শুক্রবার | ১৯ এপ্রিল, ২০২৪
বান্দরবানে

বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের প্রবারণা পূর্নিমা পালনে ব্যাপক প্রস্তুুতি

প্রকাশঃ ২৩ অক্টোবর, ২০১৮ ০৪:৫০:০০ | আপডেটঃ ১৬ এপ্রিল, ২০২৪ ০৭:৩৩:৫৮  |  ৯৮৬
সিএইচটি টুডে ডট কম, বান্দরবান। পার্বত্য জেলা বান্দরবানে শুরু হচ্ছে বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্নিমা। এই উৎসবেকে ঘিরে বান্দরবান জেলা জুড়ে আদিবাসী পরিবারগুলোতে বইছে আনন্দের বন্যা। উৎসবকে ঘিরে নেওয়া হয়েছে তিনদিনের নানান আয়োজন।

আজ তেইশ অক্টোবর মঙ্গলবার থেকে সন্ধ্যা থেকে বর্ণাঢ্য আয়োজনে তিনদিনব্যাপী পার্বত্য জেলা বান্দরবানে শুরু হচ্ছে বৌদ্ব ধর্মালম্বীদের ধর্মীয় ও আকর্ষণীয় উৎসব এই প্রবারণা পূর্নিমা পালন। বৌদ্ব ধর্মালম্বীরা আষাঢ়ী পূর্ণিমার পর দিন থেকে তিন মাসব্যাপী বর্ষাব্রত পালন শুরু করে এবং প্রবারণা পূর্ণিমার দিন এই বর্ষাব্রত শেষ করে। এদিকে মারমা সম্প্রদায় এই উৎসবকে ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে নামে পালন করে থাকে। তাই প্রতিবারের মত এই দিনকে স্মরণ করার জন্য জেলাজুড়ে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্টির আয়োজনে তিনদিনব্যাপী চলবে সাংস্কৃতিক অনুষ্টান, রথযাত্রা, বিভিন্ন পাড়ায় ও গ্রামে পিঠা তৈরির উৎসব, ফানুস বাতি ওড়ানোসহ নানান আয়োজনে, আর তাই শেষ মর্হুতের কাজ নিয়ে দিন রাত শ্রম দিয়ে যাচ্ছে শিল্পীরা।

রথ নির্মাতা অং মংসিং জানান,প্রতিবারের মত এবার আমরা আরো জাঁকজমকভাবে এবারের রথযাত্রা করবো, আর এবারের রথকে আমরা আরো নতুন সাজে সাজিয়েছি। আমরা কয়েকজন যুবক দিন রাত শ্রম দিয়ে এবারের রথ তৈরি করছি ।

কদিন বাদেই উৎসব ,তাই নতুন পোষাক আর নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে ভিড় পড়েছে স্থানীয় বাজারগুলোতে, জেলা-উপজেলা এবং বিভিন্ন  গ্রামের আদিবাসীরা ভিড় জমাচ্ছে স্থানীয় মার্কেটগুলোতে।

প্রবারণা পূর্নিমা উপলক্ষে বান্দরবান বাজারে বাজার করতে আসা ক্রেতা অরুণ চাকমা জানান, প্রবারণা পূর্নিমা উপলক্ষে আমরা বাজার করতে এসেছি । পরিবার পরিজন নিয়ে বাজার করছি ,আমরা আমাদের সাধ্যমত জিনিসপত্র ক্রয় করবো এবং আশা করি ভালো একটি পূজা-পার্বণ পালন করতে পারবো।
বাজার করতে আসা,মিনু মং মার্মা জানান,প্রতিবছরই প্রবারণা পূর্নিমা উপলক্ষে আমরা বেশ আনন্দ করি । আমরা বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে পিঠা তৈরির উৎসব করি আর এর যাবতীয় দ্রব্য সামগ্রী আমরা বান্দরবান বাজার থেকে সংগ্রহ করে থাকি।


বৌদ্ব ধর্মালম্বীদের মতে,পূর্ণিমার দিনই রাজকুমার সিদ্বার্থের মাতৃগর্ভে প্রতিসন্দি গ্রহণ,গৃহত্যাগ ও ধর্মচক্র প্রবর্তন সংঘটিত হয়েছিল তাই প্রতিটি বৌদ্ব ধর্মালম্বীদের কাছে প্রবারণার দিনটি বিশেষ স্মরণীয় । তিনমাস বর্ষাবাস শেষে প্রবারণ পূর্ণিমার দিন বিহার থেকে বের হয়ে সব বিবাদ ভুলে গিয়ে একে অন্যের প্রতি সম্ভাষণ জানানো ও মনের সব সংর্কীণতা পরিহার করে অহিংসার মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে মহামিলনের নিজ সংসারে ফিরে আসা হয় ,তাই এই উৎসবে মেতে ওঠবে মারমা তরুণ-তরুণী, কিশোর কিশোরী,দায়ক-দায়িকা,উপাসক উপাসিকাসহ সকল বৌদ্বর্ধমালম্বীরা। আর তাই এই মহামিলনে সকলের আনন্দকে আরো বেগমান করতে নানা আয়োজনের কথা জানালেন উৎসব উদযাপন কমিটির সভাপতি তিং তিং ম্যা।
সভাপতি তিং তিং ম্যা জানান, বান্দরবানে প্রতিবারের মত এবারেও বর্ণাঢ্য আয়োজনে বান্দরবান ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের আয়োজনে ও উৎসব উদযাপন পরিষদের সহযোগিতায় ২৩ অক্টোবর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পুরাতন বোমাং রাজবাড়ি প্রাঙ্গনে সন্ধ্যা ৭টায় ফানুশ উৎসর্গ ও মহামঙ্গল রথযাত্রার শুভ উদ্বোধন এবং সন্ধ্যা ৭.৩০মিনিটে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান । আর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা।




এর পরে ২৪ অক্টোবর সন্ধ্যা ৬ টায় খ্যংওয়া কিয়ং ও উজানী পাড়া বৌদ্ধ বিহারের উদ্যোশে মহামঙ্গল রথযাত্রা আর সবশেষে ২৫ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬ টায় ধর্মপ্রাণ দায়ক-দায়িকা গণের বন্দনার জন্য রথ নিয়ে বান্দরবান পাড়া প্রদক্ষিণ শেষে রাত ১১ টায় উজানী পাড়া ঘাটে শঙ্খ নদীতে মহামঙ্গল রথ উৎসর্গের মধ্য দিয়ে শেষ হবে বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের তিনদিনব্যাপী বর্ণাঢ্য এই আয়োজন।

এদিকে উৎসব উপলক্ষে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের কথা জানান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা। বান্দরবান সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মো:শহীদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, বান্দরবানে প্রতিবারের মত এবারেও বর্ণাঢ্য আয়োজনে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট বান্দরবানের আয়োজনে ও উৎসব উদযাপন পরিষদের সহযোগিতায় এবারের প্রবারণা উৎসব উদযাপন হবে, আর এই উৎসবকে সার্বিক নিরাপত্তা প্রদান করতে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যাবস্থা নেয়া হয়েছে।


বান্দরবান |  আরও খবর
এইমাত্র পাওয়া
আর্কাইভ
সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions