বুধবার | ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

নানিয়ারচরে পাল্টাপাল্টি হামলা মামলায় আতঙ্কে এলাকাবাসী

প্রকাশঃ ২৫ এপ্রিল, ২০১৮ ০৪:৪৮:৪৬ | আপডেটঃ ২৪ এপ্রিল, ২০২৪ ০৫:২৩:২৩  |  ৩২০৬
সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। রাঙামাটির নানিয়ারচরে দু’দলের পাল্টাপাল্টি হামলা মামলায় আতঙ্কে এলাকাবাসী। নানিয়ারচর থানায় সর্বশেষ মামলাটি হয়েছে ২২ এপ্রিল। এতে ইউপিডএিফ প্রধান প্রসিত বিকাশ খীসাকে ১ নম্বরে দিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ ২৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। নানিয়ারচর উপজেলার সাবেক্ষং ইউনিয়নের মরাচেঙ্গী নামক গ্রামের মনমিলন চাকমা বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন। তিনি জনসংহতি সমিতি সংস্কারপন্থী (এমএন লারমা) দলের সাবেক্ষং ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি বলে জানা গেছে। এর আগে ইউপিডিএফ সমর্থিত নারী সংগঠন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মন্টি চাকমা ও জেলা কমিটির সভাপতি দয়াসোনা চাকমাকে অপহরণের ঘটনায় জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা) গ্রুপের নেতা ও নানিয়ারচর উপজেলা চেয়ারম্যান শক্তিমান চাকমা এবং ‘ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক’ দলের প্রধান তপন জ্যোতি চাকমা ওরফে বর্মাকে প্রধান আসামি করে ২৯ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়। রাঙামাটি কোতোয়ালি থানায় বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন অপহরণের শিকার দয়াসোনা চাকমার বাবা বৃষধন চাকমা।   

১৮ মার্চ রাঙামাটি জেলা সদরের কুতুকছড়ি আবাসিক স্কুল এলাকার একটি বাড়িতে হানা দিয়ে অস্ত্রের মুখে মন্টি চাকমা ও দয়াসোনা চাকমাকে অপহরণ করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। অপহরণের ৩৩ দিন পর ১৯ এপ্রিল রাতে খাগড়াছড়ি জেলা সদরের মধুপুর তেতুলতলার এপিবিএন স্কুলগেট এলাকায় মন্টি চাকমা ও দয়াসোনা চাকমাকে ছেড়ে দিয়ে যায় অপহরণকারীরা। ইউপিডিএফ করা যাবে না মর্মে এবং মামলা প্রত্যাহারসহ বেশ কিছু শর্তে ছাড়া হয় দুই নেত্রীকে। সঙ্গে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণও দিতে হয়েছে বলে জানায়, অপহরণের শিকার উভয় পরিবারের স্বজন ও ঘনিষ্টরা। মন্টি চাকমার বাড়ি নানিয়ারচর উপজেলার সাবেক্ষং ইউনিয়নের মরাচেঙ্গী এলাকায় এবং দয়াসোনা চাকমার বাড়ি কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের হাজাছড়ি গ্রামে। এ অপহরণের ঘটনায় প্রতিপক্ষ ‘ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক’ গ্রুপকে দায়ী করেছে মূল সংগঠন- যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে তপনজ্যোতি চাকমা ওরফে বর্মার নেতৃত্বাধীন গ্রুপটি।

