শুক্রবার | ২৯ মার্চ, ২০২৪

রাঙামাটিতে দুদিনব্যাপী কঠিন চীবর দান উৎসব শুরু

প্রকাশঃ ১৫ নভেম্বর, ২০১৮ ০৮:৪০:৫৭ | আপডেটঃ ২৮ মার্চ, ২০২৪ ০১:১২:৪৩  |  ১৩২৬
সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব কঠিনচীবর দানোৎসব ঘিরে রাঙামাটির রাজবন বিহারে নামছে পুণ্যার্থীর ঢল। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের প্রধান এ বৌদ্ধধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে শুরু হয়েছে দুই দিনব্যাপী দানোত্তম কঠিনচীবর দানোৎসব। ২৪ ঘন্টার মধ্যে চীবর (গেরুয়া বস্ত্র) তৈরি শেষ করে তা উৎসর্গের মধ্য দিয়ে এ মহাপুণ্যাযজ্ঞ শেষ হবে কাল শুক্রবার।
 
বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় পুণ্যার্থীদের পঞ্চশীল গ্রহণের মধ্য দিয়ে বেইনঘর উদ্বোধন করেছেন মহাপরিনির্বাণলাভী বৌদ্ধ আর্যপুরুষ সর্বজনপূজ্য শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তের উত্তরসুরী শ্রীমৎ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবিরসহ শিষ্যমন্ডলী। এরপর চাকমা সার্কেল চিফ রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় ফিতা কেটে বেইনঘরে বুনন এবং রাণী য়েন য়েন রায় চরকায় সুতা কাটা উদ্বোধন করেন। এ সময় রাজবন বিহার উপাসক-উপাসিকা পরিষদের সভাপতি গৌতম দেওয়ানসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

রাঙামাটির রাজবন বিহার বাংলাদেশের প্রধান বৌদ্ধধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাত। এ বৌদ্ধ বিহারে প্রতি বছর আয়োজিত কঠিনচীবর দানোৎসবে সমাগম ঘটে লাখো পুণ্যার্থীর। এবারও ঢল নামছে অসংখ্য নারী-পুরুষের।

রাজবন বিহারের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রাজা ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায় বলেন, আজ থেকে প্রায় আড়াই হাজার বছরেরও আগে মহামতি গৌতম বুদ্ধের জীবদ্দশায় তার প্রধান সেবিকা মহাপুণ্যবতী বিশাখা প্রবর্তিত নিয়মে রাজবন বিহারে এবার ৪৫তম কঠিনচীবর দানোৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

দেবাশীষ রায় বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারও বিস্তারিত কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রতি বছর লাখো মানুষের সমাগম ঘটে রাজবন বিহারে। অনুষ্ঠান যাতে সুষ্ঠু ও শান্তি-শৃংখলাপূর্ণ পরিবেশে শেষ হতে পারে সেজন্য সবার আন্তরিক সহযোগিতার কামনা করে তিনি বলেন, পরমপূজ্য বনভান্তের স্বর্গীয় অনুভুতি থেকে সর্বপ্রথম ১৯৭৩ সালে রাজবন বিহারে ২৪ ঘন্টার মধ্যে তুলা থেকে সুতা বের করে বুনন, রংকরণ ও সেলাইসহ কাপড় তৈরি শেষে দানকার্য সম্পাদন করা হয়। একমাত্র বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজবন বিহার এবং শাখা বন বিহার ছাড়া বিশ্বে আর কোথাও বিশাখা প্রবর্তিত হাজার বছরের নিয়মে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের এ মহাপুণ্যাযজ্ঞ সম্পাদন হয় না। আজ থেকে আড়াই হাজার বছর আগে মহামতি গৌতম বুদ্ধের জীবদ্দশায় তার প্রধান সেবিকা মহাপূণ্যবতী বিশাখা ২৪ ঘন্টার মধ্যে তুলা থেকে সুতা কেটে রংকরণ, বয়ন ও সেলাই শেষে চীবর (বিশেষ পরিধেয় বস্ত্র) দানকার্য সম্পাদন করেছিলেন।

এদিকে রাজবন বিহারে আয়োজিত কঠিনচীবর দানোৎসব ঘিরে মুখর হয়ে উঠেছে গোটা রাঙামাটি শহর এলাকা। উৎসব ঘিরে রাজবন বিহার এলাকায় বসেছে মেলা। ধর্মীয় কীর্তন, নাটক, চরকায় সুতা কাটা, বেইন বোনা, কল্পতরু শোভাযাাত্রাসহ আয়োজন করা হয়েছে বর্ণাঢ্য কর্মসূচি।



রাজবন বিহার উপাসক-উপাসিকা পরিষদ জানায়, উৎসব সুষ্ঠু ও শান্তিশৃংখলাপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠানে রাজবন বিহারসহ গোটা রাঙামাটি শহরে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে প্রশাসন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, রাজবন বিহারে কঠিনচীবর অনুষ্ঠান ঘিরে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এ জন্য রাজবন বিহারে মোতায়েন করা হয়েছে কয়েকশ’ পুলিশ। সার্বক্ষণিক নজরদারির জন্য বিহারের মূল গেটে স্থাপন করা হয়েছে পুলিশ কন্ট্রোল রুমসহ সিসি ক্যামেরা। এছাড়া জলপথে নৌ টহল এবং স্থলপথে মোবাইল টহল টিমসহ মোট বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।  
 
এইমাত্র পাওয়া
আর্কাইভ
সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions