বৃহস্পতিবার | ১৮ এপ্রিল, ২০২৪
খাগড়াছড়িতে

কোটি টাকা উৎকোচের বিনিময়ে ৮১ গুচ্ছগ্রামে প্রকল্প চেয়ারম্যানের নাম প্রস্তাবের অভিযোগ

প্রকাশঃ ২৪ এপ্রিল, ২০১৯ ০২:৩৭:৫৪ | আপডেটঃ ১৫ এপ্রিল, ২০২৪ ০৮:০২:৫২  |  ১২২৫
সিএইচটি টুডে ডট কম, খাগড়াছড়ি। খাগড়াছড়ির ৯টি উপজেলার ৮১ বাঙালি গুচ্ছগ্রামে প্রকল্প চেয়ারম্যান নিয়োগে উৎকোচের বিনিময়ে নাম প্রস্তাবের অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি/সম্পাদকসহ শীর্ষ নেতারা একেকটি প্রকল্প চেয়ারম্যানের নাম প্রস্তাবের বিপরীতে চেয়ারম্যান প্রতি কয়েক লক্ষ টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছেন।
ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ কয়েক নেতা ও প্রশাসনের উর্ধ্বন কর্মকর্তাদের নাম ভাঙ্গিয়ে ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতা ঘুষ বাণিজ্যে জড়িত রয়েছেন। ইতোমধ্যে প্রকল্প চেয়ারম্যানের নাম প্রস্তাব নিয়ে বেশ কয়েকটি উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি ও সম্পাদকের মধ্যে দূরত্ব তৈরী হয়েছে। নিজেদের নিয়ন্ত্রিত ব্যক্তি বা সুবিধা গ্রহণকারীদের নাম প্রস্তাব নিয়ে এ দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে।

খাগড়াছড়ি জেলার তথ্য বাতায়নের তথ্যমতে, ৯ উপজেলার ৮১ গুচ্ছগ্রামে (বাঙালি) ২৬ হাজার ২ শত ২০ পরিবার কার্ডের আওতায় রয়েছে। পার্বত্য শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের পূর্বে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে খাগড়াছড়িতে পুনর্বাসনকৃত পরিবার নিয়ে গুচ্ছগ্রাম। প্রতি মাসে তাদের কার্ড প্রতি চাল ও গম দিয়ে আসছে সরকার। যা বিতরণের জন্য প্রতি দুইবছর অন্তর অন্তর প্রকল্প চেয়ারম্যান নিয়োগ করা হয়। নীতিমালা অনুসারে গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা, সংশ্লিষ্ট গুচ্ছগ্রামের জনপ্রতিনিধিদের অগ্রাধিকার দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা অনুসরণ না করে উপজেলা আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতারা টাকার বিনিময়ে চেয়ারম্যানের জন্য উচ্চ পর্যায়ে নাম প্রস্তাব দিচ্ছে। এতে করে মাঠপর্যায়ে বাড়ছে অস্থিরতা ও দুর্নীতির মাত্রা।

পানছড়ির ১২ গুচ্ছগ্রামে প্রকল্প চেয়ারম্যান নিয়োগে উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার কাছে দুইটি তালিকা জমা দিয়েছে। যার অধিকাংশ নেতাকর্মীদের স্বজন ও টাকার বিনিময়ে নাম প্রস্তাবকারী। একই অবস্থা মহালছড়ি, দীঘিনালা, মাটিরাঙা, মানিকছড়িসহ সবক’টি গুচ্ছগ্রামে। গুচ্ছগ্রামের আকারভেদে তিন লক্ষ টাকা থেকে আট লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি ও সা: সম্পাদকদের বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে পানছড়ি উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক জয়নাথ দেব জানান, উপজেলা সভাপতি বাহার মিয়া নিজের আত্মীয় স্বজন ও কিছু মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে নাম প্রস্তাব করছে। ত্যাগীরা বাদ পড়ায় আমরা আরেকটি তালিকা দিয়েছি।

পানছড়ি উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি বাহার মিয়া জানান, জয়নাথ দেব উপজেলা আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের কিছু নেতাদের নিয়ে টাকার বিনিময়ে প্রকল্প চেয়ারম্যানের নাম প্রস্তাব করেছেন। আমি বিষয়টি এমপিকে জানানোর পর তিনি আমাকে আরেকটি তালিকা দিতে বললে আমি ১২ জনের নাম প্রস্তাব করি। তাদের মধ্যে কয়েকজন আমার আত্মীয় থাকতে পারে তবে তা নীতিমালা অনুসরণ করে দেওয়া হয়েছে। টাকা নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, টাকা ছাড়া কোন বার প্রকল্প চেয়ারম্যান নিয়োগ হয়নি। প্রশাসন ও এমপি স্যারের জন্য কিছু খরচের টাকা নেওয়া হয়।

পার্বত্য অধিকার ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাঈন উদ্দিন জানান, ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে গুচ্ছগ্রামের প্রকল্প চেয়ারম্যানের পদটি। যার প্রভাব পড়ছে নিরহ মানুষদের ওপর। নিয়োগের সময় দেওয়া অর্থ তুলতে ওজনে কম দেওয়ার পাশাপাশি কার্ডধারীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ নেওয়া হয়। তা বন্ধে গুচ্ছগ্রাম ভিত্তিক প্রতিনিধি নির্বাচনের মাধ্যমে প্রকল্প চেয়ারম্যান নিয়োগ হলেও সচ্ছতা ফিরতে পারে।

তবে খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মো: শহিদুল ইসলাম জানান, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী এখন পর্যন্ত প্রকল্প চেয়ারম্যান পরিবর্তনের কোন প্রক্রিয়াই শুরু হয়নি। এর আগে কেউ যদি প্রশাসন বা অন্য কারো নাম ভাঙ্গিয়ে কিছু অনিয়ম করে থাকেন এমন অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি দৃঢ়তার সাথে দাবি করেন, বাঙালি গুচ্ছগ্রামের প্রকল্প চেয়ারম্যান পরিবর্তনের একটি সরকারি নীতিমালা রয়েছে। নীতিমালার বাইরে কারো নাম প্রস্তাব করা হলেও সেটি খতিয়ে দেখেই প্রশাসন প্রকল্প চেয়ারম্যান নিয়োগ করবে।

খাগড়াছড়ি |  আরও খবর
এইমাত্র পাওয়া
আর্কাইভ
সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions