে রাস্তার ওপর। এতে তৈরি হয়েছে ঝুঁকি। যান চলাচলে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটছে। জেলার লংগদুতে বোট থেকে কাপ্তাই হ্রদে পড়ে পানির তোড়ে ভেসে গিয়ে মো. রুবেল (২৭) নামে এক বোট চালক মারা গেছেন। বুধবার সন্ধ্যার দিকে এ ঘটনা ঘটে। বৃহস্পতিবার সকালের দিকে কাপ্তাই হ্রদের কাট্টলি বিল নামক এলাকা থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত মো. রুবেল লংগদু উপজেলার মাইনিমুখ ইউনিয়নের জারুলছড়ি এলাকার বাসিন্দা। লংগদু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রঞ্জন কুমার সামন্তু ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
অন্যদিকে বুধবার বিকালের দিকে অন্য উপজেলা বরকলের ভুষণছড়া ইউনিয়নের অজ্যেংছড়ি এলাকায় পানির তোড়ে ভেসে গিয়ে বিজুরাম চাকমা (৬৭) নামে এক বৃদ্ধ মারা গেছেন। স্থানীয়রা জানান, অবিরাম বর্ষণে উজান থেকে পাহাড়ি ঢল নামায় ছড়ার পাশে খুঁটিতে বাাঁধা গরু বাাঁচানোর চেষ্টা করছিলেন বিজুরাম চাকমা। তখন ছড়ার পানির তোড়ে ভেসে যান। ঘন্টা দুয়েক পর ভাটি এলাকার পাহাড়ি ছড়ায় থাকা পাথরে আটকা অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করেন এলাকাবাসী।
টানা ভারি বর্ষণে হুমকির মুখে পড়েছে রাঙামাটি চট্টগ্রাম ও খাগড়াছড়ি রাঙামাটি সড়ক ব্যবস্থা। টানা ভারি বৃষ্টিপাতে রাঙামাটি চট্টগ্রাম সড়কের কলাবাগান এলাকায় সড়কের একটি অংশ গত বুধবার ভেঙ্গে যায়। বৃহস্পতিবার সকালে জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশীদ, সড়ক ও জনপথ বিভাগ ও সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করে দ্রুত রাস্তার রক্ষার কাজ করার নির্দেশ দেন। এদিকে সকাল থেকে টানা বর্ষণে রাঙামাটি খাগড়াছড়ি সড়কের চৌদ্দ মাইল ও বাইশ মাইল এলাকায় রাস্তার এক পাশে মাটি সরে গেছে। এতে ঝুকিপুর্ণ হয়ে উঠছে যানবাহন চলাচল, বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে রাঙামাটি খাগড়াছড়ি সড়কে যানবাহন চলাচল যে কোন মুহুর্তে বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
জানা যায়, ভারি বর্ষণে আকস্মিক বন্যায় কবলিত রয়েছে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা। প্লাবিত হয়েছে সদরসহ উপজেলার নিম্নাঞ্চলের বহু বাড়িঘর, ফসলি জমি ও রাস্তাঘাট। প্লাবিত হয়েছে উপজেলা পরিষদ ভবনসহ পাঁচ শতাধিক পরিবারের বাড়িঘর। দুর্গতরা এখন আশ্রয় কেন্দ্রে। বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান হাবিব জিতু বলেন, কয়েক দিনের ভারি বর্ষণে উজান থেকে কাচালং নদী দিয়ে পাহাড়ি ঢল নামছে। এতে প্লাবিত হয়েছে উপজেলা সদরসহ নি¤œাঞ্চলের বিস্তীর্ণ নিচু এলাকা। পানিতে তলিয়ে গেছে পাঁচ শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও রাস্তাঘাট। প্লাবিত হয়েছে উপজেলা পরিষদ ভবনও। সদরসহ উপজেলায় ২৩ আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। দুর্গতরা এসব আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়ে অবস্থান নিচ্ছেন। তাদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। প্রত্যেক পরিবারকে চাল, ডাল, লবণ, ভৈজ্য তেল, চিড়া দেয়া হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় ব্যাপক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে উপজেলা প্রশাসন।
জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ বলেন, সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবেলায় আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। আমরা ব্যাপক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছি। সেনাবাহিনী, পুলিশ, আনসার, বিজিবি, ফায়ার সার্ভিস, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানগুলো সহযোগিতা করছে। ধসে যাওয়া রাস্তা মেরামত করা হচ্ছে।