আধিপত্য বিস্তার নিয়ে মুখোমুখি বিবাদমান আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের সমর্থনপুষ্ট দু’গ্রুপ। এর আধিপত্য লড়াইয়ে অবতীর্ণ ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটি ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এবং নব্যগঠিত ‘ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক’। সূত্র মতে, ‘ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক’ দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছে জনসংহতি সমিতি সংস্কারপন্থী (এমএন লারমা) গ্রুপ। দুটি গ্রুপের পাল্টাপাল্টি হামলায় অশান্ত এলাকা। ঝরছে রক্ত। একে অপরের হামলায় গত ৫ মাসের ব্যবধানে প্রাণ গেছে ৫ জনের। অপহরণের শিকার হয়েছেন, ইউপিডিএফ সমর্থনপুষ্ট দুই নারী নেত্রী। ভিটেবাড়ি থেকে উচ্ছেদ হতে হয়েছে বেশ কয়েক পরিবারকে। এসব ঘটনায় করা হচ্ছে পাল্টাপাল্টি মামলা। আতঙ্কে এলাকাবাসী।
জানা যায়, মূল সংগঠন ইউপিডিএফ ভেঙে ২০১৭ সালের ১৫ নভেম্বর আত্মপ্রকাশ করে ‘ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক’ নামে আরেক পাল্টা গ্রুপ। সংগঠনটি আত্মপ্রকাশের মাত্র ২০ দিনের মাথায় ৫ ডিসেম্বর রাঙ্গামাটির নানিয়ারচরে সাবেক ইউপি সদস্য ও ইউপিডিএফ নেতা অনাদি রঞ্জন চাকমাকে ব্রাশফায়ারে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এর ১০ দিনের ব্যবধানে ১৫ ডিসেম্বর রাতে নানিয়ারচরের সীমান্তে বন্দুকভাঙ্গা ইউনিয়নের ধামাইছড়া এলাকায় ব্রাশফায়ারে হত্যা করা হয় ইউপিডিএফের সংগঠক অনল বিকাশ চাকমা ওরফে প্লুটোকে।
এদিকে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে অনেককে ভিটেবাড়ি থেকে উচ্ছেদ হতে হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। যে অভিযোগে নানিয়ারচর থানায় একটি মামলা করেছেন, জনসংহতি সমিতি সংস্কারপন্থী (এমএন লারমা) দলের সাবেক্ষং ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি মনমিলন চাকমা। নানিয়ারচর থানার মামলা নম্বর ৪, তারিখ-২২/০৪/১৮। মামলায় ইউপিডিএফ প্রধান প্রসিত বিকাশ খীসা, নানিয়ারচর সদর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান জ্যোতি লাল চাকমা, সাবেক্ষং ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সুপন চাকমা ওরফে সুশীল জীবন, বুড়িঘাট ইউনিয়ন চেয়ারম্যান অমল বিকাশ চাকমা, বুড়িঘাট ইউনিয়ন চেয়ারম্যান প্রমোদ বিকাশ খীসা, সদস্য আনন্দ প্রকাশ চাকমাসহ ২৭ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বাদী মনমিলন চাকমা বলেন, ১৫ এপ্রিল প্রসিত বিকাশ খীসার নেতৃত্বে আসামিরা প্রকাশ্য সশস্ত্র হানা দিয়ে তার ভিটেবাড়ি দখল করে পরিবারের সবাইকে বের করে দিয়ে উচ্ছেদ করেছে। ওই সময় তার বাড়িতে থাকা স্বর্ণ ও নগদ ৫০ হাজার টাকা লুট করে সন্ত্রাসীরা। বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় নানিয়ারচর উপজেলা সদরে মানবেতর দিনযাপন করছে তার পরিবার।

মামলায় আসামিভূক্ত সাবেক্ষং ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সুপন চাকমা ওরফে সুশীল জীবন বলেন, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। অথচ সন্ত্রাসীদের হুমকিতে আমরা নিজেরা এলাকায় যেতে পারছিন না। দীর্ঘদিন ধরে ঘরবাড়ি ছাড়া হয়ে ইউপি চেয়ারম্যান সদস্যসহ নানিয়ারচরের প্রায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি রাঙামাটি শহর ও আনাচে কানাচে নিরাপদ আশ্রয়ে মানবেতর পরিস্থিতির মধ্যে বাস করতে হচ্ছে। আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় আতঙ্কে রয়েছি।     

নানিয়ারচর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল লতিফ বলেন, ভিটেবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করার অভিযোগে প্রসিত বিকাশ খীসাসহ ২৭ জনকে আসামি করে মনমিলন চাকমা বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা দিয়েছেন। মামলাটি রাঙামাটির আদালতে পাঠানো হয়েছে- বর্তমানে যা তদন্তাধীন।   

পাহাড়ের রাজনীতি |  আরও খবর
এইমাত্র পাওয়া
আর্কাইভ
সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions