বুধবার | ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
ফলোআপ

তদন্ত কমিটির রিপোর্ট বাস্তবায়িত না হওয়ায় মাটি চাপা পড়ে মানুষ মরছে

প্রকাশঃ ০৬ জুন, ২০১৯ ০১:১৯:০০ | আপডেটঃ ২০ এপ্রিল, ২০২৪ ০৫:৫৭:০৯  |  ১০৬৫
সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। পাহাড়, লেক বেষ্টিত শহর রাঙামাটি। বালু ও পাহাড় হওয়ার এখানকার মাটি সমতলের তুলনায় নরম। তাই এখানকার মাটি যেমন বহুতল ভবন করার উপযোগী নয়, তেমনি ছোট খাট যে কোন স্থাপনার ক্ষেত্রেও পৌরসভার অনুমোদন নেয়ার কথা। কিন্তু যে ভবনগুলো উঠছে লেক দখল সেগুলো কার অনুমোদন নিয়ে উঠছে, কে অনুমোদন দিচ্ছে এসব প্রশ্ন এখন এলাকাবাসীর। কাপ্তাই লেকে পানি কমে গেলে লেকের তীরবর্তী এলাকার কিছু অসাধু লোক লেক দখলের উৎসবে মেতে উঠে। এছাড়া কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠানও ব্যবসা করতে লেক দখল বাণিজ্যেক ভবন ও ক্লাব ঘর নির্মাণ করছে।

গত ২০১৬ সনের ৩ অক্টোবর রাঙামাটি সরকারি মহিলা কলেজ এলাকায় একটি দ্বিতল ভবন ধব্বসে পড়ে ৫জন নিহত হওয়ার পর জেলা প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল। এতে প্রধান ছিলেন তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট ও দুজন প্রকৌশলী। তারা দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে কিছু সুপারিশসহ তদন্ত প্রতিবেদন প্রদান করে, কিন্তু এতদিনেও সেই তদন্ত প্রতিবেদন বাস্তবায়িত না হওয়ায় বার বার ভবন ধবসে মাটি চাপা পড়ে মানুষ মারা যাওয়ার মত ঘটনা ঘটছে।

২০১৬ গঠিত তদন্ত রিপোর্টে অনুমোদনবিহীন ঝুঁকিপুর্ণ  যে সব বাড়ী ঘর রয়েছে সে সব বাড়ী ঘরের তালিকা তৈরি করতে পৌরসভার মেয়রের নেতৃত্বে গনপুর্ত বিভাগ, সহকারি কমিশনার (ভুমি) রাঙামাটি সদরকে সদস্য করে ঝুকিপুর্ণ বাড়ীঘরগুলোর তালিকা প্রণয়ন করা, অবৈধগুলোকে উচ্ছেদ এবং বৈধগুলোকে যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্মাণের ব্যবস্থা করতে বলা হয়। এছাড়া ঝুকিপুর্ণ বাড়ীঘর নির্মাণ করে সিন্ডিকেট করে ভাড়া দিয়ে যারা লাভবান হচ্ছে তাদেরকে চিহিৃত করে আইনের আওতায় আনার কথা বলা হয়। সে সময় দুর্ঘটনায় প্রাণহানির দায়ে ভবন মালিককে আইনের আওতায় এনে বিচারের কথা বলা হলেও ভবন মালিক উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে দিব্যি ঘুরে বেড়িয়েছেন তার কোন বিচার হয়নি। বিচার হলে অন্যরা লেক দখল করে অবৈধভাবে ভবন নির্মাণ করতে সাহস পেত না। একই জায়গায় ১০/১৫ গজের ব্যবধানে গত রোববার ২জুন ২০১৯ইং আবারো দুর্ঘটনা ঘটে। লেকের পানি শুকিয়ে গেলে লেক দখল করে পাকা ভবন করতে মাটি কেটে পিলারের কাজ করতে গেলে ৩জন শ্রমিক প্রাণ হারায়। ঘটনার কয়েকদিন পার হয়ে গেলেও কাউকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ।

উন্নয়ন কর্মী ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করা শাইনিং হিলের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ আলী বলেন, ২০১৬ সনের তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী যদি প্রশাসন ও পৌরসভা কাজ করত তাহলে অবৈধ দখল ও  প্রানহানি রোধ করা যেত। প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে কিছু স্বার্থান্বেসী মহল লেকের পানি কমে গেলে জায়গা দখল করে বিক্রি করে আর দারিদ্র পীড়িত মানুষ একটু মাথা গোঁজার ঠাই খুজতে জায়গাগুলো কম দামে কিনে আর এসব গরীব মানুষ -ই দুর্ঘটনায় পড়ে।

রাঙামাটির প্রবীন সাংবাদিক সুনীল কান্তি দে বলেছেন, কে নিবে কার ব্যবস্থা? সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এখন বাণিজ্যেক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে লেক দখল করে। বাজার ফান্ডের কাজ কি, জেলা প্রশাসনের কাজ কি, কার কতুটুক জায়গা সেটি নিরুপন হওয়া দরকার। রাঙামাটিতে জায়গার জন্য দরখাস্ত করেই জায়গা দখল ও বিক্রি শুরু করে এক শ্রেণীর দালাল চক্র। এসব বন্ধে কেবল বিভিন্ন সভায় আলোচনাই হয় কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় না।

তিনি আরো বলেন, কেবল জেলা প্রশাসনের দোষ দিলে হবে না, পৌরসভারও দায়িত্ব রয়েছে , পৌরসভার অনুমোদন ছাড়া কিভাবে বাড়ীঘর বাড়ি নির্মাণ হয়, একদিকে পৌরসভা বলছে তারা কিছু অন্যদিকে দেখা যায় পৌরসভা ট্যাক্স আদায় করে। 

সুনীল কান্তি দে আরো বলেন, গতবারের তদন্ত কমিটির রিপোর্ট বাস্তবায়ন করলে অবৈধ জায়গা দখল রোধ করা যেত এবং অন্যরা সাবধান হতো।

তবে রাঙামাটির জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশীদ বলেছেন, এখন থেকে কেউ কাপ্তাই লেক এবং সরকারি খাস জায়গা দখল করতে পারবে না, প্রশাসন সর্তক রয়েছে। কিছুদিন আগে আমরা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছে করেছি, আমরা সাধারন মানুষের প্রানহানি যেন না ঘটে সে বিষযে সতর্ক আছি। আগের তদন্ত রিপোর্ট আমি দেখেনি, তবে বর্তমান ২জুন ৩ শ্রমিক নিহত হওয়ার পর আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করেছি, তাদের রিপোর্টের আলোকে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব।     

রাঙামাটি |  আরও খবর
এইমাত্র পাওয়া
আর্কাইভ
সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions